বিষয়বস্তুতে চলুন

সমাজবিজ্ঞানের পরিচিতি/লিঙ্গ

উইকিবই থেকে
আজকের বক্তব্যটি একটি এমনভাবে শুরু হয়েছিল যা বেশিরভাগ আমেরিকানদের কাছে নিরীহ বলেই মনে হবে জর্ডিন মন্তব্য করলেন, যখন তিনি উপস্থিত অভিভাবক, শিশু ও শিক্ষকদের সামনে কথা বলা শুরু করলেন। গত মাসে শ্রেণিকক্ষে একটি ঘটনা ঘটে, যেখানে তার ছেলে জুনিয়র আমেরিকার গত ১০০ বছরের প্রচলিত ভুল শিক্ষা ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করে। শিক্ষক বলেছিলেন, ছেলেদের পেনিস থাকে আর মেয়েদের থাকে না। যদিও জুনিয়রের বয়স মাত্র ৭ কিন্তু সে বড় হয়েছে একটি প্রগতিশীল, ধর্মহীন পরিবারে। তার বাবা-মা দুজনেই আদিবাসী জীববিজ্ঞানী ও অধিকারকর্মী তাকে প্রশ্ন করতে উৎসাহ দিতেন, শেখাতেন যে সবাই সমান এবং মানবদেহ সম্পর্কে খোলামেলাভাবে আলোচনা করতেন লজ্জার কিছু না ভেবে নগ্নতাকেও স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করতেন। ফলে জুনিয়র তার শিক্ষককে বোঝাতে চেষ্টা করেছিল যে মায়ের এবং বাবার দুজনেরই পেনিস আছে মায়েরটি "ইননি" জুনিয়রেরটি "আউটি" আর বাবারটি ইননি এবং আউটি দুই-ই কারণ সে কিশোর বয়সে নিজের পেনিস স্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি করেছে। শিক্ষক জুনিয়রের কথায় অস্বস্তিতে পড়ে যান। (জুনিয়র পরে বাবাকে বলেছিল, “দেখাচ্ছিল যেন উনি চিৎকার করতে চাইছিলেন, যেমন করে মা চিৎকার করে যখন শিকাগো বেয়ার্স হারায়।”) শিক্ষক তাকে বলেন সে ভুল বলেছে, আর সে প্রতিবাদ করলে, শিক্ষক তাকে প্রশাসনের কাছে পাঠান শাস্তির জন্য।

এই গল্পটি সবাইকে বলার পর, জর্ডিন ব্যাখ্যা করলেন যে তিনি শিশু অবস্থায় একটি ছোট “পেনিস” নিয়ে জন্মেছিলেন, যেটিকে শ্বেতাঙ্গ আমেরিকান সমাজ বিজ্ঞানী হোক বা না হোক ১৮০০-এর শেষভাগ থেকে ১৯২০-এর দশক পর্যন্ত একে “ক্লিটোরিস” বলেই পরিচিত করিয়ে দেয়। তিনি ব্যাখ্যা করলেন যে আমরা একই অঙ্গকে “ক্লিটোরিস” বা “পেনিস” কী নামে ডাকবো, সেটা নির্ধারিত হয় কিছু পরিমাপের ভিত্তিতে—যা জীববিজ্ঞানীরা তৈরি করেছেন পশ্চিমা বিশ্বের ধর্মীয় শিক্ষা অনুসরণ করে।[] তিনি আরও বললেন, এটি অনেকটা সেই ধর্মীয় পন্থার মতো যেখানে কিছু মানুষ একটি বইকে “ধর্মগ্রন্থ” বলে এবং অন্যটিকে শুধু “বই”যদিও উভয়ই মানুষের লেখা শব্দে পূর্ণ, তবু পার্থক্য টানা হয় শুধুমাত্র বিশ্বাসের কারণে, যেমনটি আমরা করি “ক্লিটোরিস” ও “পেনিস” এর মধ্যে। এরপর তিনি বোঝালেন কীভাবে শিশু অবস্থায় তিনি এবং পৃথিবীর আরও অনেক মানুষ নির্দিষ্ট রাসায়নিক যৌগ গ্রহণ করে তাদের “ক্লিটোরিস” কে “পেনিস” এ রূপান্তর করেন যেমনটা বহু শতাব্দী ধরে হয়ে আসছে। একইভাবে অনেকে আবার বিভিন্ন যৌগ গ্রহণ করে তাদের “পেনিস” কে ছোট করে “ক্লিটোরিস” এর মতো করেন। তিনি আরও বললেন এটি মানবদেহের অন্যান্য অংশের মতোই যেমন পা। কিন্তু আমরা “দীর্ঘ পা” এর জন্য আলাদা কোনো নাম দিই না, বা কিছু লোকের পাকে “পা” বলি আর অন্যদেরটা “ক্লেগ” বলি না।

জর্ডিন আরও অনেক উদাহরণ দেন, কিভাবে আমরা দেহের নির্দিষ্ট অংশকে আলাদা করে নাম দিয়ে বা জোর দিয়ে একটি “সেক্স” নামক মিথ তৈরি করেছি। এরপর তিনি অভিভাবকদের বললেন কল্পনা করুন, একদিন হঠাৎ আপনার ছেলে বা মেয়ে আর ছেলে বা মেয়ে থাকলো না কারণ কিছু লোক ঠিক করল শুধুমাত্র বাদামী চোখ থাকলেই ছেলে-মেয়ে হওয়া যাবে আর আপনার সন্তানের চোখ বাদামী নয়। তিনি আরও বললেন, কল্পনা করুন যদি ডিম্বাশয় বা যোনির বদলে আমরা ঠিক করতাম মানুষের পার্থক্য হবে (যেমন “সেক্সড”) তারা জিভ গুটাতে পারে কিনা সবজি বা মাংস হজম করতে পারে কিনা বা অন্যান্য হাজারো ছোট জৈব পার্থক্যের উপর ভিত্তি করে যেগুলো সমাজে আলাদা শ্রেণি গঠনের কারণ হওয়ার দরকার নেই। সবশেষে তিনি শ্রোতাদের প্রশ্ন করলেন, সেই পুরুষেরা যারা তাদের পেনিস হারিয়েছেন বা ব্যবহার করতে পারেন না তারা তাহলে কী “সেক্স”? কিংবা সেই নারীরা যারা যোনি, ডিম্বাশয় বা অন্য যেসব উপাদানকে আমরা গুরুত্বপূর্ণ বলি তা ছাড়াই জন্মেছেন তারা কী? জর্ডিন দেখালেন আমরা এখনো তাদের একই “সেক্স” শ্রেণিতে ফেলি যদিও তারা সেই জিনিসগুলোর অভাবে আছে—যেগুলোকে আমরা শ্রেণিবিন্যাসের ভিত্তি বলি।

পরিচিতি

[সম্পাদনা]

কেন কিছু মানুষ এখনো শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের এমন বিশ্বাস শেখায় যা মানবদেহসংক্রান্ত বাস্তব তথ্যের সঙ্গে মেলে না? কেন আমরা একটি যৌনাঙ্গের জন্য দুটি নাম তৈরি করলাম, এবং কেন এটি এত গুরুত্বপূর্ণ কারো জন্য কার নাম কোনটি হবে? কেন আমরা আমাদের শ্রেণিকক্ষ ও গবেষণাগারে মানব জীববৈচিত্র্যের একটি ভুল সংস্করণ প্রচার করি? একইভাবে কেন এমনকি যারা বিজ্ঞান ও সমালোচনামূলক বিশ্লেষণে প্রশিক্ষিত, তারাও এই সামাজিক ধারণাগুলিতে বিশ্বাস করে এবং সেগুলোকে আমাদের পৃথিবী ব্যাখ্যার জন্য ব্যবহার করে? আমরা চোখের রঙ, চুলের রঙ বা অন্যান্য জৈব পার্থক্যের বদলে যৌনাঙ্গকেই কেন শ্রেণিবিন্যাসের ভিত্তি হিসেবে বেছে নিলাম? এবং সবশেষে, আমাদের “সেক্স” এবং তার সম্প্রসারণ “জেন্ডার” সংক্রান্ত বিশ্বাসের কী প্রভাব পড়ে ব্যক্তির ওপর এবং বৃহত্তর সমাজে?

যদিও সমাজবিজ্ঞানীরা এই প্রশ্নগুলোর উত্তর নানা দিক থেকে খুঁজেছেন,[][] তবুও সেক্স/জেন্ডার ব্যবস্থা এখনো বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী বিশ্বাস ব্যবস্থার একটি ধর্মীয় ও বৈজ্ঞানিক উভয় জনগোষ্ঠীর মাঝেই। এই অংশে আমরা সেক্স/জেন্ডার শ্রেণিবিন্যাস পদ্ধতির উপাদানগুলো তুলে ধরব, এবং দেখাবো কিভাবে মানুষ এই বিশ্বাসগুলো তাদের জীবনে ব্যবহার করে, ও এই সামাজিক গঠনের ফলাফল কীভাবে সমাজজুড়ে প্রভাব ফেলে।

লিঙ্গ বনাম যৌনতা

[সম্পাদনা]
থাইল্যান্ডে পারফর্ম করা ট্রান্সজেন্ডার নারীরা (স্থানীয়ভাবে পরিচিত কাথোয়ি হিসেবে)

সমাজবিজ্ঞানীরা লিঙ্গ এবং যৌনতার মধ্যে একটি পার্থক্য করে থাকেন। "লিঙ্গ" বলতে বোঝানো হয় একজন ব্যক্তির সামাজিক অবস্থান যা সমাজে প্রতিষ্ঠিত নারীত্ব ও পুরুষত্বের ধারণার ওপর ভিত্তি করে গঠিত হয়। এটি বোঝায় একজন ব্যক্তি কীভাবে নিজেকে নারীত্ব বা পুরুষত্বের রূপে উপস্থাপন করছেন এবং অন্যরা তাকে সেই রূপেই ব্যাখ্যা করছেন কিনা। অন্যদিকে "যৌনতা" বোঝায় একজন ব্যক্তিকে, সাধারণত ডাক্তার, ধর্মীয় নেতা, পরিবার বা রাষ্ট্র কর্তৃক জিনগত ও জৈবিক বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে নির্ধারিত একটি শ্রেণিতে অর্ন্তভুক্ত করা।[]

সিস বনাম ট্রান্স

[সম্পাদনা]

সমাজবিজ্ঞানীরা আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য করেন সেটি হলো সিস লিঙ্গ/যৌনতা এবং ট্রান্স লিঙ্গ/যৌনতা।[] সিস লিঙ্গ/যৌনতা ব্যক্তি হলো সেই সব মানুষ যারা সমাজে প্রচলিত লিঙ্গ ও যৌনতার সংজ্ঞার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। যেমন, একজন সিসসেক্স পুরুষকে জন্মের সময় পুরুষ হিসেবে চিহ্নিত করা হয় এবং সে সারাজীবন পুরুষ হিসেবেই নিজেকে উপস্থাপন করে। একইভাবে, একজন সিসজেন্ডার পুরুষ লিঙ্গের প্রচলিত চিহ্ন, ভাষা, আচরণ ও পোশাক-পরিচ্ছদ অনুযায়ী নিজেকে প্রথমে একজন ছেলে এবং পরে একজন পুরুষ হিসেবে গড়ে তোলে।[]

ট্রান্স লিঙ্গ/যৌনতা মানুষ হলো তারা যারা প্রচলিত লিঙ্গ বা যৌনতার ধারণার সঙ্গে মিল রাখে না। উদাহরণস্বরূপ একজন ট্রান্সসেক্স পুরুষ (যাকে অনেক সময় নারী-থেকে-পুরুষ ট্রান্সসেক্সুয়াল বলা হয়) জন্মের সময় নারী হিসেবে চিহ্নিত হন কিন্তু জীবনের কোনো এক পর্যায়ে হরমোন, শারীরিক অনুশীলন, ভেষজ ওষুধ বা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পুরুষ হয়ে ওঠার চেষ্টা করেন।একইভাবে একজন ট্রান্সজেন্ডার পুরুষ, যিনি ট্রান্সসেক্সও হতে পারেন আবার নাও হতে পারেন, জন্মের সময় নারী হিসেবে চিহ্নিত হন কিন্তু তিনি নিজেকে কখনো ছেলে/পুরুষ আবার কখনো মেয়ে/নারী হিসেবে উপস্থাপন করেন সমাজের প্রচলিত লিঙ্গ চিহ্ন অনুযায়ী। কিছু সমাজে ট্রান্স মানুষদের গ্রহণ ও সম্মান করা হয় আবার কিছু সমাজে তাদের প্রতি বৈষম্য, হয়রানি এবং নিপীড়ন চালানো হয় যার পেছনে অনেক সময় ধর্মীয় ও বৈজ্ঞানিক প্রতিষ্ঠানগুলোও ভূমিকা রাখে।[]

