নাক্ষত্রিক জ্যোতির্বিজ্ঞান/নিউক্লীয় বিক্রিয়া

উইকিবই থেকে

তারায় কেবল নিউক্লীয় সংযোজন বিক্রিয়া ঘটে। অর্থাৎ অপেক্ষাকৃত হালকা মৌল একত্রিত হয় ভারী মৌল গঠন করে। এই গঠন প্রক্রিয়ার সময় যদি বিক্রিয়ক উপাদানগুলোর মোট ভর উৎপাদগুলোর মোট ভরের চেয়ে বেশি হয় তাহলে এই দুই ভরের পার্থক্যের সম পরিমাণ ভর শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। এটিই তারার শক্তির মূল উৎস। ৪ টি হাইড্রোজেন পরমাণু একত্রিত হয়ে একটি হিলিয়াম পরমাণু গঠন করার সময় ২৬.৫ মেগা ইলেকট্র ভোল্ট শক্তি উৎপাদিত হয়। গণিতের মাধ্যমে এভাবে ব্যাখ্যা করা যায়:

শক্তিতে পরিণত হওয়া ভর = ৪ টি হাইড্রোজেন পরমাণুর ভর - ১ টি হিলিয়াম পরমাণুর ভর
এই ভরটুকু থেকে উৎপাদিত শক্তির পরিমাণ,

বাঁধন শক্তি এবং ম্যাজিক সংখ্যা[সম্পাদনা]

তবে বিক্রিয়াভেদে এই শক্তির পরিমাণ ভিন্ন হয়। তারায় উপস্থিত মূল তিনটি বিক্রিয়া হচ্ছে প্রোটন-প্রোটন শিকল, সিএনও চক্র এবং থ্রি-আলফা বিক্রিয়া। থ্রি-আলফা বিক্রিয়ায় উৎপাদিত শক্তির পরিমাণ প্রোটন-প্রোটনের তুলনায় প্রায় ১০ ভাগের ১ ভাগ। এসব বিক্রিয়ার মূল পার্থক্য হচ্ছে বিক্রিয়ক এবং উৎপাদে। বিক্রিয়ক উপাদানগুলোর "নিউক্লীয় বাঁধন শক্তির" তারতম্যের কারণেই এই ভিন্নতা দেখা যায়। কোন পরমাণুর নিউক্লিয়নগুলোকে (প্রোটন এবং নিউট্রন) আলাদা করতে যে পরিমাণ শক্তির প্রয়োজন হয় তাই তার নিউক্লীয় বাঁধন শক্তি। উল্লেখ্য প্রোটন এবং নিউট্রনগুলো পরমাণুর কেন্দ্রীনের মধ্যে দুর্বল এবং সবল নিউক্লীয় বলের মাধ্যমে আবদ্ধ থাকে। বাঁধন শক্তি এর বিরুদ্ধে ক্রিয়া করে। নিচের সমীকরণের মাধ্যমে কোন নিউক্লিয়নের বাঁধন শক্তিকে প্রকাশ করা যায়:

যেখানে,
A পরমাণুটির পারমাণবিক ভর তথা মোট প্রোটন এবং নিউট্রনের সংখ্যা।
Z হচ্ছে পরমাণুটির পারমাণবিক সংখ্যা
এবং যথাক্রমে প্রোটন এবং নিউট্রনের ভর
হচ্ছে উৎপাদিত নিউক্লিয়াসের পারমাণবিক ভর

পরমাণুতে ইলেকট্রনের বিন্যাস ব্যাখ্যা করার জন্য যেমন শক্তিস্তর ধারণার উদ্ভব ঘটেছিল ঠিক তেমনি নিউক্লিয়াসে প্রোটন এবং নিউট্রনের বিন্যাস ব্যাখ্যার জন্য উদ্ভব ঘটে শক্তিস্তর মডেলের। এই মডেল অনুসারে নিউক্লিয়ান নিউক্লিয়াসে কিছু কোয়ান্টায়িত শক্তি স্তরে অবস্থান করে। প্রতিটি শক্তি স্তরকে তিনটি নিউক্লীয় কোয়ান্টাম সংখ্যার মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়:

n = অরীয় তরঙ্গ অপেক্ষকের নোড সংখ্যার সাথে সম্পর্কিত।
l = কৌণিক ভরবেগের ভেক্টর রাশির সাথে সম্পর্কিত
j = কৌণিক ভরবেগ এবং স্পিন ভেক্টরের সমষ্টি।

তাত্ত্বিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, প্রোটন এবং নিউট্রনের সংখ্যা কিছু নির্দিষ্ট সংখ্যার সমান হলে শক্তি স্তরগুলোর মধ্যে শক্তির ব্যবধান সবচেয়ে বেশি হয়, অর্থাৎ বাঁধন শক্তি বেশি হয় এবং নিউক্লিয়াসটি বেশি সুস্থিত হয়। এই সংখ্যাগুলোকে বলা হয় ম্যাজিক সংখ্যা। ২০০৭ সালের গবেষণা অনুসারে ম্যাজিক সংখ্যাগুলো হচ্ছে: ২, ৮, ১০, ২৮, ৫০, ৮২ এবং ১২৬। নিউক্লিয়াসে নিউট্রন বা প্রোটনের সংখ্যা এগুলোর সমান হলে তা বেশি সুস্থিত হবে। আর যদি প্রোটন এবং নিউট্রন দুটোর সংখ্যাই ম্যাজিক সংখ্যার সমান হয় তাহলে সেটি হবে অতি সুস্থিত। এই চারটি পরমাণুর প্রোটন এবং নিউট্রন উভয় সংখ্যাই ম্যাজিক সংখ্যা। এমন পরমাণুর নিউক্লিয়ন সংখ্যাগুলোকে বলা হয় "ডাবল ম্যাজিক সংখ্যা"। ডাবল ম্যাজিক সংখ্যাগুলো হচ্ছে, ২, ৮, ২০ এবং ২৮।

এমিসিভিটির গাণিতিক সংজ্ঞা[সম্পাদনা]