জাপানের ইতিহাস: পুরাণ থেকে জাতিসত্ত্বা/আজুচি–মোমোয়ামা যুগ
আজুচি-মোমোইয়ামা যুগ ছিল জাপানের যুদ্ধবিক্ষুব্ধ যুগের শেষ পর্যায় যখন টোকুগাওয়া শোগুনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পূর্বে রাজনৈতিক ঐক্য সাধিত হয়। এই যুগ প্রায় ১৫৭৩ থেকে ১৬০৩ সাল পর্যন্ত বিস্তৃত। এই সময় ওদা নোবুনাগা এবং তাঁর উত্তরসূরি তোয়োতোমি হিদেয়োশি সেই বিশৃঙ্খলার অবসান ঘটান যা আশিকাগা শোগুনতন্ত্রের পতনের পর থেকে জাপানে চলছিল। এই যুগের নামকরণ করা হয়েছে নোবুনাগার দুর্গ আজুচি ক্যাসল এবং হিদেয়োশির দুর্গ মোমোইয়ামা ক্যাসলের (যা ফুশিমি ক্যাসল নামেও পরিচিত) নাম অনুসারে। আজুচি ক্যাসল ছিল বর্তমান শিগা প্রদেশের আজুচি শহরে এবং মোমোইয়ামা ক্যাসল ছিল কিয়োটোতে। যদিও অনেক সময় এই যুগের সূচনালগ্ন হিসেবে ১৫৭৩ সাল উল্লেখ করা হয় কিন্তু ব্যাপক অর্থে এই যুগ শুরু হয় ১৫৬৮ সালে। সে বছর নোবুনাগা তাঁর সেনাবাহিনী নিয়ে কিয়োটো প্রবেশ করেন যাতে তিনি আশিকাগা যোশিআকিকে আশিকাগা শোগুনতন্ত্রের ১৫তম এবং শেষ শোগুন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন। এই যুগ শেষ হয় ১৬০০ সালে সেকিগাহারা যুদ্ধে তোয়োতোমি পক্ষের উপর টোকুগাওয়া ইয়েয়াসুর বিজয়ের মাধ্যমে যার ফলে তিনি ক্ষমতা গ্রহণ করেন।
জাপান, প্রায় ১৫৮২ সালের সময়কাল
[সম্পাদনা]১৫৭৬ থেকে ১৫৭৯ সালের মধ্যে, নোবুনাগা আজুচিতে (বর্তমান শিগা প্রদেশে, বিওয়া হ্রদের তীরে) এক বিশাল সাততলা দুর্গ নির্মাণ করেন যার নাম আজুচি ক্যাসল। এই দুর্গ কেবল একটি অজেয় সামরিক ঘাঁটি হিসেবেই নয়, বরং একটি রাজকীয় বাসভবন হিসেবেও নির্মিত হয়। এটি ছিল জাতীয় ঐক্যের প্রতীক। এই দুর্গ থেকেই এই যুগের নামের প্রথম অংশটি এসেছে।
কিনাই অঞ্চল পুরোপুরি নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেবার পর নোবুনাগা এতটাই শক্তিশালী হয়ে উঠেছিলেন যে তিনি তাঁর সেনাপতিদের দূরবর্তী প্রদেশগুলো জয় করার দায়িত্ব দেন। শিবাতা কাতসুইয়েকে এচু প্রদেশে উয়েসুগি বংশ দমনের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তাকিগাওয়া কাজুমাসু মুখোমুখি হন শিনানো প্রদেশে যা তখন তাকেদা শিংগেনের পুত্র তাকেদা কাতসুউরি শাসন করতেন। আর হাশিবা হিদেয়োশিকে পাঠানো হয় চুউগোকু অঞ্চলে, পশ্চিম হোনশুর মোঋ বংশের বিরুদ্ধে লড়াই করতে।
১৫৭৬ সালে ওদা নোবুনাগা ইউরোপীয়দের প্রদর্শিত নতুন ধরণের আগ্নেয়াস্ত্র "আর্কুয়েবাস" ব্যবহার করেন এবং নাগাশিনো যুদ্ধের সময় ঐতিহ্যবাহী সামুরাই পদ্ধতিকে হার মানান। এই যুদ্ধে তাকেদা বংশ পরাজিত হয়। এর ফলে সামুরাইদের প্রথাগত যুদ্ধরীতি ধীরে ধীরে লুপ্ত হয়ে যায়।