এই অধ্যায়ে আমরা আধুনিক সমাজে এই বিষয়গুলো কীভাবে কাজ করে তা বিশ্লেষণ করে দেখব।

যৌনতা

[সম্পাদনা]

বিশেষ করে ১৮০০ সালের শেষের দিক থেকে বৈজ্ঞানিক সমাজ বিভিন্ন প্রজাতিকে দুইটি ভিন্ন যৌন শ্রেণিতে ভাগ করে এসেছে। এই শ্রেণিবিভাগ মূলত জিনগত বৈশিষ্ট্য, প্রজনন ক্ষমতা ও যৌন অঙ্গের গঠন ইত্যাদির একটি নির্দিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গির ওপর ভিত্তি করে করা হয়েছে। সাধারণভাবে এই শ্রেণিতে দুইটি যৌনতা নির্ধারণ করা হয়েছে "পুরুষ" ও "নারী"। নারীরা এমন যৌনতা হিসেবে বিবেচিত হয় যারা বড় গ্যামেট তৈরি করে এবং সন্তান ধারণ করে। এই ভিত্তিতে X এবং Y ক্রোমোজোম নিয়ে একটি টাইপোলজি তৈরি করা হয়েছে। এতে নারীকে দুটি X এবং পুরুষকে একটি X ও একটি Y ক্রোমোজোমধারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

তবে বাস্তবতা হলো মানব জীববিজ্ঞান এই শ্রেণিবিন্যাসের তুলনায় অনেক বেশি জটিল এবং বহু জিনগত বৈচিত্র্য এই শ্রেণিতে উপেক্ষিত থাকে। (এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে ইন্টারসেক্স বিষয়ক নিবন্ধ এবং পূর্বোক্ত উদ্ধৃতি দেখুন)। অধিকাংশ ক্ষেত্রে জন্মের সময় শিশুর জিনগত পরীক্ষা করা হয় না, বরং ডাক্তাররা চোখে দেখা যৌন অঙ্গের ভিত্তিতে তার লিঙ্গ নির্ধারণ করে থাকেন।উদাহরণস্বরূপ সাধারণভাবে বলা হয় পুরুষরা সেই ব্যক্তি যাদের মূত্রনালী লিঙ্গের ডগায় থাকে এবং নারীদের তা পেরিনিয়ামে থাকে। কিন্তু বাস্তবে অনেক মানুষের মূত্রনালীর অবস্থান এই দুইয়ের মাঝামাঝি জায়গায় থাকে, তবুও তাদের সবাইকে ইন্টারসেক্স হিসেবে বিবেচনা করা হয় না। একই রকম পরিস্থিতি দেখা যায় যৌনাঙ্গের আকার, গ্যামেটের আকার, ক্রোমোজোমের গঠন ইত্যাদিতেও। যৌনতার এই দ্বৈত সামাজিক নির্মাণ (যেমন, পুরুষ বনাম নারী) অনেক ক্ষেত্রেই পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থার প্রতিফলন হলেও এটি মানব জীববিজ্ঞানের বাস্তবতার সঙ্গে পুরোপুরি মেলে না। এজন্য সমাজবিজ্ঞানীরা 'দ্বৈত যৌনতার মিথ' কীভাবে সামাজিক গঠন ও কাঠামো তৈরি করে তা বিশ্লেষণ করে থাকেন।[][]

এর পাশাপাশি মানব জীববিজ্ঞান সহজেই প্রভাবিত ও পরিবর্তনযোগ্য, এবং তাই "যৌনতা" নিজেই পরিবর্তনশীল। ইতিহাসবিদরা দেখিয়েছেন, মানুষের যৌনতা পরিবর্তন বা রূপান্তরের বহু উদাহরণ রয়েছে।[][] ১৯৫০ সালের আগ পর্যন্ত যৌনতা পরিবর্তনকে মানব জীবনের স্বাভাবিক বৈচিত্র্য হিসেবে দেখা হতো। কিন্তু ১৯৫০ সালে মার্কিন ও ইউরোপীয় চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলো এটিকে একটি "অসুস্থতা" হিসেবে চিহ্নিত করে এবং এতে হস্তক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে। তারা এটি একটি মানসিক রোগ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করে এবং নির্দিষ্ট থেরাপি ও প্রটোকল ছাড়া রূপান্তরকে অনুমোদন দেয় না।[] এর প্রতিক্রিয়ায় ১৯৮০-এর দশকে সহায়তা কেন্দ্র ও কমিউনিটি গঠিত হয় এবং ১৯৯০ এর দশকে জাতীয় ট্রান্সজেন্ডার আন্দোলনের জন্ম হয়। এই আন্দোলনের উদ্দেশ্য ছিল: (ক) ট্রান্সসেক্স পরিষেবা পেতে মানুষকে কীভাবে নিজেদের গল্প বলবে তা শেখানো এবং (খ) চিকিৎসা ও মানসিক স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে এই "নতুন তৈরি করা অসুস্থতাগুলো" বাতিলের জন্য লবিং করা। এই প্রচেষ্টা কিছুটা সফল হয়েছে, কারণ সাম্প্রতিক দশকগুলোতে ট্রান্সসেক্সুয়ালতা নিয়ে ব্যাখ্যা পরিবর্তিত হয়েছে এবং অনেক দেশে এটি আইনি স্বীকৃতি ও সুরক্ষা পেয়েছে।[]

বর্তমানে ইন্টারসেক্স ও ট্রান্সসেক্সুয়ালতা বিজ্ঞানী সমাজে ব্যাপক বিতর্কের বিষয়। অনেকেই এখনো "দুইটি যৌনতা" বা "XX/XY" মডেলকে সমর্থন করলেও এই দৃষ্টিভঙ্গিগুলো ধীরে ধীরে প্রমাণিত হচ্ছে যে এগুলো আদতে আদর্শবাদী, বাস্তব বিজ্ঞানভিত্তিক নয়। তাই যৌনতার বৈজ্ঞানিক বোঝাপড়া আদর্শবাদ থেকে বাস্তবতার ভিত্তিতে ফিরিয়ে আনার প্রয়াস চলছে।

লিঙ্গ

[সম্পাদনা]

"লিঙ্গ" বা জেন্ডারও মানুষের আচরণের একটি সামাজিক নির্মাণ এর মাধ্যমে বোঝানো হয়, সমাজে প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী একজন ব্যক্তি কতটা পুংলিঙ্গ বা স্ত্রীলিঙ্গ আচরণ করছে। সেই ভিত্তিতে তাদের সামাজিক অবস্থান নির্ধারিত হয়। জেন্ডার বা লিঙ্গ মূলত দুটি পরস্পর সম্পর্কযুক্ত দিক নিয়ে গঠিত একটি হচ্ছে নিজের অনুভব, এবং অপরটি হচ্ছে সমাজ কীভাবে কাউকে দেখে। প্রথমত, একজন ব্যক্তি নিজের ভেতরে কী অনুভব করে সে নিজেকে ছেলে মনে করে, মেয়ে মনে করে উভয়ই মনে করে, না কিছুই মনে করে না কিংবা এর মধ্যবর্তী বা বাইরের কোনো পরিচয়ে নিজেকে দেখে সেটি জেন্ডারের এক অংশ। যেহেতু লিঙ্গভূমিকা সমাজের আচরণগত প্রত্যাশার উপর নির্ভর করে তাই এই প্রত্যাশাগুলি জানার পর কেউ চাইলে তার আচরণ এমনভাবে গড়ে তুলতে পারে যাতে সে তার পছন্দের জেন্ডার উপস্থাপন করতে পারে। এটি থিয়েটারের একটি চরিত্রের মতো ভাবা যায়। প্রতিটি জেন্ডারের জন্য নির্দিষ্ট আচরণ ও নিয়ম থাকে যেভাবে নাটকে প্রতিটি চরিত্রের জন্য নির্দিষ্ট সংলাপ ও অঙ্গভঙ্গি থাকে। যদি কেউ সেই আচরণ ও নিয়মগুলি অনুসরণ করে তাহলে মানুষ ধরে নেয় সে ঐ জেন্ডারেরই একজন।

তবে নাটকের মতোই জেন্ডারের আরেকটি দিক আছে দর্শক। নাটকে পারফর্ম্যান্স সফল হয়েছে কিনা তা নির্ধারিত হয় দর্শকের প্রতিক্রিয়ায়। দর্শকরা আগে থেকেই কিছু প্রত্যাশা নিয়ে আসে এবং সেই অনুযায়ী বিচার করে। একইভাবে, অন্যরা আমাদের কীভাবে দেখে, তার উপরেও জেন্ডার নির্ভর করে (যেমন: অন্যরা আমাদের পুরুষ বা নারী হিসেবে দেখে কি না)। এই কারণেই জেন্ডারকে বলা হয় একটি সামাজিক অভিনয় যা বাস্তব নয়, বরং মানুষের সম্মিলিত বোধ ও চর্চার ফলাফল। তাই এটি টিকে থাকে যতক্ষণ না পর্যন্ত অন্যরা তা মেনে নিচ্ছে। ফলে মানুষ সারাজীবন ধরে তাদের আচরণকে অন্যদের জেন্ডার ধারণার সাথে মিলিয়ে "জেন্ডার পালন" করে যায় এবং তারা সচেতনভাবে বা অবচেতনভাবে বুঝতে থাকে, তাদের প্রতিটি কাজকে অন্যরা একটি নির্দিষ্ট জেন্ডারের প্রমাণ হিসেবে ব্যাখ্যা করতে পারে। অর্থাৎ জেন্ডার একটি চলমান প্রক্রিয়া যা অন্যদের প্রতিক্রিয়ার উপর নির্ভরশীল।

এখন কিছু উদাহরণ দিলে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হবে। যেমন: বাবা-মা হয়তো তাদের ছেলেকে "পুরুষালী" আচরণ শেখান স্বনির্ভরতা, সাহস, আগ্রাসী মনোভাব ইত্যাদি। এবং তারা বারবার মনে করিয়ে দেন যে, সে একজন ছেলে যেমন তাকে "বাবা", "ছেলে" ইত্যাদি ডেকে অথবা যদি সে মেয়েলি কিছু করে তখন বলবে "ছেলেরা এসব করে না"। একইভাবে মেয়েদের ক্ষেত্রে শেখানো হয় নম্রতা, আবেগপ্রবণতা, সহানুভূতির মতো বৈশিষ্ট্য। এবং তাদের প্রতিও এমন শব্দ ব্যবহার করা হয় যাতে তারা মনে করে, তারা মেয়ে এবং মেয়েদের মতো আচরণ করা উচিত। শুধু বাবা-মা নয়, ভাইবোন, বন্ধু, প্রতিবেশী সবাই এই লিঙ্গভূমিকা শেখাতে সাহায্য করে। যদি এই ছেলেমেয়েরা কখনও তাদের জেন্ডার নিয়ে প্রশ্ন না তোলে, তাহলে তারা ধীরে ধীরে সমাজের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী ছেলে ও মেয়ে হয়ে ওঠে। এর ফলে তারা সিসজেন্ডার পরিচয় গড়ে তোলে। যেমন: ছেলেটি খেলনা সৈনিক নিয়ে খেলে ক্রীড়াদলে যোগ দেয়, এবং কঠোর হতে শেখে। আর মেয়েটি পুতুল নিয়ে খেলে, মেয়েলি আচরণ করে এমনদের সাথে বন্ধুত্ব গড়ে তোলে, এবং দয়ালু হওয়ার জন্য প্রশংসা পায়।

প্রচলিত লিঙ্গভিত্তিক বৈশিষ্ট্য
স্ত্রীলিঙ্গ বৈশিষ্ট্য পুংলিঙ্গ বৈশিষ্ট্য
অনুগত কর্তৃত্বপূর্ণ
নির্ভরশীল স্বনির্ভর
আবেগপ্রবণ যুক্তিনির্ভর
গ্রহণশীল আত্মপ্রকাশমূলক
অন্তর্দৃষ্টিপ্রবণ বিশ্লেষণধর্মী
ভীতু সাহসী
নিষ্ক্রিয় সক্রিয়
সংবেদনশীল অসংবেদনশীল

