উইকিশৈশব:সৌরজগৎ/শনি/টাইটান

উইকিবই থেকে
ক্যাসিনি মহাকাশযান থেকে টাইটানের ছবি
ক্যাসিনি মহাকাশযান থেকে টাইটানের ছবি

টাইটান হল শনি গ্রহের বৃহত্তম চাঁদ। এটি সৌরজগতের দ্বিতীয় বৃহত্তম চাঁদও বটে।

টাইটান কত বড়?[সম্পাদনা]

টাইটান চাঁদটি ৫১৫০ কিমি প্রশস্ত। এটি সৌরজগতের দ্বিতীয় বৃহত্তম চাঁদ। শুধুমাত্র বৃহস্পতি গ্রহের চাঁদ গ্যানিমেড এর থেকে বড়। বুধ গ্রহ বা বামন গ্রহ প্লুটো উভয়ের চেয়েই টাইটান বড়। এটি পৃথিবীর চাঁদের আকারের প্রায় দেড় গুণ বড়, এবং এর ভর চাঁদের ভরের প্রায় দ্বিগুণ। যা আমরা জানি, প্লুটো ছাড়া টাইটানই একমাত্র অঞ্চল, যার পৃষ্ঠতলের তাপমাত্রা কম, যাকে শীতল বলা যায়। এর কারণ হল এর পরিবেশে বায়ুমণ্ডলের উপস্থিতি। টাইটানের পৃষ্ঠতলের তাপমাত্রা -১৮০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড।

এর উপরিতল কেমন?[সম্পাদনা]

টাইটানের উপরিতল। এই ছবিটি একটি প্রোবের মাধ্যমে তোলা।

টাইটান সৌরজগতের একমাত্র চাঁদ যার ঘন বায়ুমণ্ডল রয়েছে। ক্যাসিনি মহাকাশযান শনির চারপাশের কক্ষপথে না আসা পর্যন্ত, এর ভূপৃষ্ঠটি কেমন তা আমরা জানতাম না। টাইটানে ভূতল খুব ঠান্ডা, এবং সমস্ত জল জমাট বেঁধে বরফ হয়ে আছে। পৃষ্ঠতলটি দেখতে মসৃণ, তার মধ্যে হালকা এবং গাঢ় উপাদানের ক্ষেত্র আছে। অধিকাংশ গহ্বর ভরাট হয়ে গেছে।

মনে করা হয়েছিল যে টাইটানে তরল মিথেনের সমুদ্র থাকতে পারে, কিন্তু এখন মনে হচ্ছে সেখানে কেবল কয়েকটি হ্রদ থাকতে পারে। হাইগেনস প্রোব যন্ত্রটি টাইটানের বায়ুমণ্ডলে ফেলে দেওয়া হয়েছিল এবং সেটি ধীরে ধীরে মাটিতে গিয়ে পড়ে ছিল। এর সাহায্যে আমরা প্রথম খুব কাছ থেকে পৃষ্ঠতলের ছবি দেখতে পেয়েছিলাম। এটি দেখিয়েছিল যাদের দেখে পাহাড়ের মধ্যে সরু পথ মনে হয়েছিল, সেগুলি আসলে নিচে সমতল উপত্যকা। এগুলি হয়তো তরল পদার্থের প্রবাহ দিয়ে তৈরি হয়েছিল এবং গাঢ় পদার্থগুলি পিছনে পড়ে ছিল।

টাইটানে বায়ুমণ্ডল আছে, এছাড়া এখানে জটিল অণু এবং মিথেন পাওয়া গেছে। এর থেকে অনেকেই মনে করেন যে টাইটানের উপরিতলে বা তার পৃষ্ঠতলের নিচে সরল প্রাণের অস্তিত্বের নিদর্শন থাকতেও পারে।

টাইটানে একটি দিন কত বড়?[সম্পাদনা]

টাইটান শনির চারপাশে কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করতে যতটা সময় নেয়, তার একটি দিনও সেই সময়ের সমান, পৃথিবীর সময় দিয়ে হিসেব করলে সেটি প্রায় ১৫ দিন, ২২ ঘন্টা এবং ৪১ মিনিট। টাইটানের একটিই দিক সর্বদা শনির দিকে ফেরানো থাকে, ঠিক একই ভাবে আমাদের চাঁদের মুখের একটিই দিক একইভাবে সর্বদা পৃথিবীর দিকে ফেরানো থাকে। শনির মাধ্যাকর্ষণের কারণে টাইটানে একটি জোয়ারের শক্তি তৈরি করেছিল, যা এর আবর্তনকে পরিবর্তন করেছিল।

এটি কিসের তৈরি?[সম্পাদনা]

টাইটানের বায়ুমণ্ডলে কুজ্ঝটিকা।

টাইটানের বায়ুমণ্ডলের বেশিরভাগ অংশই নাইট্রোজেন, অন্যান্য গ্যাসও অল্প পরিমাণে উপস্থিত আছে। এই গ্যাসগুলির মধ্যে অনেকগুলিকেই হাইড্রোকার্বন বলা হয়, কারণ তাদের মধ্যে হাইড্রোজেন এবং কার্বন রয়েছে। এই হাইড্রোকার্বনগুলি টাইটানের উপরের বায়ুমণ্ডলে সূর্যের অতিবেগুনী আলো থেকে তৈরি হয়। অতিবেগুনী সেই একই আলো যা তোমার ত্বকে রোদে পোড়া ভাব সৃষ্টি করে। হাইড্রোকার্বন একটি ঘন কমলা ধোঁয়া তৈরি করে যে জন্য নিচে পৃষ্ঠতলটি দেখা যায় না।

শনির এই চাঁদটি প্রায় অর্ধেক বরফ এবং অর্ধেক পাথরের তৈরি। এই পাথরের অধিকাংশই টাইটানের কেন্দ্রে একটি মজ্জার মধ্যে থাকতে পারে। মজ্জা অংশটি হয়তো এখনও গরম আছে, যেমনটি আমাদের পৃথিবীর মজ্জা হয়ে আছে। টাইটানে কিছু আগ্নেয়গিরির কার্যকলাপও চলতে পারে। পৃষ্ঠতলের বেশিরভাগ অংশই বরফ হয়ে আছে।

টাইটানের মাধ্যাকর্ষণ আমাকে কতটা টানবে?[সম্পাদনা]

টাইটানের মহাকর্ষীয় টান পৃথিবীর মহাকর্ষীয় টানের প্রায় সাত ভাগের এক ভাগ। সুতরাং তোমার যদি পৃথিবীর মাটিতে ৯৮ কেজি ওজন হয়, তবে টাইটানে তোমার ওজন হবে ১৪ কেজি।

কার নামে এর নামকরণ করা হয়েছে?[সম্পাদনা]

গ্রীক পুরাণে গায়া এবং ইউরেনাসের বংশের শিশুদের নাম অনুসারে টাইটানের নামকরণ করা হয়েছিল।

এটি কখন আবিষ্কৃত হয়েছিল?[সম্পাদনা]

১৬৫৫ সালে ডাচ জ্যোতির্বিজ্ঞানী ক্রিস্টিয়ান হাইগেনস টাইটানকে আবিষ্কার করেছিলেন।