বিষয়বস্তুতে চলুন

ভাপা দই

উইকিবই থেকে
ভাপা দই
রন্ধনপ্রণালী বিভাগ মিষ্টান্ন
পরিবেশন ৪–৬ জন
খাদ্য শক্তি উচ্চ
তৈরির সময় ১ ঘণ্টা
কষ্টসাধ্য
টীকা ভাপা দই একটি ঐতিহ্যবাহী বাঙালি মিষ্টান্ন, যা দুধ, দই ও চিনি দিয়ে ভাপিয়ে তৈরি করা হয়।

রন্ধনপ্রণালী | প্রস্তুতপ্রণালী | উপকরণ | যন্ত্রপাতি | কৌশল | রন্ধনপ্রণালী দ্ব্যর্থতা নিরসন পাতা | প্রস্তুতপ্রণালী

ভাপা দই

ভাপা দই বাঙালি রসনাকে তৃপ্ত করার অন্যতম এক ঐতিহ্যবাহী মিষ্টান্ন। এর মোলায়েম স্বাদ, মিষ্টি ঘ্রাণ এবং ঠান্ডা পরিবেশনের কারণে এটি গ্রীষ্মকালীন বা উৎসব উপলক্ষে একটি আদর্শ উপাদেয় খাবার। মূলত পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের কিছু অঞ্চলে এই বিশেষ ধরনের দই তৈরির প্রথা শত বছরের পুরনো। এটি ‘ভাটিয়া দই’, ‘টক-মিষ্টি দই’ নামেও অনেক স্থানে পরিচিত। ঘন দুধ, দই এবং চিনি মিশিয়ে ধীরে ধীরে ভাপে রান্না করলেই তৈরি হয় এই অপূর্ব মিষ্টান্ন।

উপকরণ

[সম্পাদনা]
উপকরণ পরিমাণ
দুধ ১ লিটার
দই ১/২ কাপ (টক স্বাদের)
চিনি ১/২ কাপ (স্বাদ অনুযায়ী)
কনডেন্সড মিল্ক ১/৪ কাপ (ঐচ্ছিক, ঘনত্ব ও মিষ্টতার জন্য)
এলাচ গুঁড়ো ১/২ চা চামচ
জাফরান কয়েকটি সুতা (ঐচ্ছিক)
পেস্তা ও কাজু কুচি ২ টেবিল চামচ (সাজানোর জন্য)

প্রস্তুত প্রণালী

[সম্পাদনা]
  1. প্রথমে দুধ একটি হাঁড়িতে ঢেলে আঁচে বসিয়ে দিন। এক তৃতীয়াংশ পরিমাণে কমে আসা পর্যন্ত তা জ্বাল দিতে থাকুন। মাঝে মাঝে নাড়তে থাকুন যাতে নিচে লেগে না যায়।
  2. দুধ ঘন হয়ে এলে ঠান্ডা করে নিন।
  3. ঠান্ডা হওয়া দুধে দই, চিনি, কনডেন্সড মিল্ক ও এলাচ গুঁড়ো মিশিয়ে ভালোভাবে ফেটিয়ে নিন। মিশ্রণ যেন পুরোপুরি মসৃণ হয় এবং কোন দলা না থাকে তা নিশ্চিত করুন।
  4. একটি স্টিলের বাটি বা কাচের পাত্রে এই মিশ্রণ ঢেলে দিন। উপরে কিছু জাফরান ও বাদাম ছিটিয়ে দিন।
  5. এরপর এটি ঢেকে দিন এবং ভাপে বসিয়ে দিন (মধ্যম আঁচে ৩০–৪০ মিনিট)।
  6. ঠান্ডা হয়ে গেলে ফ্রিজে রেখে দিন অন্তত ২ ঘণ্টা। ঠান্ডা পরিবেশন করুন।

পরিবেশন

[সম্পাদনা]

ভাপা দই সাধারণত ছোট ছোট মাটির ভাঁড় বা কাচের বাটিতে পরিবেশন করা হয়। উৎসব, অতিথি আপ্যায়ন বা ঘরোয়া বিশেষ খাবারের শেষে এই দই একটি মিষ্টি পরিতৃপ্তি দেয়। এর হালকা মিষ্টতা ও দইয়ের মোলায়েমতা একে করে তোলে চিরকালীন জনপ্রিয়।

পরামর্শ

[সম্পাদনা]
  • দুধ বেশি ঘন করে নিলে দইটি জমাট বেঁধে সুন্দরভাবে দাঁড়াবে।
  • কনডেন্সড মিল্ক না থাকলে পরিমাণ মতো চিনি দিয়ে মিষ্টতা সামঞ্জস্য করুন।
  • মাটির পাত্র ব্যবহার করলে এতে দই আরও ভালো জমে এবং ঘ্রাণে বাড়তি এক দেশি ছোঁয়া আসে।

স্বাস্থ্য উপকারিতা

[সম্পাদনা]

ভাপা দই প্রোটিন, ক্যালসিয়াম ও প্রোবায়োটিকসমৃদ্ধ একটি খাবার। এটি হজমে সহায়ক, দাঁত ও হাড়ের জন্য উপকারী এবং পেট ঠান্ডা রাখতে কার্যকর। তবে চিনি বেশি ব্যবহার করলে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য তা ক্ষতিকর হতে পারে, তাই বিকল্পভাবে গুড় বা খেজুরের রস ব্যবহার করা যেতে পারে।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

[সম্পাদনা]

ভাপা দইয়ের উৎপত্তি মূলত পশ্চিমবঙ্গের কৃষ্ণনগর অঞ্চলে বলে ধারণা করা হয়, তবে বাংলাদেশেও এর সমান জনপ্রিয়তা রয়েছে। একসময় জমিদার বাড়িতে বিশেষ অতিথিদের জন্য ভিন্ন স্বাদের এই দই পরিবেশন করা হতো। মাটির হাঁড়িতে তৈরি দইয়ের মধ্যে ঘনত্ব, দুধের স্বাদ এবং আভিজাত্যের মিলনে এটি রাজকীয় মর্যাদা পায়।

প্রসিদ্ধ ব্যক্তিদের অভিমত

[সম্পাদনা]

বাংলার জনপ্রিয় সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় একবার বলেছিলেন— "ভাপা দই-এর মতো মিষ্টি যদি মুখে গলে যায়, তাহলে শরৎ সন্ধ্যার মতোন শান্তি অনুভব হয়।" উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগে অবৈধ প্যারামিটার

নতুন ভাবনা

[সম্পাদনা]

আজকের দিনে ভাপা দই তৈরিতে বিভিন্ন স্বাদ যুক্ত করা হচ্ছে— যেমন আমের ভাপা দই, চকোলেট ভাপা দই, কেশর ভাপা দই ইত্যাদি। রন্ধনপ্রণালীর দুনিয়ায় ঐতিহ্যবাহী ভাপা দইও নিজের নতুন রূপে রন্ধনপ্রেমীদের কাছে এক নতুন অভিজ্ঞতা দিচ্ছে।