তবে লিঙ্গ বা জেন্ডারও যৌনতার মতোই পরিবর্তনশীল ও তরল। আগের উদাহরণ থেকে ধরুন, ছেলেটি বড় হয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে বা হয়তো ছোটবেলাতেই গোপনে সে মেয়েলি আচরণ করবে। একইভাবে মেয়েটিও ছেলেদের মতো আচরণ করতে পারে। অনেক বাবা-মা তাদের সন্তানদের নিরপেক্ষভাবে বড় করে তোলে যাতে তারা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিতে পারে কীভাবে নিজেকে প্রকাশ করবে। ফলে এই ছেলেমেয়েরা হয়তো মিশ্র আচরণ রপ্ত করতে পারে এবং অ্যান্ড্রোজিনাস বা লিঙ্গনিরপেক্ষ একটি পরিচয় তৈরি করতে পারে। অথবা তারা বিপরীত লিঙ্গের আচরণ গ্রহণ করতে পারে যেমন একজন ছেলে মেয়েদের মতো আচরণ করতে পারে কিছু সময় বা পুরো সময়জুড়ে। (এরকমই একটি উদাহরণ হচ্ছে পুরুষ ড্র্যাগ পারফর্মার যারা মাঝে মাঝে মেয়েদের পোশাক ও আচরণ গ্রহণ করে।) তবে এই পরিবর্তনের মানে হচ্ছে (ক) সমাজের নিয়মিতভাবে আরোপিত লিঙ্গ আচরণ থেকে বেরিয়ে আসা এবং (খ) সিসজেন্ডার মানুষদের কাছ থেকে বিদ্রুপ হয়রানি ও বৈষম্যের মুখোমুখি হওয়া (যা সিসসেক্সিজম বা ট্রান্সফোবিয়া নামে পরিচিত)।

কানাডার মন্ট্রিলে ড্র্যাগ পোশাকে পুরুষরা

জৈবিক পার্থক্য

[সম্পাদনা]

যদিও এই অধ্যায়ের বেশিরভাগই পুরুষ ও নারীর মধ্যে সামাজিকভাবে নির্মিত পার্থক্যের ওপর গুরুত্ব দেয় তবে এটাও মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে, নারী ও পুরুষের মধ্যে কিছু স্পষ্ট শারীরবৃত্তীয় পার্থক্য রয়েছে। এই পার্থক্যগুলো কীভাবে বা কেন গঠিত হয় তা এখনো নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি। তবে গবেষকরা সাধারণত দুটি দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে এসব ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেন। বিজ্ঞানচর্চার যেসব শাখা সমাজের প্রচলিত লিঙ্গবোধের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত, তারা সাধারণত বলে থাকে যে এই জৈবিক পার্থক্যগুলোই নারীদের ও পুরুষদের ভিন্ন করে তোলে এবং এই পার্থক্যগুলো ব্যবহার করে তারা দাবি করে যে নারী ও পুরুষ প্রকৃতিগতভাবেই আলাদা (এই যুক্তির মধ্যে সাধারণত রূপান্তরিত লিঙ্গ বা অ-সিসজেন্ডার মানুষদের একেবারেই উপেক্ষা করা হয়)। অন্যদিকে আরও প্রগতিশীল ও বৈচিত্র্যময় বৈজ্ঞানিক সমাজগুলো যুক্তি দেয় যে এই পার্থক্যগুলো আসলে সমাজে বিদ্যমান লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্যের প্রতিফলন এবং তাই এগুলো প্রমাণ করে যে লিঙ্গ ও যৌনতার সামাজিক নির্মাণের জৈবিক (এবং সামাজিক) প্রভাব রয়েছে। আগামী দশকে বায়ো-সোশ্যাল গাণিতিক মডেল এবং বৈজ্ঞানিক পাঠের সমালোচনামূলক বিশ্লেষণ হয়তো এই বিতর্কে আলো ফেলতে পারে কিন্তু বর্তমানে এ বিষয়ে কোনো নিশ্চিত প্রমাণ নেই। ফলে নিচের অনুচ্ছেদগুলোতে এই পার্থক্যগুলো বর্ণনা করা হয়েছে, পাশাপাশি উল্লেখ করা হয়েছে কীভাবে সামাজিক উপাদানগুলো এই পার্থক্য সৃষ্টি বা প্রভাবিত করতে পারে। তবে মনে রাখতে হবে যেহেতু এসব গবেষণায় ট্রান্স লিঙ্গ/যৌনতা অভিজ্ঞতা উপেক্ষা করা হয়েছে তাই আমাদের বিশ্লেষণ শুধু সিসজেন্ডার মানুষদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।

পুরুষ ও নারীর যৌনাঙ্গ ও যৌন ক্রোমোজোমের ভিন্নতার পাশাপাশি গড়পড়তা একজন পুরুষ একজন নারীর তুলনায় ১০ শতাংশ লম্বা, ২০ শতাংশ বেশি ভারী এবং ৩৫ শতাংশ বেশি উপরের শরীরের শক্তি রাখে।[১০] কিছু গবেষক মনে করেন এই শারীরিক পার্থক্যগুলো আমাদের বিবর্তনের অতীতের কিছু সামাজিক বা সাংস্কৃতিক সিদ্ধান্তের কারণে তৈরি হয়েছে।[১১] তবে যদি এই শক্তির পার্থক্যকে শরীরের আকার অনুযায়ী মাপা হয় (যেমন: নারীরা নিজেদের দেহের আকারের তুলনায় কতটুকু ওজন বহন করতে পারে আর পুরুষরা কতটুকু), তাহলে দেখা যায় প্রকৃত পার্থক্য খুবই সামান্য।[১২]

নারীরা, এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত না হলেও, পুরুষদের তুলনায় গড়ে বেশি দিন বাঁচে। যুক্তরাষ্ট্রে নারীদের গড় আয়ু ৭৯.৮ বছর আর পুরুষদের ৭৪.৪ বছর।[১৩] অনেকে মনে করেন এই পার্থক্যের কারণ হলো পুরুষদের (যারা নিজেদের পুরুষ হিসেবে চিহ্নিত করে) অধিক ঝুঁকিপূর্ণ জীবনযাপন, বিশেষ করে জীবনের শুরুতে এবং তাদের সাধারণত বেশি শারীরিক পরিশ্রমের পেশায় নিয়োজিত থাকা।[১৪] আরও অনেকে বলছেন যে, চাপ ও আবেগ না প্রকাশের প্রবণতা (যা 'পুরুষালী' বৈশিষ্ট্য হিসেবে বিবেচিত হয়) দেহের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। অপরদিকে নারীরা সহায়তা ও চিকিৎসা গ্রহণে এগিয়ে থাকে (যা ঐতিহ্যগতভাবে নারীত্বের বৈশিষ্ট্য হিসেবে দেখা হয়) যা এই পার্থক্যের আরেকটি কারণ হতে পারে।

আচরণগত দিক থেকে, বসা, দাঁত ওঠা এবং হাঁটা এসবের বয়স নারী ও পুরুষদের মধ্যে প্রায় একই সময়ে ঘটে। তবে পুরুষেরা গড়ে নারীদের তুলনায় দুই বছর পরে বয়ঃসন্ধিতে প্রবেশ করে। (তবে এটাও মনে রাখা দরকার যে নারীদের ক্ষেত্রে বয়ঃসন্ধির একটি স্পষ্ট লক্ষণ থাকে যেমন মাসিক শুরু হওয়া কিন্তু পুরুষদের (এবং তাদের অভিভাবকদের) জন্য নির্দিষ্ট সময় জানা কঠিন, যা গবেষণার ফলাফলকে প্রভাবিত করতে পারে)।[১৫] নারী ও পুরুষদের মধ্যে বুদ্ধিমত্তা, সুখ বা আত্মসম্মানে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য নেই। তবে পরিসংখ্যান অনুযায়ী নারীরা উদ্বেগজনিত মানসিক রোগ ও বিষণ্নতায় দ্বিগুণ বেশি ভোগে (সম্ভবত তারা অনেক সমাজে অধীনস্থ বা সংখ্যালঘু গোষ্ঠী হিসেবে বসবাস করার কারণে)। কিন্তু আত্মহত্যা বা মদ্যপানে আসক্তির ঝুঁকি নারীদের তুলনায় পুরুষদের বেশি (সম্ভবত পুরুষালী পরিচয়ের সঙ্গে সহিংসতা ও মাদকসেবনের সম্পর্ক থাকার কারণে)।[১৬] নারীরা পুরুষদের তুলনায় আত্মহত্যার চেষ্টা বেশি করে (যেমনটি অন্যান্য প্রভাবশালী ও প্রভাবাধীন গোষ্ঠীর মধ্যেও দেখা যায়) তবে তাদের আত্মহত্যায় মৃত্যুর হার কম কারণ তারা আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে না পুরুষদের মতো (সম্ভবত সহিংসতা ও পুরুষত্বের সংযোগের কারণে)। নারীরা শিশুকালে অতিসক্রিয়তা বা বাকসংক্রান্ত সমস্যায় কম ভোগে এবং প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর সমাজবিরোধী আচরণও কম দেখা যায় (সম্ভবত এটি লিঙ্গভিত্তিক সমাজীকরণের ফল, যেখানে নারীত্বের সঙ্গে সামাজিকতা ও যোগাযোগ দক্ষতা জড়িত থাকে)।[১৭] অবশেষে, নারীদের গড়ে ঘ্রাণগ্রহণকারী রিসেপ্টর বেশি থাকে এবং তারা পুরুষদের তুলনায় দ্রুত পুনরায় যৌন উত্তেজনা অনুভব করতে পারে (সম্ভবত নারীত্বের সঙ্গে যৌন আনন্দ ও ঘনিষ্ঠতা অনুসন্ধানের সম্পর্ক থাকার কারণে যেমন পুরুষত্ব এর সঙ্গে যৌন বিজয় ও সক্ষমতা জড়িত)।[১৭]

অনেক গবেষণায় দেখা গেছে যে, নারী ও পুরুষদের মস্তিষ্কে কিছু পার্থক্য রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, টেম্পোরাল লোব যা ভাষা ও আবেগের সঙ্গে যুক্ত এটি ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের মধ্যে গড়ে ৪ বছর আগে বিকশিত হয় (যা নারীত্বের সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার প্রতিফলন)।[১৮] অন্যদিকে প্যারাইটাল লোবের বাঁ দিকটি যা গণিত ও স্থানিক চিন্তার সঙ্গে যুক্ত এটি ছেলেদের মধ্যে গড়ে ৪ বছর আগে বিকশিত হয় (যা পুরুষালী সামাজিকীকরণের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ)। এই পার্থক্যগুলো থেকেই অনেক সময় মনে করা হয় যে, নারীরা ভাষায় বেশি দক্ষ ও আবেগপ্রবণ (কারণ সমাজ তাদের এভাবেই গড়ে তোলে) আর ছেলেরা গণিতে ভালো (তাদের সামাজিকীকরণ সেভাবেই হয়)। আরও বলা হয়, নারীরা পুরুষদের তুলনায় শুনতে বেশি ভালো পারে। একটি লিঙ্গবৈষম্যপূর্ণ সমাজে কিশোরী মেয়েরা গড়ে ছেলেদের তুলনায় ৭ গুণ ভালো শুনতে পারে। (এটি এবং পুরুষালী সামাজিকীকরণ যেখানে চিৎকার করা, নিয়ন্ত্রণ এড়ানো, ও উচ্চকণ্ঠে কথা বলা শেখানো হয়, সম্ভবত এটাই ব্যাখ্যা করে কেন ছেলেদের ADHD বেশি ধরা পড়ে এবং মেয়েরা অন্যদের যত্ন নেওয়া শেখে)।[১৯] সবশেষে মেয়েদের ও ছেলেদের মধ্যে দেখার ক্ষমতায় কিছু পার্থক্য রয়েছে। মেয়েরা মুখভঙ্গি ও আবেগ ভালোভাবে শনাক্ত করতে পারে, আর ছেলেরা চলাচল ভালোভাবে দেখতে পারে (এটি নারীত্বের যত্ন ও যোগাযোগ এবং পুরুষত্বের কর্মমুখী বৈশিষ্ট্যের প্রতিফলন)। মেয়েরা রেটিনার p-cells ব্যবহার করে যা টেক্সচার ও রঙ শনাক্ত করতে সাহায্য করে আর ছেলেরা m-cells ব্যবহার করে যা চলাচল শনাক্ত করতে ব্যবহৃত হয়।

সামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিক পার্থক্য

[সম্পাদনা]

