ছায়াপথ স্তবক/বেতার নিঃসরণ

উইকিবই থেকে

ভূমিকা[সম্পাদনা]

মহাকর্ষীয়ভাবে আবদ্ধ মহাবিশ্বের সবচেয়ে বড় কাঠামো হচ্ছে ছায়াপথ স্তবক। বর্তমানে আমরা এসব কাঠামোর জন্ম ও বিবর্তন সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারছি কারণ, গত ১০ বছরে বিভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্যের দুরবিনের সেনসিটিভিটি ও রিজল্যুশনে (বর্ণালি এবং স্থানিক) অনেক উন্নতি হয়েছে। হায়ারার্কিকেল ব্যাখ্যা অনুসারে বড় ছায়াপথ স্তবকের জন্ম হয় অপেক্ষাকৃত ছোট ছোট কাঠামোর (ছায়াপথ পুঞ্জ বা দরিদ্র স্তবক) একীভূতকরণ (নিমজ্জন বা মার্জার) বা কোন বড় পুঞ্জের সার্বক্ষণিক ছায়াপথ গলধকরণের মাধ্যমে।

ছায়াপথের নিমজ্জন ঘটলে বিপুল পরিমাণ মহাকর্ষীয় বন্ধন শক্তির মুক্তি ঘটে, প্রায় আর্গ। এই শক্তি স্তবকের বিভিন্ন পদার্থের অনেক পরিবর্তন ঘটিয়ে দেয়:

  1. এক্স-রশ্মি নিঃসরণকারী অন্তঃস্তবকীয় মাধ্যমের তাপমাত্রা, ধাতবতা ও ঘনত্ব বিন্যাস
  2. ছায়াপথসমূহের স্থানিক বিন্যাস ও ভৌগোলিক গতীয় অবস্থা
  3. তারা-জন্মহার

দৃশ্যমান আলো এবং এক্স-রশ্মি পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে নিমজ্জনরত ছায়াপথ চিহ্নিত করার উপায় হচ্ছে:

  1. এক্স-রশ্মি এবং দৃশ্যমান আলোর পৃষ্ঠ ঘনত্বে বিভিন্ন উপ-কাঠামোর উপস্থিতি
  2. স্তবকের সদস্যসমূহের অরীয় গতি বিন্যাসে নন-গাউসিয়ানিটি তথা গাউসীয় পরিসংখ্যান থেকে বিচ্যুতি।
  3. আইসিএম এর তাপমাত্রা, চাপ, এনট্রপি এবং ধাতবতা মানচিত্রে পেঁচানো বাঁকানো বিভিন্ন গড়ন।
  4. এক্স-রশ্মির উজ্জ্বলতা প্রোফাইলে আকস্মিক বিচ্ছিন্নতা তথা পরিবর্তন, সেই সাথে ঘনত্ব ও তাপমাত্রার আকস্মিক বিচ্ছিন্নতা। এগুলোকে শীতল রেখা বলে।
  5. শীতল কোরের অনুপস্থিতি বা বিকৃতি।
  6. শিথিল স্তবকের তুলনায় বড় আকারের কোর।

কিছু ক্ষেত্রে দেখা গেছে নিমজ্জনের পর পর স্তবকের নিকটবর্তী প্রতিবেশীর সংখ্যা কমে যায়। পাশাপাশি, গভীর রেডিও পর্যবেক্ষণে প্রায় ৫০টি নিমজ্জনরত স্তবকে বিক্ষিপ্ত ও বিস্তৃত (১ মেগাপারসেক) রেডিও উৎসের সন্ধান পাওয়া গেছে। এগুলো কোন নির্দিষ্ট স্তবক সদস্য থেকে আসে না বরং এর কারণ হচ্ছে রিলেটিভিস্টিক ইলেকট্রন যাদের এবং অন্তঃস্তবকীয় স্থানে মাইক্রোগাউস পর্যায়ের চুম্বক ক্ষেত্র।

রেডিও নিঃসরণের কারণ অবশ্য অতাপীয় বা নন-থার্মাল। অন্যধিকে ছায়াপথ পুঞ্জে খুব কমই বিস্তৃত রেডিও উৎসের সন্ধান পাওয়া গেছে, গেলেও খুব ক্ষীণ। এসব মাধ্যমে ১ কিলোইভি তাপমাত্রার গ্যাস আছে যাকে বলে অন্তঃপুঞ্জ মাধ্যম বা আইজিএম। বিক্ষিপ্ত রেডিও উৎস আছে কিনা তা আরও উচ্চ সেনসিটিভিটির দুরবিন দিয়ে খতিয়ে দেখতে হবে। অতাপীয় এক্স-রশ্মি বিকিরণও পাওয়া গেছে তবে সেটা এখানে আলোচিত হবে না। সকল হিসাব করা হবে ল্যামডা-সিডিএম মডেল অনুসরণ করে।