১৫৮২ সালে দীর্ঘ এক অভিযানের পর, হিদেয়োশি অবশেষে নোবুনাগার সহায়তা চান শত্রুপক্ষের কঠোর প্রতিরোধ দমনে। নোবুনাগা তখন পশ্চিমে অভিযানের পথে ছিলেন এবং কিয়োটোতে সংক্ষিপ্তভাবে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। তাঁর সঙ্গে ছিল অল্প সংখ্যক দেহরক্ষী। সেই সময় তাঁরই এক অসন্তুষ্ট সেনাপতি তাঁকে আক্রমণ করে এবং তিনি আত্মহত্যা করতে বাধ্য হন।
হিদেয়োশি জাতীয় ঐক্য সম্পন্ন করেন
[সম্পাদনা]
এরপর শুরু হয় ওদা নোবুনাগার সবচেয়ে প্রভাবশালী অনুচরদের মধ্যে প্রতিযোগিতা। তারা একদিকে তাদের প্রভুর মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে চায়, অন্যদিকে ওদা বংশের নতুন শাসনব্যবস্থা গঠনে নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চায়।পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে যখন জানা যায় নোবুনাগার জ্যেষ্ঠ পুত্র ও উত্তরসূরি নোবুতাদা নিহত হয়েছেন। ফলে ওদা বংশের জন্য কোনো স্পষ্ট উত্তরসূরি অবশিষ্ট থাকে না।
মোঋ বংশ নোবুনাগার মৃত্যুর খবর জানার আগেই হিদেয়োশি দ্রুত তাদের সঙ্গে এক শান্তিচুক্তি করেন। এরপর তিনি তাঁর সৈন্যদের নিয়ে দ্রুত অগ্রসর হন প্রতিপক্ষের দিকে এবং মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যেই ইয়ামাযাকি যুদ্ধে শত্রুপক্ষকে পরাজিত করেন।
যদিও হিদেয়োশি ছিলেন একজন সাধারণ মানুষ, যিনি পায়েদল সৈনিক হিসেবে সামরিক জীবনে প্রবেশ করেছিলেন তবুও এখন তিনি ওদা বংশের সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ উত্তরাধিকারী সেনাপতিদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো শক্তিশালী হয়ে ওঠেন। তিনি প্রস্তাব দেন নোবুনাগার প্রাপ্তবয়স্ক তৃতীয় পুত্র নোবুতাকার পরিবর্তে তাঁর শিশু নাতি সানপোশিকে (যিনি পরে ওদা হিদেনোবু নাম গ্রহণ করেন) উত্তরাধিকারী ঘোষণা করা হোক। নোবুতাকার পক্ষে ছিলেন শিবাতা কাতসুইয়ে। হিদেয়োশি এই প্রস্তাবে নিওয়া নাগাহিদে এবং ইকেদা সুনেওকির মতো জ্যেষ্ঠ সেনাপতিদের সমর্থন পান। ফলে সানপোশিকে উত্তরাধিকারী ঘোষণা করা হয় এবং হিদেয়োশিকে সহ-অভিভাবক নিযুক্ত করা হয়।
তবে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র চলতেই থাকে, যা পরে খোলামেলা সংঘাতে রূপ নেয়। ১৫৮৩ সালে শিজুগাতাকে যুদ্ধে শিবাতাকে পরাজিত করেন হিদেয়োশি। এরপর ১৫৮৪ সালে কোমাকি ও নাগাকুতে যুদ্ধে টোকুগাওয়া ইয়েয়াসুর সঙ্গে দীর্ঘ এক ব্যয়বহুল হলেও লাভজনক সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন তিনি। অবশেষে হিদেয়োশি উত্তরাধিকার প্রশ্ন মীমাংসা করতে সক্ষম হন। তিনি কিয়োটোর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেন এবং ওদা বংশের সাবেক ভূখণ্ডের নিরবচ্ছিন্ন শাসক হয়ে ওঠেন।