লিঙ্গভিত্তিক পার্থক্য (পরে শারীরবৃত্তীয় দিকগুলোতে প্রকাশ পেলেও) সাধারণত সমাজ, পরিবেশ, ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও সংস্কৃতির ওপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয় এর মানে হলো এগুলো অনেকটাই সামাজিকভাবে গঠিত। উদাহরণস্বরূপ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কর্মস্থলে দলের মধ্যে কাজ করার সময় পুরুষরা সাধারণত নির্দিষ্ট কাজটি শেষ করার দিকে মনোযোগ দেয়। অন্যদিকে নারীরা ব্যক্তিগত সম্পর্কের দিকে বেশি মনোযোগী হন।[২০] তবে ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তিদের ওপর পরিচালিত গবেষণায় দেখা গেছে, এই পার্থক্যগুলোর পেছনে একটি বড় কারণ হলো নারী ও পুরুষদের কর্মক্ষেত্রে যেভাবে আলাদা করে দেখা হয়। উদাহরণস্বরূপ ট্রান্স পুরুষেরা (যারা নারী থেকে পুরুষে রূপান্তরিত হয়েছেন) জানিয়েছেন রূপান্তরের পর তাদেরকে নির্দিষ্ট কাজের দিকেই বেশি মনোযোগ দিতে উৎসাহিত করা হয়েছে।[] খাওয়ার ক্ষেত্রেও এমন পার্থক্য দেখা যায়। নারীরা যখন পুরুষদের সঙ্গে একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করেন তখন তারা সাধারণত কম ক্যালোরি গ্রহণ করেন। কিন্তু যখন তারা শুধু নারীদের সঙ্গেই খান তখন বেশি ক্যালোরি গ্রহণ করেন।[২১] এই ধরনের আচরণগত পার্থক্য সংস্কৃতি ভেদে পরিবর্তিত হয়। এজন্য অনেকেই মনে করেন এসব আচরণ সামাজিকভাবে গঠিত। সামাজিকভাবে গঠিত লিঙ্গভিত্তিক পার্থক্যের দুটি বিস্তারিত উদাহরণ নিচে উপস্থাপন করা হয়েছেকর্মক্ষেত্রের পার্থক্য এবং শিক্ষা।

কাজ ও পেশা

[সম্পাদনা]

পুরুষ ও নারীর মধ্যে একটি বহুল আলোচিত এবং বিতর্কিত পার্থক্য হলো কাজ ও পেশা। নারীদের শ্রমবাজারে অংশগ্রহণ সময়ের সাথে অনেক পরিবর্তিত হয়েছে। পুঁজিবাদ ও কারখানাভিত্তিক কাজের আগে নারীরা খাদ্য উৎপাদন ও গৃহস্থালি রক্ষণাবেক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত। পুঁজিবাদ ও ঘরের বাইরের শ্রমের সূচনার পরও নারীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তবে শুরুতে ঘরের বাইরের বেতনের কাজে তাদের অংশগ্রহণ কমে যায়। এছাড়াও নারীদের শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণ বৈবাহিক অবস্থা ও সামাজিক শ্রেণি অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়েছে এবং হচ্ছে।

বর্তমান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমশক্তির পরিসংখ্যান নারীদের ভূমিকার পরিবর্তনকে তুলে ধরে। উদাহরণস্বরূপ ১৯৭১ সালে শ্রমশক্তিতে নারীদের অংশগ্রহণ ছিল ৩.২ কোটি (১৬ বছর ও তার বেশি বয়সী নারীদের মধ্যে ৪৩.৪%), যা বর্তমানে বেড়ে ৬.৮ কোটিতে দাঁড়িয়েছে (৫৯.২%)।[১] নারীরা গড়ে পুরুষদের চেয়ে বছরে প্রায় ১৭,০০০ ডলার কম আয় করে।[২] তারা সাধারণত কম মর্যাদাসম্পন্ন ও কম বেতনের পেশায় বেশি সংখ্যায় নিয়োজিত থাকে,[২২] যেগুলোকে প্রথাগতভাবে নারীদের কাজ বা গোলাপি কলার কাজ বলা হয়।[৩] সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, নারীরা পুরুষদের সমমানের কাজ করেও সমান মজুরি পায় না এবং এই মজুরি ব্যবধান পৃথিবীর প্রতিটি উন্নত দেশে বিদ্যমান।[২৩] এই ব্যবধানকে অনেক সময় অনুপাতে বোঝানো হয় যেমন নীচের গ্রাফে দেখানো হয়েছে। নারীরা সাধারণত পুরুষদের তুলনায় ৭৫% থেকে ৯১% পর্যন্ত মজুরি পায় যা নির্ভর করে তুলনার পদ্ধতির উপর। উদাহরণস্বরূপ, কলেজপড়ুয়া ২৬ থেকে ৪৫ বছর বয়সী নারীরা ২০০৫ সালে পুরুষদের তুলনায় প্রতি ঘণ্টায় গড়ে ৭৪.৭ সেন্ট আয় করেছিল।[২৪] তবে যদি একই প্রোফাইল ও যোগ্যতার নারীদের সাথে পুরুষদের তুলনা করা হয়, তাহলে ব্যবধান কিছুটা কমে—নারীরা গড়ে পুরুষদের আয়ের প্রায় ৯১% পায়, এবং ১৯৮০-এর দশক থেকে এই হার মোটামুটি একই রকম।[২৪] অথচ ১৯৭০-এর দশকে একই যোগ্যতার নারীরা পুরুষদের আয়ের মাত্র ৮২% পেত।

তবুও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সব ধরনের শিক্ষাগত যোগ্যতা ও দক্ষতার স্তরেই নারীরা এখনও পুরুষদের চেয়ে কম উপার্জন করে। নীচের চিত্রটি এই বাস্তবতাকে তুলে ধরেছে।

২০১২ সালে নারীদের আয়ের অনুপাত

পুরুষ ও নারীদের মজুরির মধ্যে ব্যবধান ১৯৮০ এবং ১৯৯০ এর দশকে কিছুটা কমেছিল, কিন্তু এখন সেই গতি থেমে গেছে।[২৪] আগে এই ব্যবধান মধ্যবিত্ত ও ধনী কর্মীদের মধ্যে প্রায় সমান ছিল, কিন্তু এখন ধনী শ্রেণিতে ব্যবধান সবচেয়ে বেশি। ২০০৬ সালে ৯৫তম শতকে থাকা একজন নারী প্রায় $৯৫,০০০ আয় করত, অথচ একই স্তরের একজন পুরুষ $১১৫,০০০, অর্থাৎ ২৮% বেশি।[২৪] এই ব্যবধান কমেছে বলে অনেক সময় মনে হলেও গবেষক মুলিগান এবং রুবিনস্টেইন[২৫] দেখিয়েছেন যে, প্রকৃতপক্ষে এই ব্যবধান কমেনি বরং মেধাবী নারীরা কর্মজীবনে প্রবেশ করায় গড় ব্যবধান কিছুটা হ্রাস পেয়েছে।

ব্যবসায়িক দুনিয়ায় নারীদের জন্য শীর্ষস্থানে পৌঁছানো অনেক কঠিন। উদাহরণস্বরূপ মাত্র ৩% প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এবং ১% উচ্চ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান নারীদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত।[২৬] যেসব নারী প্রতিষ্ঠানের শীর্ষস্থানে পৌঁছাতে সক্ষম হন তারা প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য বৈষম্যের সম্মুখীন হন।[২৭] যেমন যেসব প্রতিষ্ঠানে নারীরা পরিচালনা পর্ষদে রয়েছেন সেসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার মূল্য সাধারণত কম হয়।[২৭]

এটি সম্ভবত এই ধারণা থেকে আসে যে, বিনিয়োগকারীরা নারীদের উপর কম আস্থা রাখেন। এছাড়াও অনেক সময় নারীদের এমন নেতৃত্বের পদে বসানো হয় যখন প্রতিষ্ঠান সংকটে থাকে ফলে তারা ব্যর্থ হলে তাদের নেতৃস্থানীয় ভূমিকাও খারাপভাবে মূল্যায়িত হয়।[২৮] এই পরিস্থিতিকে বলা হয় "গ্লাস ক্লিফ" এবং রাজনীতিতেও এই প্রবণতা দেখা যায়।[২৯]

গবেষকরা সাধারণত দুইটি বিষয়ে মনোযোগ দেন কীভাবে পুরুষ ও নারীদের আলাদা আলাদা পেশায় ভাগ করা হয় এবং একই পেশায় থেকেও তারা ভিন্নভাবে বেতন পান।[২৩] তবে বেশিরভাগ বেতন ব্যবধান হয় একই পেশায় থেকেও ভিন্ন বেতন দেওয়ার কারণে, যা কোম্পানিভেদে পরিবর্তিত হয়।[২৩]

পুরুষ ও নারীরা আলাদা পেশায় কেন যান এবং কেন নারীরা কম বেতন পান, তার একটি কারণ হিসেবে "মাতৃত্বজনিত মজুরি শাস্তি" কে দায়ী করা হয়।[৩০] যদি কোনো নিয়োগকর্তার সামনে দুইজন সমান যোগ্য প্রার্থী থাকে একজন পুরুষ ও একজন নারী, দুজনই সদ্য স্নাতক বয়স একরকম তবে নিয়োগকর্তা প্রায়শই পুরুষ প্রার্থীকে পছন্দ করে। কারণ নারী প্রার্থী "সন্তান নেওয়ার ঝুঁকিতে" থাকে এমনকি সন্তান নেওয়ার ইচ্ছা না থাকলেও। গর্ভবতী নারী বা মায়েদের জন্য কর্মস্থলে সুবিধা করে দেওয়া পুরুষদের তুলনায় বেশি ঝামেলার মনে হয়। ফলে নারীরা তাদের সন্তান ধারণক্ষমতার জন্য একধরনের শাস্তি ভোগ করেন। এছাড়া সন্তান জন্মের পর নারীরা সাধারণত কয়েক সপ্তাহ বা মাস কর্মজীবন থেকে বিরত থাকেন যা তাদের বেতন বৃদ্ধির সিদ্ধান্তে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এর ফলে নারীরা তাদের পুরুষ সহকর্মীদের তুলনায় কম বেতন পান, যদিও যোগ্যতা সমান।

পুরুষ ও নারীর মজুরির ব্যবধানের আরেকটি সম্ভাব্য কারণ হিসেবে সাম্প্রতিক গবেষণায় গ্রাহকদের পক্ষপাতিত্বকে তুলে ধরা হয়েছে।[৩১] ২০০৯ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে একজন সাদা পুরুষ কর্মচারীকে গ্রাহকরা ১৯% বেশি সন্তোষজনক মনে করে, যদিও কর্মদক্ষতা, স্ক্রিপ্ট, স্থান ও ভিডিও কোয়ালিটি ছিল একেবারেই এক। এমনকি সাদা পুরুষ চিকিৎসকদের অন্যান্য চিকিৎসকদের তুলনায় বেশি বিশ্বাসযোগ্য ও দক্ষ হিসেবে মূল্যায়ন করা হয়েছে। গবেষকেরা মনে করেন, গ্রাহকদের পক্ষপাতই নিয়োগকর্তাদের সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলছে এবং মজুরি বৈষম্য দূর করতে হলে এই পক্ষপাত দূর করাটাই বেশি জরুরি।নিচে আরও কিছু কারণ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, যা পুরুষ ও নারীর মধ্যে মজুরি বৈষম্যের জন্য দায়ী।

আরেকটি কারণ যা শ্বেতাঙ্গ পুরুষদের উচ্চ বেতনের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে তা হলো তারা যত বেশি চাকরির সন্ধান পান।[৩২] বিশেষ করে যারা ব্যবস্থাপনামূলক পদে আছেন, সেই শ্বেতাঙ্গ পুরুষরা তাদের বন্ধু ও সহকর্মীদের কাছ থেকে সাদা নারীদের ও হিস্পানিক পুরুষ ও নারীদের তুলনায় বেশি চাকরির তথ্য পান। কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষ ও নারীরা প্রায় সমান সংখ্যক চাকরির সন্ধান পান, তবে সেগুলো প্রধানত ব্যবস্থাপনামূলক নয়। যেহেতু অনেক চাকরি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে হয়, তাই শ্বেতাঙ্গ পুরুষরা যেহেতু বেশি চাকরির খবর পান, এতে তাদের উচ্চ বেতন ও মর্যাদাপূর্ণ পদের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।

শিক্ষা

[সম্পাদনা]