ছায়াপথ স্তবকের বিস্তৃত রেডিও নিঃসরণ[সম্পাদনা]

ছায়াপথ স্তবক থেকে বিক্ষিপ্ত ও বিস্তৃত রেডিও নিঃসরণ প্রথম পর্যবেক্ষণ করা হয়েছিল ১৯৫৯ সালে, করেছিলেন লার্জ ও তার সহকর্মীরা। তারা রেডিও তরঙ্গদৈর্ঘ্যে কোমা স্তবক পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে এর কেন্দ্রে একটি বিস্তৃত রেডিও উৎস পান যার নাম রাখা হয় কোমা সি। লার্জ পর্যবেক্ষণ করেছিলেন একটিমাত্র ডিশ দিয়ে, ১৯৭০ সালে উইলসন ইন্টারফেরোমিটার দিয়ে এই ফলাফল নিশ্চিত করেন এবং বুঝতে পারেন এ নিঃসরণ কোন নির্দিষ্ট ছায়াপথ থেকে আসছে না, বরং এটি একটি বিক্ষিপ্ত নিঃসরণ। এরপর থেকে উচ্চ সেনসিটিভিটির অনেক দুরবিন দিয়ে স্তবক পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে, প্রায় ৫০ টি স্তবকে অতাপীয় বিক্ষিপ্ত রেডিও নিঃসরণ পাওয়া গেছে যা আইসিএম এর সাথে সম্পর্কিত। এই নিঃসরণের রেডিও বর্ণালি ঘাত ফাংশন (পাওয়ার ল) মেনে চলে যা থেকে প্রমাণিত হয় এর প্রকৃতি সিনক্রোট্রন। আর সিনক্রোট্রন থাকার অর্থই হচ্ছে স্তবকে রিলেটিভিস্টিক ইলেকট্রন (লরেঞ্জ সূচক > ১০০০) ও চুম্বক ক্ষেত্র (০.১-১ মাইক্রোগাউস) আছে।

রেডিও নিঃসরণের ক্ষেত্রে সমবর্ণীয় এমিসিভিটির সমীকরণ হচ্ছে,

B চৌম্বক ক্ষেত্রের মান
ইলেকট্রনগুলোর শক্তির বিন্যাস যা একটি পাওয়ার ল,
ইলেকট্রনের বেগ ও চুম্বক ক্ষেত্রের দিকের মধ্যে পিচ কোণ
সিনক্রোট্রন বর্ণালীর বর্ণালি সূচক

সকল স্তবকেই তাপীয় এক্স-রশ্মি বিকিরণ দেখা যায়। কিন্তু বিস্তৃত ও বিক্ষিপ্ত রেডিও বিকিরণ দেখা যায় ১০% এরও কম স্তবকে। এ থেকে প্রমাণিত হয় রেডিও নিঃসরণ স্তবকের সাধারণ বৈশিষ্ট্য নয়। বর্তমানের রেডিও দুরবিনগুলোর সেনসিটিভিটি কম বলে হয়ত স্তবকের অতি ক্ষীণ রেডিও নিঃসরণ সম্পূর্ণ শনাক্ত করা যায় না। কিন্তু এই রিভিও আমরা দেখব, কেবল সেনসিটিভিটির ঘাড়ে দোষ চাপালে ঠিক হবে না। প্রকৃতপক্ষে মেগাপারসেক পর্যায়ের বিস্তৃত রেডিও নিঃসরণ থাকে কেবল অতি ভারী নিমজ্জনরত স্তবকে। এখন কথা হচ্ছে, কোন নির্দিষ্ট স্তবকে যদি রেডিও নিঃসরণ পাওয়া না যায় তাহলে দোষটি কি সেনসিটিভিটির ঘাড়ে চাপানো হবে নাকি বলা হবে এতে কোন রেডিও নিঃসরণ নেই?- উত্তরটি সোজা নয়। ভবিষ্যতের রেডিও দুরবিন এই সমস্যার সমাধান করবে।