১৫৮৫ সালের জুলাই মাসে শিকোকুর চোসোকাবে বংশ হিদেয়োশির কাছে আত্মসমর্পণ করে। এরপর ১৫৮৭ সালে কিউশুর শিমাজু বংশও আত্মসমর্পণ করে। পরে হিদেয়োশিকে ফুজিওয়ারা পরিবার দত্তক গ্রহণ করে। তাঁর নতুন উপাধি হয় তোয়োতোমি এবং তাঁকে জাপানের অসামরিক ও সামরিক উভয় নিয়ন্ত্রণের সর্বোচ্চ পদ কানপাকু প্রদান করা হয়।এরপরের বছর তিনি নয়টি বৃহৎ ডাইমিয়ো জোটের মধ্যে তিনটির সঙ্গে জোট স্থাপন করেন এবং ঐক্যের যুদ্ধকে শিকোকু ও কিউশু পর্যন্ত বিস্তৃত করেন। ১৫৯০ সালে প্রায় ২ লক্ষ সৈন্যের বিশাল বাহিনী নিয়ে হিদেয়োশি হোনশুর পূর্বাঞ্চলের শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী হোজো বংশকে পরাজিত করেন। এরপর অন্যান্য ডাইমিয়োরা দ্রুত আত্মসমর্পণ করে এবং জাপানের সামরিক ঐক্য সম্পন্ন হয়।
হিদেয়োশির শাসনাধীন জাপান
[সম্পাদনা]ভূমি জরিপ
[সম্পাদনা]পুরো জাপান এখন হিদেয়োশির নিয়ন্ত্রণে আসার পর, জাতীয় সরকারের একটি নতুন কাঠামো গঠন করা হয়। দেশটি একক নেতৃত্বাধীন হলেও সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন শাসন ছিল বিকেন্দ্রীভূত। ক্ষমতার ভিত্তি ছিল ভূমির বণ্টন যা পরিমাপ করা হতো ধানের উৎপাদন অনুসারে 'কোকু' এককে। ১৫৯৮ সালে একটি জাতীয় জরিপ পরিচালিত হয় এবং এতে ধান উৎপাদনের পরিমাণ নির্ধারিত হয় ১ কোটি ৮৫ লক্ষ কোকু, যার মধ্যে ২০ লক্ষ কোকু সরাসরি হিদেয়োশির নিয়ন্ত্রণে ছিল। তুলনামূলকভাবে, টোকুগাওয়া ইয়েয়াসু, যাকে হিদেয়োশি কান্তো অঞ্চলে স্থানান্তর করেছিলেন, তিনি নিয়ন্ত্রণ করতেন ২৫ লক্ষ কোকু।
এই জরিপগুলো, যেগুলো হিদেয়োশি তাইকো উপাধি গ্রহণের আগে ও পরে পরিচালনা করেন পরবর্তীতে "তাইকো জরিপ" নামে পরিচিত হয়।
নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা
[সম্পাদনা]বাণিজ্য উৎসাহিত করা এবং সমাজে স্থিতিশীলতা আনয়নের লক্ষ্যে হিদেয়োশি বেশ কিছু প্রশাসনিক সংস্কার চালু করেন। পরিবহন সহজ করতে সড়কের টোল বুথ ও অপ্রয়োজনীয় চেকপয়েন্ট তুলে দেওয়া হয়। সামরিক ঘাঁটির সংখ্যাও কমিয়ে আনা হয়। এছাড়া সামাজিক শ্রেণিভেদ স্থায়ী করতে কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়। যেমন, শহরের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষকে আলাদা এলাকায় বসবাসের বাধ্যবাধকতা এবং কৃষকদের অস্ত্র বহন বা মালিকানা নিষিদ্ধ করা হয়। এই সময় হিদেয়োশি এক বিশাল অস্ত্র জব্দ অভিযান পরিচালনা করেন যাকে বলা হয় “তলোয়ার সংগ্রহ অভিযান” ।
ঐক্য