নারী ও পুরুষের মধ্যে আরেকটি বহুল আলোচিত পার্থক্য হলো শিক্ষাগত যোগ্যতা। অনেক দিন ধরে উচ্চ শিক্ষা (স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে) ছিল শুধু পুরুষদের একচেটিয়া অধিকার। পরে নারীরা উচ্চ শিক্ষায় প্রবেশের সুযোগ পেলেও অনেক ক্ষেত্রে এখনো সমতা বা সমানতা অর্জিত হয়নি। তবে এক জায়গায় নারীরা অনেক অগ্রগতি করেছে, তা হলো কলেজে ভর্তির হার। ১৯৬০ সালে, মাধ্যমিক পাশ করা নারীদের মধ্যে ৩৭.৯% কলেজে ভর্তি হয়েছিল, যেখানে পুরুষদের মধ্যে সেই হার ছিল ৫৪.০%। ২০০২ সালে নারীদের কলেজে ভর্তির হার পুরুষদের ছাড়িয়ে যায়—মেয়েদের মধ্যে ৬৮.৪% এবং ছেলেদের মধ্যে ৬২.১%।[৪] এখানে নারীরা উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। এখন নারীরা পুরুষদের চেয়ে বেশি ব্যাচেলর ও মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করছে। এমনকি ২০০৯ সালে প্রথমবারের মতো নারীরা পুরুষদের তুলনায় বেশি পিএইচডি অর্জন করে।[৫] নারীরা কিছু ঐতিহ্যগতভাবে মর্যাদাপূর্ণ পেশাতেও প্রবেশ করছে: মেডিকেল স্কুল গ্র্যাজুয়েটদের ৪০% এখন নারী এবং ল’ স্কুল শিক্ষার্থীদের মাঝেও নারীদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য।[২৪]

তবে এই অগ্রগতির পরেও কিছু সমস্যা রয়ে গেছে। যদিও নারীরা এখন কলেজে বেশি ভর্তিচ্ছে এবং বেশি ডিগ্রিও পাচ্ছে সেই ডিগ্রিগুলো অনেক সময় কম মর্যাদাসম্পন্ন বিষয়ে হয় (যেমন: সামাজিক বিজ্ঞান ও মানবিক শাখা, যেখানে পুরুষরা বেশি করে পদার্থবিজ্ঞান বা প্রকৌশল)। এবং একই ডিগ্রি থাকা সত্ত্বেও, নারীরা পুরুষদের তুলনায় কম আয় করে।[৩৩] উদাহরণ হিসেবে চিকিৎসা ক্ষেত্রে নারীরা সাধারণত কম বেতনের বিভাগে বেশি কাজ করে (যেমন: ত্বকবিদ্যা ও পারিবারিক চিকিৎসা)। সবচেয়ে বেশি বেতনের বিশেষায়িত বিভাগ এখনো পুরুষদের দখলে এবং তা দীর্ঘদিন সেভাবেই থাকবে। ২০০৪-৫ সালে রেডিওলজিতে মাত্র ২৮% রেসিডেন্ট নারী ছিল, আর অস্থিচিকিৎসায় সেই হার মাত্র ১০%।[২৪]

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় বিশেষ করে গণিত ও বিজ্ঞানে মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে ভালো করে না। একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় এর একটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে: গণিতে ভয় পাওয়া নারী শিক্ষকরা সেই ভয় তাদের ক্লাসের মেয়েদের মধ্যে ছড়িয়ে দেন, তবে ছেলেদের মধ্যে নয়।[৩৪] ক্লাস শুরুর সময় ছেলেমেয়েদের গণিতভীতি প্রায় সমান ছিল কিন্তু যেসব ক্লাসে নারী শিক্ষকরা নিজেরাই গণিতে ভয় পেতেন, সেখানে মেয়েদের মধ্যে গণিতভীতি বেড়ে যায়, আর ছেলেদের মধ্যে নয়। এই ভীতি মেয়েদের এমন ধারণা দেয় যে ছেলেরা মেয়েদের চেয়ে গণিতে ভালো যদিও বাস্তবে তার কোনো ভিত্তি নেই।[৩৪]

লিঙ্গবৈষম্য

[সম্পাদনা]

লিঙ্গবৈষম্য হলো বৈষম্য যা একজনের সম্ভাব্য লিঙ্গ বা জেন্ডারকে ভিত্তি করে করা হয়। লিঙ্গবৈষম্য বলতে চারটি সূক্ষ্ম ভিন্নমতের বা মনোভাবের দিকে ইঙ্গিত করা যেতে পারে:

  • বিশ্বাস করা যে শুধু দুটি লিঙ্গই আছে।
  • বিশ্বাস করা যে একটি লিঙ্গ অন্যদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ।
  • বিশ্বাস করা যে পুরুষ ও নারী (এবং অন্যান্য জেন্ডার) একে অপরের থেকে ভিন্ন এবং এই পার্থক্য সমাজে, ভাষায়, যৌন অধিকারে ও আইনে শক্তভাবে প্রতিফলিত হওয়া উচিত।
  • এটি পুরুষদের (পুরুষবিদ্বেষ) বা নারীদের (নারীবিদ্বেষ) অথবা ট্রান্সজেন্ডারদের (ট্রান্সফোবিয়া) প্রতি ঘৃণাকেও বোঝাতে পারে।

অনেক মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি এই বিষয়ে একটানা রেখার মতো বিভিন্ন অবস্থানে অবস্থান করে। কেউ কেউ বিশ্বাস করেন নারীদের সব ধরণের চাকরির সমান অধিকার থাকা উচিত। আবার কেউ কেউ মনে করেন, যদিও নারীরা কিছু কিছু বিষয়ে পুরুষদের চেয়ে ভালো, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পুরুষরাই নারীদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। কেউ কেউ আবার মনে করেন সিসজেন্ডার (জন্মলগ্নে নির্ধারিত লিঙ্গ ও জেন্ডার অভিন্ন) ব্যক্তিরা "স্বাভাবিক" এবং ট্রান্সজেন্ডারদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ, আবার অনেকে ট্রান্সজেন্ডারদের বিষয়টি আদৌ চিন্তায় আনেন না।

বাংলাদেশে নারীদের ভোট প্রদান।

লিঙ্গবৈষম্য এসেনশিয়ালিস্ট চিন্তার একটি উদাহরণ। এই চিন্তা অনুযায়ী কোনো ব্যক্তিকে তার যে গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত বলে ধরা হয়, সেই গোষ্ঠীর বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী তাকে বোঝা (এবং প্রায়ই বিচার করা) যায়। এখানে তা হলো লিঙ্গ-পুরুষ, নারী, বা উভলিঙ্গ। এই দৃষ্টিভঙ্গি ধরে নেয়, সব মানুষ অবশ্যই পুরুষ বা নারী শ্রেণিতে পুরোপুরি মিলে যায়, যদিও বাস্তবে তা সত্য নয়। এটি আরও মনে করে যে ব্যক্তিত্বগত বৈশিষ্ট্য পরিবর্তনযোগ্য নয়, কিন্তু সেটাও সঠিক নয়।

নারীদের বিরুদ্ধে লিঙ্গবৈষম্যের একটি ভালো উদাহরণ হলো এমন একটি প্রশ্ন, যা যুক্তরাষ্ট্রে বহুবার জরিপে করা হয়েছে “আপনি কি একজন নারী প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে ভোট দেবেন?” ২০০৫ সালের গ্যালাপ জরিপে দেখা যায় ৯২% আমেরিকান একজন নারী প্রার্থীকে ভোট দিতে রাজি। কিন্তু পরবর্তী গবেষণায়[৩৫] দেখা যায় এই ফলাফল প্রতিক্রিয়া পক্ষপাত এর কারণে হয়েছিল। যখন এমন গবেষণা পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় যেখানে মানুষ আসল অনুভূতি প্রকাশ করতে পারে, তখন দেখা যায় প্রার্থীর নারী হওয়ার কারণে ২৬% মানুষ তাকে ভোট দেবে না।[৩৫] অবাক করার মতো বিষয় হলো, শুধু পুরুষরাই নয়, কিছু নারীও এমন মনে করেন। সংক্ষেপে প্রায় এক-চতুর্থাংশ সিসজেন্ডার আমেরিকান নারীদের বিরুদ্ধে লিঙ্গবৈষম্যমূলক মনোভাব পোষণ করে (ট্রান্সজেন্ডারদের এই জরিপে ধরা হয়নি)।

নারীদের বিরুদ্ধে লিঙ্গবৈষম্য প্রায়ই শভিনিজম নামে পরিচিত। যদিও এই শব্দটি মূলত এমন কোনো উগ্র পক্ষপাত বোঝাতে ব্যবহৃত হয় যেখানে কেউ নিজের গোষ্ঠীকে অত্যধিক ভালো মনে করে এবং অন্য গোষ্ঠীর প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে। কট্টর নারীবাদসমলিঙ্গ এর অনেক রূপকে প্রকৃত অর্থে শভিনিজম বলা যায়। তবে দৈনন্দিন ব্যবহারে শভিনিজম বলতে সাধারণত বোঝায় পুরুষ শভিনিজম

নারীরা পুরুষদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ এই বিশ্বাসটিও লিঙ্গবৈষম্য। তবে রিভার্স সেক্সিজম নিয়ে আলোচনা সাম্প্রতিক সময়েই শুরু হয়েছে। অনেক দেশেই যৌন বৈষম্য নিষিদ্ধ হলেও প্রায় সব দেশেই কিছু না কিছু আইনি সুবিধা, বিশেষাধিকার বা দায়িত্ব কোনো একটি নির্দিষ্ট লিঙ্গের জন্য রাখা হয়েছে।

সাম্প্রতিক গবেষণা গণমাধ্যমে লিঙ্গবৈষম্যের ব্যাপকতা তুলে ধরেছে।[৩৬] ম্যাসনার প্রমুখের[৩৬] গবেষণায় দেখা যায়, ১৯৭২ সালে টাইটেল নাইন পাস হওয়ার পর নারীদের ক্রীড়া অংশগ্রহণ বেড়েছে কিন্তু বড় বড় টিভি চ্যানেলগুলোতে ক্রীড়া প্রতিবেদনে এখনো পুরুষদেরই প্রাধান্য বেশি। ১৯৭১ সালে মাত্র ২,৯৪,০০০ ছাত্রী আন্তঃস্কুল ক্রীড়ায় অংশ নেয় সেখানে ছেলেদের সংখ্যা ছিল ৩.৭ মিলিয়ন। ১৯৮৯ সালে এই অনুপাত বদলে ১.৮ মিলিয়ন মেয়ে ও ৩.৪ মিলিয়ন ছেলে খেলাধুলায় অংশ নেয়। ২০০৪ সালে তা আরও বেড়ে দাঁড়ায় ২.৯ মিলিয়ন মেয়ে ও ৪.০ মিলিয়ন ছেলে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়েও পরিবর্তন হয়েছে। ১৯৭২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের একটি গড় বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীদের জন্য মাত্র দুটি খেলাধুলার দল ছিল। ২০০০ থেকে ২০০৪ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ৬৩১টি নতুন নারী দলের সংযোজন করেছে।

তবুও মেয়েদের খেলাধুলায় অংশগ্রহণ বাড়লেও প্রধান টিভি চ্যানেলের কভারেজে বিশেষ পরিবর্তন আসেনি। ১৯৮৯ সালে মেয়েরা টিভিতে মাত্র ৫% সময় পায়; ১৯৯৯ সালে তা বেড়ে ৯% হলেও ২০০৫ সালে আবার কমে ৬% এ নেমে আসে। স্পোর্টস হাইলাইট অনুষ্ঠানগুলো (যেমন: ইএসপিএনের স্পোর্টসসেন্টার মেয়েদের মাত্র ২-৩% সময় দেয়। তাছাড়া, যে অল্প সময় মেয়েদের দেওয়া হয়, তা অনেক সময় “বিনোদনমূলক” বা হাস্যকর করে দেখানো হয় যেমন: ১৯৯৯ সালে নারীদের নগ্ন বানজি জাম্প। তদুপরি নারীদের খেলাধুলার কভারেজ অনেক সময় যৌনীকৃত হয়, যেখানে কেবল “আকর্ষণীয়” বলে বিবেচিত খেলোয়াড়দেরই দেখানো হয় (যেমন: আনা কুর্নিকোভামারিয়া শারাপোভা)। ইচ্ছাকৃত হোক বা অনিচ্ছাকৃত, এভাবে নারীদের খেলাধুলা উপস্থাপন স্পষ্টভাবে লিঙ্গবৈষম্যেরই একটি উদাহরণ।

অপরাহ উইনফ্রে বিশ্বের অন্যতম ধনী নারী, যিনি টিকামাইয়ারের গবেষণার ব্যতিক্রম।

নারী ও পুরুষের মধ্যে ধনসম্পদের বৈষম্যও লিঙ্গবৈষম্যের আরেকটি উদাহরণ।[৩৭] টিকামাইয়ার ম্যাগাজিন, বই ও আয়কর রিপোর্ট বিশ্লেষণ করে দেখেছেন:

  • ধনী নারীর সংখ্যা ধনী পুরুষদের তুলনায় অনেক কম।
  • সম্পদের উৎস আলাদা কিনা তা স্পষ্ট নয়, তবে নারীরা সাধারণত স্বামীদের কাছ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে সম্পদ পান।
  • নারীদের সম্পদ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতিও আলাদা তারা সাধারণত নিরাপদ বিনিয়োগ পছন্দ করে (যেমন: ট্রাস্ট), যেখানে পুরুষরা ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ (যেমন: শেয়ার ও বন্ড) করে।
  • নারীরা তাদের সম্পদের ওপর পুরুষদের তুলনায় কম নিয়ন্ত্রণ রাখে এবং পুরুষদের মতো সক্রিয়ভাবে তা বৃদ্ধি করার সুযোগও কম পায় যেমন কোনো কোম্পানির প্রধান হিসেবে নিজের সম্পদ বাড়ানোর সুযোগ।

এই বৈষম্যের কারণ হিসেবে লেখক ঐতিহাসিক লিঙ্গ বৈষম্যকে দায়ী করেছেন। ১৯শ শতাব্দী পর্যন্ত অধিকাংশ নারী সম্পত্তির মালিক হতে পারতেন না এবং বাড়ির বাইরে বেতনভুক্ত কাজেও তাদের অংশগ্রহণ সীমিত ছিল। তবে আজকের দিনে কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ ও বড় কোম্পানির উচ্চপদে তাদের উপস্থিতি বাড়ার কারণে ভবিষ্যতে এই সম্পদ বৈষম্য কিছুটা হলেও সমতা পেতে পারে।

পুরুষ ও নারীদের আয়ের মধ্যে যেসব পার্থক্যের কথা উপরে বলা হয়েছে, তার একটি অংশ বৈষম্যের কারণে। তবে আরেকটি কারণ হলো কিছু নারী (এমনকি উচ্চশিক্ষিত নারীরাও) শ্রমবাজার ত্যাগ করে ছোট সন্তানদের সঙ্গে বাড়িতে থাকার সিদ্ধান্ত নেন। শ্রমবাজার ত্যাগ করলে আয়ে দ্বিগুণ প্রভাব পড়ে (১) তাৎক্ষণিক আয় হারাতে হয় এবং (২) অভিজ্ঞতা ও চাকরির মেয়াদ কমে যায়, যার ফলে ভবিষ্যতের আয়ের সম্ভাবনাও হ্রাস পায়। এছাড়াও, যদিও নারীরা অনেক উচ্চ বেতনের পেশায় (যেমন: চিকিৎসা, আইন) গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে পৌঁছেছেন, ২০০০ সালের পর থেকে এসব ক্ষেত্রে নারীদের প্রবেশের হার কমে গেছে।[২৪] মার্কিন সংস্কৃতির লিঙ্গবৈষম্য প্রতিফলিত হয় একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় যেখানে দেখা গেছে নারীরা সফল হলে তাদের পুরুষ সঙ্গীরা হুমকির মুখে পড়েছেন বলে মনে করেন। বিপরীতে পুরুষ সঙ্গীরা সফল হলে নারীরা সম্পর্ক নিয়ে আরও সন্তুষ্ট বোধ করেন।[৩৮]

কিছু প্রতিষ্ঠানভুক্ত নারীরা লিঙ্গ বৈষম্যের অভিযোগে তাদের নিয়োগকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন।[২৪] উদাহরণস্বরূপ ওয়ালমার্ট এর নারী কর্মচারীরা প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে লিঙ্গ বৈষম্যের অভিযোগ এনে মামলা করেছেন। অভিযোগকারীদের যুক্তির একটি অংশ হলো যদিও স্টোরভিত্তিক বিভাগ প্রধানদের প্রায় ৭৫% নারী, তবুও যেসব স্টোর ম্যানেজার বছরে প্রায় $১০০,০০০ আয় করেন তাদের মধ্যে মাত্র ২০% নারী। এই ধরনের মামলায় বৈষম্যের প্রমাণ দেয়া কঠিন। অনেক গবেষক মনে করেন এর পেছনে আরও কিছু মূল কারণ থাকতে পারে যেমন: লিঙ্গভিত্তিক সামাজিকীকরণে পার্থক্য (যেখানে পুরুষরা পরিবারের মূল উপার্জনকারী হিসেবে নিজেদের দায়িত্ব অনুভব করেন ফলে চাকরির প্রতি বেশি প্রতিশ্রুতিশীল হন) এবং সরকার কর্তৃক সমান বেতন ও সুযোগের ওপর জোর দেয়া।[২৪]

সহিংসতা

[সম্পাদনা]

লিঙ্গ বৈষম্য বিভিন্ন রূপ নিতে পারে নারীদের কলেজে পড়া থেকে বিরত রাখা কিংবা পুরুষদের তুলনায় নারীদের কম পারিশ্রমিক দেয়া তার মধ্যে অন্যতম। আরেকটি সাধারণ লিঙ্গ বৈষম্যের রূপ হলো সহিংসতা বিশেষ করে নারীদের ও ট্রান্স মানুষদের প্রতি সহিংসতা। ২০০২ সালে নারীরা ছিল ৯ লক্ষাধিক সহিংস অপরাধ ও ২ লক্ষাধিক ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতনের শিকার। [৬] পুরুষরা যদিও সাধারণত সহিংস অপরাধের শিকার হন বেশি তবে ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়ার হার তাদের অনেক কম। একইভাবে সাম্প্রতিক প্রতিবেদনগুলো দেখায় ট্রান্স মানুষরা যেকোনো সামাজিক গোষ্ঠীর তুলনায় বেশি লিঙ্গ সম্পর্কিত সহিংসতার শিকার হন।[]

লিঙ্গ পার্থক্য বিষয়ক তত্ত্ব

[সম্পাদনা]

লিঙ্গ সামাজিকীকরণ

[সম্পাদনা]

সমাজতত্ত্ববিদ ও অন্যান্য সমাজবিজ্ঞানীরা সাধারণত লিঙ্গের মধ্যে যে পার্থক্যগুলো দেখা যায়, সেগুলোকে সামাজিকীকরণের ফল হিসেবে ব্যাখ্যা করেন (এমনকি শারীরিক পার্থক্যগুলোও বিদ্যমান লিঙ্গ সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার প্রতিফলন)। সামাজিকীকরণ অধ্যায়ে যেমন আলোচনা করা হয়েছে সামাজিকীকরণ হচ্ছে ভবিষ্যৎ গোষ্ঠী সদস্যদের মধ্যে আচরণ, মূল্যবোধ, বিশ্বাস ও নিয়মাবলী স্থানান্তরের একটা প্রক্রিয়া। লিঙ্গ সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে মানুষ যে গোষ্ঠীগুলোতে যুক্ত হয় তা হলো: "সিসজেন্ডার নারী ও পুরুষ" এবং "ট্রান্সজেন্ডার মানুষ" ।অর্থাৎ লিঙ্গ সামাজিকীকরণ হলো ছেলে, মেয়ে ও আন্তঃলিঙ্গ শিশুদের লিঙ্গভিত্তিক আচরণ, মূল্যবোধ, নিয়ম ও বিশ্বাস শেখানোর প্রক্রিয়া।

এই প্রস্তুতি শুরু হয় শিশুর জন্মের আগেই। গর্ভবতী মায়ের কাছে মানুষ প্রথমেই যে প্রশ্নটি করে তা হলো "শিশুটির লিঙ্গ কী?" এটি সামাজিক শ্রেণিবিন্যাস প্রক্রিয়ার সূচনা যা সারাজীবন চলতে থাকে। শিশুর লিঙ্গ বুঝে তার জন্য ঘরের রং নির্বাচন করা হয় (যেমন: ছেলের জন্য নীল, মেয়ের জন্য গোলাপি)। উপরে বর্ণিত লিঙ্গভিত্তিক অনেক পার্থক্যের পেছনে সামাজিকীকরণের ভূমিকা রয়েছে যদিও এখনো অস্পষ্ট জেনেটিক বা জীববৈজ্ঞানিক প্রভাবও থাকতে পারে। মনে রাখা জরুরি যে, লিঙ্গভিত্তিক পার্থক্য সামাজিক ও জীববৈজ্ঞানিক উভয় প্রভাবের সম্মিলিত ফল কখনো একটি বেশি প্রভাব ফেলে আবার কখনো অন্যটি।

একটি উদাহরণ হলো প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে লিঙ্গ সামাজিকীকরণ। যেসব শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকদের লিঙ্গভিত্তিক পার্থক্যের ওপর জোর দিতে বলা হয়েছিল, সেসব শ্রেণির শিশুরা ছেলেমেয়েদের জন্য আলাদা কার্যকলাপ ভাবার প্রবণতা দেখিয়েছে। কিন্তু যেসব শ্রেণিতে এই পার্থক্যে জোর দেয়া হয়নি, সেখানে এই প্রবণতা দেখা যায়নি।[৩৯]

এই গবেষণাটি দেখায়, আমাদের চারপাশের সূক্ষ্ম ইঙ্গিতগুলো লিঙ্গ সামাজিকীকরণে গভীর প্রভাব ফেলে।

গবেষণায়[৪০] দেখা যায়, কৈশোরে প্রথম কাজের সময় থেকেই লিঙ্গভিত্তিক পার্থক্য শুরু হয়:

  • প্রথম কাজগুলো লিঙ্গ অনুযায়ী বিভক্ত থাকে
  • মেয়েরা প্রতি সপ্তাহে ছেলেদের চেয়ে কম সময় কাজ করে
  • মেয়েরা প্রতি ঘণ্টায় কম বেতন পায়
  • ছেলেদের আধিপত্যে থাকা কাজে ঘণ্টাপ্রতি মজুরি বেশি
  • মেয়েদের উপর বাড়ির কাজের দায়িত্ব বেশি পড়ে[৪১]

গবেষকেরা মনে করেন, এসব পার্থক্য লিঙ্গ সামাজিকীকরণ ও ছেলে-মেয়েদের ভিন্ন সুযোগ পাওয়ার ফল।

আরেকটি গবেষণায় লিঙ্গভিত্তিক আচরণগত পার্থক্য দেখা যায় আত্ম-মূল্যায়নে।[৪২] জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৫ জন ছাত্রছাত্রী (যার মধ্যে ২৪ জন নারী) নিজেদের সৌন্দর্য নিয়ে একটি প্রশ্নাবলী পূরণ করেন। এরপর একটি প্যানেল তাদের বাস্তবিক সৌন্দর্য মূল্যায়ন করে। গবেষণায় দেখা যায় নারীরা তাদের সৌন্দর্য মূল্যায়নে অনেকটা সঠিক থাকেন কিন্তু পুরুষরা হন তুলনামূলকভাবে কম সঠিক। এটা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে গবেষকেরা বলেন, নারীদের সৌন্দর্যকে গুরুত্ব দেয়া হয় বেশি যা তারা সামাজিকীকরণের মাধ্যমে শিখে থাকেন। নারীত্বে সৌন্দর্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। এটি স্পষ্ট দেখা যায় সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য কসমেটিক সার্জারির হারে। ২০০৫ সালে ১ কোটি ১৫ লাখ কসমেটিক সার্জারির মধ্যে ৮৫% থেকে ৯০% ছিল নারীদের দ্বারা করা।[৪৩][৪৩]

কাঠামোগত কার্যকরীতাবাদ

[সম্পাদনা]

এই দৃষ্টিভঙ্গিটি ১৯৪০ ও ১৯৫০-এর দশকে গঠিত হয়েছিল।[৪৪] এতে লিঙ্গগুলিকে পরিপূরক হিসেবে দেখা হয় নারীরা গৃহস্থালির কাজ করেন এবং পুরুষেরা পরিবারকে আর্থিকভাবে সহায়তা করেন। বর্তমানে অনেক গবেষণা, বিশেষ করে ১৯৬০ ও ১৯৭০ এর দশকের নারীবাদী আন্দোলনের পর এই দৃষ্টিভঙ্গির সমালোচনা করে থাকে। কারণ এটি বিদ্যমান অবস্থা সমর্থন করে এবং নারীদের প্রতি নিপীড়নকে বৈধতা দেয়। আসলে এই দৃষ্টিভঙ্গি, বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞান ও সমাজজীববিজ্ঞানের যৌথ প্রভাবে কেবল তখনই বৈজ্ঞানিক সমর্থন পেয়েছে যখন লিঙ্গ বৈষম্যকে স্বাভাবিক ও গ্রহণযোগ্য বলে ধরে নেয়া হয়েছে। এটি সাধারণত নারীবিরোধী সামাজিক আন্দোলন, ধর্মীয় সংগঠন এবং পুরুষ/নারী কিংবা XX/XY সংক্রান্ত মিথ ছড়ানো বৈজ্ঞানিক গোষ্ঠীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ।[]

