উইকিশৈশব:এটা কীভাবে কাজ করে/টেলিভিশন

উইকিবই থেকে

বেশিরভাগ টেলিভিশন এবং অন্যান্য ডিসপ্লেতে আজ ক্যাথোড রে টিউব (সিআরটি) বা আলোক নিক্ষেপী ডায়োড (এলইডি) ব্যবহার করা হয়। সিআরটি টেলিভিশনের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ রয়েছে, প্রথমটি হলো ক্যাথোড, যা ইলেকট্রনের বিচ্ছুরণ পাঠায়, দ্বিতীয়টি হল ফোকাসিং এবং বিনিময় কয়েল, যা বিচ্ছুরণকে একটি স্রোতের আকৃতি দেয় এবং তারপরের তৃতীয় অংশটি, ফসফরাসের আবরণ বিশিষ্ট পর্দায় লক্ষ্য স্থির করে।

এর আবিষ্কারক কে?[সম্পাদনা]

টেলিভিশন উদ্ভাবনে বেশ কয়েকজনের অবদান রয়েছে। একেকজন একেক সময় একেকটা বিষয় উদ্ভাবন করেন। নিম্নোক্ত তিনজন ব্যক্তিকে টেলিভিশনের প্রধান উদ্ভাবক বলে মনে করা হয়:

ভ্লাদিমির কোসমা জোওরিকিন, যিনি একটি আদিম টেলিভিশন ক্যামেরা তৈরি করেছিলেন।

ফিলো টেলর ফার্নসওয়ার্থ প্রথম যিনি সফলভাবে টেলিভিশন সংকেতের প্রেষণ প্রদর্শন করেন।

জন এল বেয়ার্ড, যিনি টেলিভিশনের মাধ্যমে মুখের আকারের চিত্রগুলির প্রথম সফল প্রেষণ করেছিলেন।

এটি কতটা ক্ষতিকারক?[সম্পাদনা]

একটি সিআরটি শুরু এবং চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি উৎপাদন করতে একটি খুব উচ্চ ভোল্টেজের প্রয়োজন হয় এবং এই উচ্চ ভোল্টেজের কারণে মারাত্মক বৈদ্যুতিক শক পাওয়ার ঝুঁকি থাকে।

টেলিভিশনের অনেকগুলি বিপজ্জনক অংশ রয়েছে, এগুলি কেবিনেটের মধ্যে সুরক্ষিত থাকে, যাতে সাধারণ মানুষ নিজেদের ক্ষতি না করতে পারে।

এটা কি করে?[সম্পাদনা]

একটি টেলিভিশন মূলত ছবি সহ একটি বেতার গ্রাহকের মতো। বেতারের অনুরূপ সংকেত টেলিভিশন অ্যান্টেনা দ্বারা গৃহীত হয় এবং গ্রাহক অংশে পাঠানো হয় যেখান থেকে সেগুলি নির্দিষ্ট সজ্জা পায়।

আপনি যে শব্দ শুনতে পান তা প্রদান করতে সংকেতের অংশ ব্যবহার করা হয়। আরেকটি অংশ ছবি তৈরি করতে ব্যবহার করা হয়।

প্রতিফলনটি নড়ছে এমন দেখানোর জন্য প্রচুর স্থির ছবি গ্রাহকে পাঠানো হয়। যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবহৃত সিস্টেমের মাধ্যমে এর মান হয় প্রতি সেকেন্ডে ২৫ টি ছবি। পর পর নির্দিষ্ট সময়ের পার্থক্য এই ইমেজগুলি এমন ভাবে সেট করা হয় যেন মনে হয় ইমেজটি আসলে চলমান।

প্রথম সাদা-কালো টেলিভিশনগুলিতে লাইনের একটি সারি ব্যবহার করা হতো, যা কিছু জায়গায় পুরু এবং অন্যগুলিতে পাতলা ছিল। আপনি যদি একটি সাদা-কালো টেলিভিশন পর্দায় খুব কাছ থেকে "A" অক্ষরটি দেখেন তবে বুঝতে পারবেন সেটা নিচের ছবির মত দেখাচ্ছে।

    -----==-----
    ---==--==---
    --========--
    -==------==-
    ==--------==


আজকাল, সমস্ত রঙিন টেলিভিশনগুলি বিন্দুর একটি সারি প্রদর্শন করা হয়, যা প্রদর্শিত চিত্রের উপর নির্ভর করে রঙ পরিবর্তন করে। আপনি যদি আতস কাঁচের সাহায্যে এই স্ক্রীনটি খুব কাছ থেকে দেখেন তবে আপনি এটি দেখে বুঝতে পারবেন।

এটি কত ধরনের?[সম্পাদনা]