[সম্পাদনা]হিদেয়োশি তাঁর অবস্থান নিশ্চিত করতে ডাইমিয়োদের ভূমি পুনর্বিন্যাস করেন। বিশেষ করে তিনি টোকুগাওয়া পরিবারকে রাজধানী থেকে অনেক দূরে কান্তো অঞ্চলে সরিয়ে দেন এবং তাদের নতুন ভূখণ্ড ঘিরে দেন বিশ্বস্ত অনুগতদের দ্বারা। তিনি একটি জিম্মি প্রথাও চালু করেন যাতে ডাইমিয়োদের স্ত্রী ও উত্তরসূরিদের ওসাকার তাঁর দুর্গশহরে বসবাস করতে হতো।
পরবর্তীতে ১৫৯১ সালে তিনি তাইকো বা "অবসরপ্রাপ্ত কানপাকু" উপাধি গ্রহণ করেন এবং রাজত্ব হস্তান্তর করেন তাঁর ভাইপো ও দত্তক পুত্র তোয়োতোমি হিদেতসুগুকে। এরপর তিনি ক্ষমতার ভারসাম্য আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠান গঠন করেন। এর মধ্যে ছিল পাঁচ প্রবীণ পরিষদ যারা শান্তি রক্ষা ও তোয়োতোমি পরিবারের সমর্থনে অঙ্গীকারবদ্ধ ছিল, গৃহ প্রশাসক পরিষদ যা পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট ছিল এবং নীতিনির্ধারণ ও প্রশাসনিক বিষয় দেখত, এবং মধ্যস্থতাকারী পরিষদ যার তিনজন সদস্য দুইটি প্রধান পরিষদের মধ্যে শান্তি বজায় রাখার দায়িত্বে ছিলেন।
কোরিয়ান অভিযান
[সম্পাদনা]হিদেয়োশির শেষ বড় আকাঙ্ক্ষা ছিল মিং রাজবংশ জয় করা। ১৫৯২ সালের এপ্রিল মাসে কোরিয়া দিয়ে নিরাপদে যাওয়ার অনুমতি না পেয়ে তিনি ২ লক্ষ সৈন্য নিয়ে জোরপূর্বক কোরিয়া দখলের উদ্দেশ্যে আক্রমণ করেন। জাপানি কোরিয়া আক্রমণ (১৫৯২-১৫৯৮) চলাকালীন, জাপানিরা ১৫৯২ সালের মে মাসেই সিউল দখল করে ফেলে। আক্রমণের তিন মাসের মধ্যেই তারা পিয়ংইয়াং পৌঁছে যায়। তাদের সঙ্গে অনেক কোরীয় সহযোগী ছিল, যারা শুরুতে দুর্নীতিগ্রস্ত অভিজাত শ্রেণির শাসন থেকে মুক্তি পাওয়ার আশায় জাপনিদের মুক্তিদাতা হিসেবে দেখেছিল। চোসন রাজা সনজো পালিয়ে যান এবং তার দুই রাজপুত্র কাতো কিয়োমাসার হাতে বন্দি হন।
কোরীয় উপদ্বীপের বিভিন্ন অঞ্চলে জাপানি সেনাবাহিনী পরাজিত হয় "ন্যায়বাহিনী"র হাতে। কোরীয় অ্যাডমিরাল ই সুন-সিন জাপানি রসদবাহী জাহাজে আক্রমণ চালিয়ে এবং সমুদ্রে জাপানি নৌবাহিনীকে পরাজিত করে তাদের রসদের পথ কেটে দেন। ফলে, জাপানি সৈন্যরা রসদের অভাবে স্থলভাগে আর অগ্রসর হতে পারেনি।
রাজার নির্দেশে কোরীয় দূত মিং চীনা দরবারে সামরিক সাহায্যের জন্য আবেদন করে। চীনের সম্রাট অ্যাডমিরাল চেন লিন ও সেনাপতি লি রুসংকে কোরিয়াকে সহায়তা করার জন্য পাঠান। লি রুসং জাপানিদের কোরীয় উপদ্বীপের উত্তরাংশ থেকে তাড়িয়ে দেন। ১৫৯৩ সালের জানুয়ারিতে জাপানিরা উপদ্বীপের দক্ষিণাংশে পিছু হটে যায়। এরপর জাপান ও চীনের মধ্যে শান্তি আলোচনা শুরু হয়।