সংঘাত তত্ত্ব

[সম্পাদনা]

কাঠামোগত কার্যকরীতাবাদ যেভাবে বিদ্যমান অবস্থাকে সমর্থন করে, তার বিরোধিতায় সংঘাত তত্ত্বজ বলা হয় লিঙ্গের বিষয়টি আসলে ক্ষমতার সম্পর্কের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা উচিত। পুরুষের নারীর ওপর আধিপত্য এবং সিসজেন্ডারের ট্রান্সজেন্ডারদের ওপর আধিপত্য একটি পরিকল্পিত প্রচেষ্টা,ক্ষমতা ও সুবিধা রক্ষা করার জন্য। এই দৃষ্টিভঙ্গি আদর্শগতভাবে ক্ষমতার ভারসাম্য আনার পক্ষে যেখানে নারী-পুরুষ উভয়ের সমান অধিকার নিশ্চিত করা হয়।

প্রতীকী পারস্পরিক ক্রিয়া

[সম্পাদনা]

সংঘাত তত্ত্বের সম্প্রসারণ হিসেবে, প্রতীকী পারস্পরিক ক্রিয়াতত্ত্ব সময় ও স্থানের পরিবর্তনে লিঙ্গের বিভিন্ন অর্থ ও গঠনের বিশ্লেষণ কর হয়। এই গবেষণায় দেখা যায় নারীবাদী আন্দোলনের সময়ে "জৈবিক বিশ্বাস" কিভাবে পরিবর্তিত হয়েছে এবং কিভাবে লিঙ্গ সামাজিকীকরণ বাস্তবে ঘটে। এই দৃষ্টিভঙ্গি লিঙ্গ সম্পর্কিত বিশ্বাস ও আচরণের উৎস খুঁজে বের করতে চায় এবং এর পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক শক্তির গতিপ্রকৃতির সম্পর্ক ব্যাখ্যা করে।

সংগঠনতান্ত্রিক কার্যকরিতাবাদ

[সম্পাদনা]

এই দৃষ্টিভঙ্গিটি ১৯৪০ ও ১৯৫০ এর দশকে বিকশিত হয়েছিল,[৪৪] যেখানে লিঙ্গকে পরিপূরক হিসেবে দেখা হয় — নারীরা ঘরের দায়িত্ব নেন, আর পুরুষেরা পরিবারের জীবিকা নির্বাহ করেন। আধুনিক গবেষণাগুলোর একটি বড় অংশ, বিশেষত ১৯৬০ ও ১৯৭০ এর দশকে নারীবাদী আন্দোলনের পর, এই দৃষ্টিভঙ্গিকে সমালোচনা করেছে, কারণ এটি প্রচলিত সামাজিক কাঠামোকে সমর্থন করে এবং নারীদের দমনকে বৈধতা দেয়। প্রকৃতপক্ষে, এই দৃষ্টিভঙ্গি — বিবর্তনমূলক মনোবিজ্ঞান এবং সমাজজীববৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণের সাথে মিলিত হয়ে — এখন পর্যন্ত কেবল তখনই পরীক্ষামূলক প্রমাণ পেয়েছে যখন লিঙ্গ বৈষম্যকে প্রাকৃতিক বা গ্রহণযোগ্য অবস্থা হিসেবে ধরা হয়েছে। এই দৃষ্টিভঙ্গি সাধারণত নারীবিরোধী সামাজিক আন্দোলন, ধর্মীয় সংগঠন, এবং "নারী/পুরুষ" বা "XX/XY" বায়োলজিকাল মিথকে সমর্থনকারী বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায়ের মধ্যেই বৈধতা পেয়েছে।[]

সংঘাত তত্ত্ব

[সম্পাদনা]

প্রচলিত সামাজিক কাঠামোকে সমর্থনকারী কার্যকরিতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গির বিপরীতে সামাজিক সংঘাত তত্ত্ব বলছে যে,লিঙ্গকে সবচেয়ে ভালোভাবে বোঝা যায় ক্ষমতা সম্পর্কের মাধ্যমে। পুরুষদের নারীদের ওপর আধিপত্য এবং সিসজেন্ডারদের ট্রান্সজেন্ডারদের ওপর আধিপত্যকে দেখা হয় ক্ষমতা ও সুবিধা ধরে রাখার প্রচেষ্টা হিসেবে, যার ফলে নারীরা বঞ্চিত হয়। এই দৃষ্টিভঙ্গি আদর্শগত অর্থাৎ এটি সামাজিক ক্ষমতার কাঠামোতে পরিবর্তন আনার প্রস্তাব করে এবং লিঙ্গসমূহের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার পক্ষে অবস্থান নেয়।

প্রতীকী পারস্পরিক ক্রিয়া

[সম্পাদনা]

সংঘাত তত্ত্বের সম্প্রসারণ হিসেবে প্রতীকী পারস্পরিক ক্রিয়া তত্ত্বসমূহ সময় ও স্থানের প্রেক্ষিতে লিঙ্গের বিভিন্ন অর্থ ও নির্মাণ বিশ্লেষণ করে। এভাবে এই তত্ত্বের গবেষকরা দেখিয়েছেন কীভাবে নারীবাদী আন্দোলনের কার্যক্রমের সাথে সাথে লিঙ্গ নিয়ে প্রচলিত "জৈবিক বিশ্বাস" পরিবর্তিত হয়েছে এবং কীভাবে লিঙ্গ সমাজায়ন ঘটে তার প্রক্রিয়াগুলো কী। এই দৃষ্টিভঙ্গি লিঙ্গসংক্রান্ত বিশ্বাস ও আচরণের উৎস খুঁজে বের করার চেষ্টা করে এবং বিশেষভাবে লক্ষ্য করে কীভাবে এসব অর্থ ও মানে ক্ষমতার পরিবর্তন ও সামাজিক নিয়মের পরিবর্তনের সাথে সাথে রূপান্তরিত হয়।

নারীবাদী তত্ত্ব

[সম্পাদনা]

সংঘাত তত্ত্ব এবং প্রতীকী পারস্পরিক ক্রিয়া তত্ত্বের বিভিন্ন দিক একত্রিত করে, নারীবাদী তত্ত্ব প্রচলিত লিঙ্গ কাঠামো, সংস্কৃতি, বিশ্বাস, ভাষা, পরিচয় এবং আত্মপ্রকাশের প্রক্রিয়ায় নিহিত ক্ষমতার শ্রেণিবিন্যাসকে বিশ্লেষণ ও সমালোচনা করে। সংঘাত তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে, উদাহরণস্বরূপ নারীবাদী তত্ত্ব বিশ্লেষণ করে কিভাবে পিতৃতান্ত্রিক কাঠামো, সংস্কৃতি ও সামাজিক সংগঠনের প্রক্রিয়ায় নারীরা এবং অন্যান্য লিঙ্গ সংখ্যালঘুরা পুরুষ এবং সিসজেন্ডার আদর্শের তুলনায় সুবিধাবঞ্চিত অবস্থায় থাকে। একইভাবে নারীবাদী তত্ত্ব প্রতীকী পারস্পরিক ক্রিয়া তত্ত্বের আত্মপরিচয় ও গোষ্ঠীগত ধারণার উপর নির্ভর করে বোঝার চেষ্টা করে কিভাবে মানুষ "নারীত্ব" ও/বা "পুরুষত্ব" এর ধারণা শিখে উপস্থাপন করে ব্যাখ্যা করে এবং বিশ্বাস করে। এই প্রক্রিয়াগুলো কিভাবে সামাজিক অসমতা তৈরি করে, চ্যালেঞ্জ করে বজায় রাখে এবং/বা পুনরুৎপাদন করে তাও বিশ্লেষণ করা হয়। এ ধরণের বিশ্লেষণের কেন্দ্রে থাকে অতীত ও বর্তমানের লিঙ্গ সম্পর্কের বিশ্লেষণ, যেগুলো পিতৃতন্ত্র এবং অন্তঃসংযোগ দ্বারা প্রভাবিত।

পিতৃতন্ত্র

[সম্পাদনা]

নারীবাদী তত্ত্ব পিতৃতন্ত্রকে একটি সামাজিক ব্যবস্থা হিসেবে ব্যাখ্যা করে যা তিনটি প্রধান বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে: (১) পুরুষপ্রধানতা (যেমন ক্ষমতার প্রধান অবস্থানগুলো পুরুষদের জন্য নির্ধারিত বা উৎসাহিত করা হয়) (২) পুরুষকেন্দ্রিকতা (যেমন সমাজে যা মূল্যবান বা স্বাভাবিক ধরা হয় তা পুরুষ ও পৌরুষের সাথে সম্পর্কযুক্ত) এবং (৩) পুরুষকেন্দ্রিক মনোযোগ (যেমন সংস্কৃতির কেন্দ্রবিন্দু, তা গণমাধ্যম, বিজ্ঞান, ধর্ম বা রাজনীতি যা-ই হোক না কেন, পুরুষ ও পুরুষদের কর্মকাণ্ডকে ঘিরেই গঠিত)। এর মানে এই নয় যে পিতৃতান্ত্রিক সমাজে সব পুরুষই সারাজীবন ক্ষমতাবান হবেন বা নারীদের ও ট্রান্স ব্যক্তিদের উপর প্রভাব বিস্তার করবেন। বরং এর মানে হলো সামাজিক ব্যবস্থার কেন্দ্রীয় মনোযোগ পুরুষ ও পুরুষ হিসেবে দেখা হয় এমন ব্যক্তিদের দিকেই থাকে, এবং সকল পুরুষ তাঁদের উদ্দেশ্য বা সচেতনতা যাই হোক না কেন সামাজিক প্রতিষ্ঠানে এক ধরনের অযাচিত সুবিধা পান।

অন্তঃসংযোগ

[সম্পাদনা]

নারীবাদী তত্ত্ব, বিশেষ করে কৃষ্ণাঙ্গ নারীবাদী চিন্তাধারার ঐতিহাসিক ও আধুনিক কাজের উপর ভিত্তি করে, অন্তঃসংযোগকে সংজ্ঞায়িত করে একাধিক পরস্পর সংযুক্ত নিপীড়ন ও সুবিধার ব্যবস্থার আন্তঃসম্পর্ক ও ছেদ হিসেবে। এই দৃষ্টিভঙ্গির কেন্দ্রে রয়েছে এই উপলব্ধি যে জাতি, শ্রেণি, লিঙ্গ, যৌনতা ও বয়সের মতো বৈষম্যের ব্যবস্থাগুলো পরস্পরের উপর নির্ভর করে এবং একে অপরকে শক্তিশালী করে তোলে। ফলে সামাজিক ন্যায়বিচার অর্জনের জন্য প্রয়োজন এই সব ব্যবস্থার ভিত্তি ও আন্তঃসম্পর্ক বিশ্লেষণ করা যা অতীত ও বর্তমানের বৈষম্যকে সম্ভব করেছে এবং যেগুলো ভবিষ্যতের সামাজিক, রাজনৈতিক, বৈজ্ঞানিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক জ্ঞান ও ক্ষমতার গঠনে প্রভাব ফেলতে পারে।

গবেষণার উদাহরণ

[সম্পাদনা]

লিঙ্গ কীভাবে প্রতিদিনের জীবনে প্রভাব ফেলে, তার একটি শক্তিশালী উদাহরণ পাওয়া যায় ক্রিস্টেন শিল্ট এর সম্প্রতি প্রকাশিত গবেষণায়, যেখানে তিনি কর্মক্ষেত্রে মহিলা থেকে পুরুষ রূপান্তরিত ট্রান্সসেক্সুয়ালদের নিয়ে গবেষণা করেছেন।[৪৫] শিল্ট, রূপান্তরের পর এফএমটি ট্রান্সসেক্সুয়ালদের সাক্ষাৎকার নেন এবং দেখতে পান যে, পুরুষ পরিচয় গ্রহণের পর তাদের দুই-তৃতীয়াংশ কর্মক্ষেত্রে বেশি সুবিধা পান। তারা কম কাজ করেও বেশি পুরস্কার পেতেন। তাদের মতামতের গ্রহণযোগ্যতা বেড়ে যায় এবং কাজের জন্য তারা বেশি স্বীকৃতি পান। যারা এই সুবিধা পাননি, তারা সাধারণত শারীরিকভাবে ছোট বা সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। সংক্ষেপে, কর্মক্ষেত্রে শ্বেতাঙ্গ পুরুষরা বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত হন এমনকি যদি সেই "শ্বেতাঙ্গ পুরুষ" একসময় শ্বেতাঙ্গ নারী হয়ে থাকেন। শিক্ষণীয় দিক হলো: মানুষের দেখা বা উপলব্ধি করা লিঙ্গ প্রতিদিনের সামাজিক আচরণে অনেক বড় প্রভাব ফেলে।