অনেক ধরনের টেলিভিশন সেট আছে। তাদের কিছু নিচে ব্যাখ্যা করা হলো।

ক্যাথোড রে টিউব (সিআরটি)[সম্পাদনা]

ক্যাথোড রে টিউব টেলিভিশনগুলি ১৯৩৯-এর দশকের মাঝামাঝি থেকে বর্তমান। এর পর্দার আকার ছিল ১৩ থেকে ৪০ ইঞ্চি (৩৩ এবং ১০০ সেমি)-এর মধ্যে।

রিয়ার অভিক্ষেপ[সম্পাদনা]

রিয়ার অভিক্ষেপ পর্দা সাধারণত অন্যান্য টেলিভিশন সেটের তুলনায় বেশ বড় হয়। ভিডিও চিত্রটি ইউনিটের অভ্যন্তর থেকে একটি আয়নায় প্রক্ষিপ্ত হয় যা চিত্রটিকে পর্দায় ফিরিয়ে দেয়। পর্দার আকার ৫০ থেকে ৭৩ ইঞ্চি (১৩০ থেকে ১৯০ সেমি) পর্যন্ত। পিছনের প্রজেকশন টেলিভিশন সেটগুলিকে সিআরটি (তিনটি পৃথক সিআরটি প্রজেক্টর), ডিএলপি (ডিজিটাল লাইট প্রসেসিং), এলসিডি (তিনটি এলসিডি প্রজেক্টর), এলকোএস (সিলিকনের উপরে তরল ক্রিস্টাল) এবং লেজার টেলিভিশন সহ অনেক অংশে ভাগ করা হয়েছে।

ফ্রন্ট অভিক্ষেপ[সম্পাদনা]

ফ্রন্ট অভিক্ষেপ টেলিভিশন সেটে, একটি ওভার-হেড প্রজেক্টর (অভিক্ষেপক) থেকে ছবিটি অভিক্ষিপ্ত করা হয়। এই কারণে এটি দেখার জন্য পরিপার্শ্বের আলো কমাতে হয়। পর্দার আকার ৪০ থেকে ১০০ ইঞ্চি (১০০ থেকে ২৫০ সেমি) বা তারও বেশি হতে পারে।

প্লাজমা[সম্পাদনা]

প্লাজমা টেলিভিশনগুলি সাধারণত দেয়ালে আটকানোর জন্য, কারণ এগুলি মাত্র কয়েক ইঞ্চি পুরু হয়। প্লাজমা টেলিভিশন সিআরটি-এর মত পর্দায় চমৎকার রঙ স্তর এবং কালো স্তরের কর্মক্ষমতা প্রদান করে। তবে প্লাজমা টিভিগুলি, ভারী এবং একই আকারের এলসিডি টেলিভিশনের চেয়ে গরম হওয়ার প্রবণতা ও শক্তি খরচের পরিমাণ বেশি। পর্দার আকার ৪২ থেকে ৫৬ ইঞ্চি (১১০ থেকে ১৪০ সেমি) পর্যন্ত হয়।

তরল কেলাসিত ডিসপ্লে (এলসিডি)[সম্পাদনা]

এলসিডি টেলিভিশনে প্লাজমা এবং সিআরটি সেটের মতো অতটা ভালো রঙ এবং কালো স্তরের কর্মক্ষমতা নেই। তবে এগুলির কম বিদ্যুত খরচ, সস্তা এবং একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকলে চোখের ক্ষতি তুলনামূলক কম হয়। পর্দার আকার ১৫ থেকে ১০০ ইঞ্চি (৩৮ থেকে ২৫০ সেমি) বা তারও বেশি।

বিশ্বের ওপর এর প্রভাব কি?[সম্পাদনা]

টেলিভিশন এর ফলে যোগাযোগ এখন সহজ হয়ে গেছে। জনসাধারণের কাছে বিনোদন এখন সহজলভ্য, যা আগে উচ্চ বিত্তবান শ্রেণীর একটি বিশেষাধিকার ছিল। সময়ের সাথে ক্রমউন্নতির কারণে আমরা এখন অকল্পনীয় জিনিস পেতে পারি। সংবাদ, চলচ্চিত্র, সঙ্গীত এবং শিক্ষামূলক চ্যানেলগুলি আমাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করেছে এবং আমাদেরকে সচেতন করেছে। একই সাথে এই ধরনের জিনিসগুলিতে ব্যবহার করার সময় সতর্ক থাকতে হবে কারণ টেলিভিশন সেট মানুষের সময় নষ্ট এবং জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলার জন্যও দায়ী। টিভি সেটগুলিকে তাই "ইডিয়ট বক্স" বা বোকা বাক্সও বলা হয়। তাই সতর্ক হোন সময়কে ভালো কাজে ব্যবহার করতে থাকুন।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]