আরও একটি আকর্ষণীয় উদাহরণ পাওয়া যায় জে. এডওয়ার্ড সুমেরাউ এর গবেষণায়, যেখানে তিনি একটি সমকামী-বান্ধব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের প্রেক্ষাপটে গে খ্রিস্টান পুরুষদের মধ্যে পুরুষালী আত্মপরিচয় নির্মাণের প্রচেষ্টা পর্যবেক্ষণ করেছেন।[৪৬] সুমেরাউ তিন বছরের বেশি সময় ধরে দেখেছেন কীভাবে এই গে খ্রিস্টান পুরুষেরা নিজেদের "পুরুষ" হিসেবে উপস্থাপন করেছেন এবং ঐতিহ্যগত পৌরুষের সঙ্গে যুক্ত বিশেষাধিকার দাবি করেছেন। তারা "পুরুষরা উপার্জন করে", "নেতৃত্ব দেয়", "সংবেদনশীলতা দমন করে" এবং "সম্পর্কে কর্তৃত্ব করে" এই ধরণের প্রচলিত বিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের "পুরুষালী" পরিচয় প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছেন। তারা নিজেরা এবং অন্যদের বোঝাতে চেয়েছেন যে তাঁদের গির্জা ও সম্প্রদায়ে নেতৃত্ব দেওয়ার অধিকার রয়েছে। শিক্ষণীয় দিক হলো: সমাজে প্রচলিত লিঙ্গসংক্রান্ত বিশ্বাস ও মানসিকতা থেকেই বিভিন্ন ধরনের "পুরুষত্ব" নির্মাণ হতে পারে।

অতিরিক্ত পঠনের জন্য

[সম্পাদনা]

The End of Gender? - এই নিবন্ধে আলোচনা করা হয়েছে লিঙ্গ অন্তত আংশিকভাবে কিভাবে সামাজিকভাবে নির্মিত ধারণা হতে পারে।

Butler, Judith. 1999. Gender Trouble: Feminism and the Subversion of Identity. New York: Routledge.

Chodorow, Nancy. 1978. The Reproduction of Mothering. Berkeley, CA: University of California Press

Connell, R.W. 1995. Masculinities. Los Angeles, CA: University of California Press.

Connell, R.W. 1987. Gender & Power. Stanford, CA: Stanford University Press. de Beauvoir, Simone. 1949. The Second Sex.

hooks, bell. 1984. Feminist Theory: From Margin to Center. আইএসবিএন 0-89608-614-3

Lorber, Judith. 1994. Paradoxes of Gender. New Haven, CT: Yale University Press

Schilt, Kristen and Laurel Westbrook. 2009. “Doing Gender, Doing Heteronормativity:
“Gender Normals,” Transgender People, and the Social Maintenance of Heterosexuality.” Gender & Society 23: 440-464.

Ezzell, Matthew B. 2009. “Barbie Dolls on the Pitch: Identity Work, Defensive Othering, and Inequality in Women’s Rugby.” Social Problems 56: 111-131.

Hollander, Jocelyn A. 2001. Vulnerability and Dangerousness: The Construction of Gender through Conversation about Violence. Gender &Society 15(1): 83-109.

Berns, Nancy. 2001. Degendering the Problem and Gendering the Blame: Political Discourse on Women and Violence. Gender & Society 15(2): 262-281.

Kane, Emily W. 2006. ‘No Way My Boys Are Going to Be Like That!’: Parents’ Responses to Children’s Gender Nonconformity. Gender & Society. Vol. 20, No. 2: 149 – 176.

Padavic, Irene and Jonniann Butterfield. 2011. Mothers, Fathers, and “Mathers”: Negotiating a Lesbian Co-parental Identity. Gender & Society. Vol. 25, No. 2: 176 – 196.

Simon, Robin W. and Leda E. Nath. 2004. “Gender and Emotion in the U.S.: Do Men and Women Differ in Self-Reports of Feelings and Expressive Behavior?” American Journal of Sociology 109: 1137-1176.

Cahill, Spencer. 1986. “Language Practices and Self Definition: The Case of Gender Identity.” Sociological Quarterly 15: 295-311.

Janice McCabe. 2005. “What’s in a Label? The Relationship between Feminist Self-Identification and ‘Feminist’ Attitudes among U.S. Women and Men.” Gender & Society 19: 480-505.

West, Candace and Donald Zimmerman. 1987. “Doing Gender.” Gender & Society 1: 125-151.

আলোচনার প্রশ্ন

[সম্পাদনা]
  • কয়টি লিঙ্গ রয়েছে?
  • লিঙ্গ কি বাস্তবে আছে?
  • কারও লিঙ্গ নির্ধারণ কি আসলেই সম্ভব?
  • জৈবিক লিঙ্গ এবং সামাজিক লিঙ্গের পার্থক্য কী?
  • মানুষ কীভাবে "লিঙ্গ" পালন করে?

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Kessler, S. J. (1998) Lessons From the Intersexed. Piscataway, NJ: Rutgers University Press.
  2. ২.০ ২.১ ২.২ Schilt, Kristen and Laurel Westbrook. 2009. “Doing Gender, Doing Heteronormativity: “Gender Normals,” Transgender People, and the Social Maintenance of Heterosexuality.” Gender & Society 23: 440-464.
  3. ৩.০ ৩.১ West, Candace and Don H. Zimmerman. 1987. Doing Gender. Gender & Society 1: 125-151.
  4. ৪.০ ৪.১ ৪.২ ৪.৩ J. Edward Sumerau, Douglas Schrock, and Teri Jo Reese. 2013. “Transsexuals’ Gendered Self- Presentations.” Pp. 245-160 in The Drama of Social Life: A Dramaturgical Handbook, edited by Charles Edgley. Ashgate, UK.
  5. ৫.০ ৫.১ ৫.২ Butler, Judith. 1999. Gender Trouble: Feminism and the Subversion of Identity. Routledge.
  6. Katrina Roen. 2008. ““But we have to do Something”: Surgical Correction of Atypical Genitalia.” Body and Society 14: 47 - 66.
  7. Halberstam, Judith M. 2005. In a Queer Time and Place: Transgender Bodies, Subcultural Lives. New York, NY: NYU Press.
  8. Haraway, Donna J. 1991. Simians, Cyborgs, and Women. NY: Routledge.
  9. Billings, Dwight B. and Thomas Urban. 1982. “The Socio-Medical Construction of Transsexualism: An Interpretation and Critique.” Social Problems 29: 266-282.
  10. Ehrenreich, Barbara. 1999. "The Real Truth about the Female Body." Time. Vol. 153, No. 9, pages 56-65.
  11. Buss, David M. 2003. The Evolution Of Desire - Revised Edition 4. Basic Books.
  12. Ebben, William P. and Randall Jensen. 1998. "Strength Training for Women: myths that block opportunity". The Physician and Sports Medicine 26(5): np.
  13. U.S. National Center for Health Statistics
  14. Williams, David R. 2003. “The Health of Men: Structured Inequalities and Opportunities.” Am J Public Health 93:724-731.
  15. Plant TM, Lee PA, eds. The Neurobiology of Puberty. Bristol: Society for Endocrinology, 1995.
  16. Cantor CH. Suicide in the Western World. In: Hawton K, van Heering K, eds. International handbook of suicide and attempted suicide. Chichester: John Wiley & Sons, 2000: 9-28.
  17. ১৭.০ ১৭.১ Myers, David G. 1996. Social Psychology (Fifth Edition). McGraw Hill. আইএসবিএন 0071145087
  18. Steinberg, Laurence D. Adolescence. Boston: McGraw-Hill Higher Education, 2008. Print.
  19. Diagnosed Attention Deficit Hyperactivity Disorder and Learning Disability: United States, 2004–2006
  20. Gabriel, S. & Gardner, W.L. (1999). Are there "his" and "hers" types of interdependence? The implications of gender differences in collective versus relational interdependence for affect, behavior, and cognition. Journal of Personality and Social Psychology, 77, 642-655.
  21. Young, Meredith E., Madison Mizzau, Nga T. Mai, Abby Sirisegaram, Margo Wilson. 2009. What you eat depends on your sex and eating companions. Appetite. Available online 29 July 2009
  22. Bose, Christine E. and Peter H. Rossi. (1983). Gender and Jobs: Prestige Standings of Occupations as Affected by Gender. American Sociological Review, Vol. 48, No. 3, pp. 316-330.
  23. ২৩.০ ২৩.১ ২৩.২ Penner, Andrew M., ... Nature Human Behaviour.
  24. ২৪.০ ২৪.১ ২৪.২ ২৪.৩ ২৪.৪ ২৪.৫ ২৪.৬ ২৪.৭ ২৪.৮ Leonhardt, D. (2006). The New York Times.
  25. Mulligan, Casey B., and Yona Rubinstein. 2008...
  26. Wadhwa, Vivek. 2010...
  27. ২৭.০ ২৭.১ Haslam, S. Alexander, ...
  28. Ryan, Michelle K., ...
  29. Ryan, Michelle K., ...
  30. Budig, M. and England, P. 2001...
  31. Hekman, David R. ...
  32. McDonald, Steve, Nan Lin, and Dan Ao. 2009. “Networks of Opportunity: Gender, Race, and Job Leads.” Social Problems 56:385.
  33. Jacobs, Jerry A. 1996. Gender Inequality and Higher Education. Annual Review of Sociology. 22:153-185.
  34. ৩৪.০ ৩৪.১ Beilock, S. L., E. A. Gunderson, G. Ramirez, and S. C. Levine. 2010. “Female teachers' math anxiety affects girls' math achievement.” Proceedings of the National Academy of Sciences.
  35. ৩৫.০ ৩৫.১ Streb, Matthew J., Barbara Burrell, Brian Frederick, and Michael A. Genovese. 2008. “Social Desirability Effects and Support for a Female American President.” Public Opin Q 72:76-89.
  36. ৩৬.০ ৩৬.১ Messner, M.A., Duncan, M.C., & Willms, N. (2006). This Revolution Is Not Being Televised. Contexts: Understanding People in their Social Worlds, 5(3), 34-38.
  37. Tickamyer, Ann R. 1981. Wealth and Power: A Comparison of Men and Women in the Property Elite. Social Forces. 60(2):463-481.
  38. Ratliff, Kate A., and Shigehiro Oishi. 2013. “Gender Differences in Implicit Self-Esteem Following a Romantic Partner’s Success or Failure.” Journal of Personality and Social Psychology 105(4):688–702.
  39. Hilliard, Lacey J., and Lynn S. Liben. 2010. “Differing Levels of Gender Salience in Preschool Classrooms: Effects on Children’s Gender Attitudes and Intergroup Bias.” Child Development 81:1787-1798.
  40. Greenberg, Ellen and Steinberg, Laurence D. 1983. Sex Differences in Early Labor Force Experience: Harbinger of Things to Come. Social Forces. 62(2):467-486.
  41. Gerson, Kathleen. “Children of the Gender Revolution: Some Theoretical Questions and Findings from the Field.” Pp. 446-461 in Restructuring Work and the Life Course, edited by Victor W. Marshall, Walter R. Heinz, Helga Krueger, and Anil Verma. Toronto: University of Toronto Press.
  42. Rand, Cynthia S. and Hall, Judith A. 1983. Sex Differences in the Accuracy of Self-Perceived Attractiveness. Social Psychology Quarterly. 46(4):359-363.
  43. ৪৩.০ ৪৩.১ Carr, Deborah. 2007. “Body Work.” Contexts: Understanding People in Their Social Worlds 6:58.
  44. ৪৪.০ ৪৪.১ Parsons, Talcott. 1964. Social System. Free Press. আইএসবিএন 0029241901
  45. Schilt, Kristen. "Just One of the Guys?: How Transmen Make Gender Visible in the Workplace." Gender & Society. 20 (4) 2006, 465-490.
  46. Sumerau, J. Edward. 2012. ““That’s what men are supposed to do”: Compensatory Manhood Acts in an LGBT Christian Church.” Gender & Society 26: 461-487.

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]

অতিরিক্ত তথ্য:

জাতি ও জাতিসত্তা · অর্থনীতি