১৫৯৩ থেকে ১৫৯৭ সাল পর্যন্ত চলা এই শান্তি আলোচনার সময়ে, হিদেয়োশি জাপানকে মিং চীনের সমকক্ষ বলে মনে করেন এবং কোরিয়াকে ভাগ করে নেওয়া, মুক্ত বাণিজ্যের অধিকার এবং চীনা রাজকন্যাকে সম্রাটের জন্য স্ত্রী হিসেবে চাওয়ার দাবি তোলেন। কিন্তু চোসন এবং চীনের নেতারা এসব দাবি মানতে অস্বীকৃতি জানান। মিং রাজতন্ত্রের বাণিজ্যিক কাঠামোর মধ্যে জাপনিদের সমান মর্যাদা দেওয়ারও কোনো কারণ তারা দেখেননি। ফলে শান্তি আলোচনা ভেঙে পড়ে।
১৫৯৭ সালে দ্বিতীয়বার আক্রমণ শুরু হয়। কিন্তু এবারও ব্যর্থতা আসে। কারণ কোরীয় প্রতিরক্ষা আরও সংগঠিত ছিল এবং চীনের অংশগ্রহণ আগের চেয়ে অনেক বেশি ছিল। ১৫৯৮ সালে হিদেয়োশির মৃত্যুর পর জাপানি বাহিনী কোরিয়া থেকে সম্পূর্ণভাবে সরে যায়। তখন পর্যন্ত অধিকাংশ জাপানি সেনাপতি দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এবং শোগুনের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন ছিল।
সেকিগাহারা এবং তোয়োতোমি শাসনের অবসান
[সম্পাদনা]হিদেয়োশি মৃত্যুশয্যায় থাকা অবস্থায় জাপানের সবচেয়ে ক্ষমতাবান কয়েকজন প্রভুকে টোকুগাওয়া, মায়েদা, উকিতা, উএসুগি, মোরি নিয়ে "পাঁচ প্রবীণ পরিষদ" গঠন করেন যাতে তার শিশুপুত্র হিদেয়োরি বড় হওয়া পর্যন্ত তারা দেশ শাসন করেন। মায়েদা তোশিইয়ের মৃত্যু পর্যন্ত শান্তি বজায় থাকে ১৫৯৯ সালে। এরপর ইশিদা মিতসুনারি টোকুগাওয়া ইয়েয়াসুকে তোয়োতোমি বংশের প্রতি অসততা দেখানোর অভিযোগ তোলেন। এই ঘটনাই সেকিগাহারার যুদ্ধ ডেকে আনে। এটি আজুচি-মোমোয়ামা যুগ এবং সেনগোকু যুগ এর শেষ বড় যুদ্ধ হিসেবে বিবেচিত হয়। সেকিগাহারায় ইয়েয়াসুর বিজয়ে তোয়োতোমি শাসনের অবসান ঘটে। তিন বছর পর ইয়েয়াসু "সেই টাইশোগুন" উপাধি পান এবং এডো শোগুনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন যা ১৮৬৮ সালে মেইজি পুনরুদ্ধার পর্যন্ত স্থায়ী ছিল।
মোমোয়ামা যুগের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়ন
[সম্পাদনা]মোমোয়ামা যুগ ছিল বাইরের বিশ্বের প্রতি আগ্রহের সময়। এই সময়েই বড় শহর গড়ে ওঠে এবং ব্যবসায়ী শ্রেণির উত্থান ঘটে। জাঁকজমকপূর্ণ দুর্গ স্থাপত্য এবং স্বর্ণপাতা দিয়ে সজ্জিত চিত্রপট-আলংকৃত অভ্যন্তর নকশা শুধু দাইম্যোদের ক্ষমতার প্রতিফলন ছিল না এটি এক নতুন রুচির পরিচায়কও ছিল যা পূর্ববর্তী মুওরমাচি যুগের গম্ভীর একরঙা রীতির বিপরীত। এই সময়ে একটি নির্দিষ্ট শিল্পধারা গড়ে ওঠে, যাকে বলা হয় "নানবান" যেখানে ইউরোপীয় যাজক, ব্যবসায়ী এবং অন্যান্য "দক্ষিণ বর্বরদের" চিত্র অঙ্কিত হত।
এই সময় চা অনুষ্ঠান (চা-নো-ইউ) এর শিল্পও সমৃদ্ধ হয়। নোবুনাগা ও হিদেয়োশি উভয়েই এই শখে প্রচুর সময় ও অর্থ ব্যয় করেন। তাঁরা চা পাত্র, কৌটো এবং অন্যান্য সামগ্রী সংগ্রহ করেন জাঁকজমকপূর্ণ সামাজিক চা আসরের আয়োজন করেন এবং সেন নো রিক্যুর মতো খ্যাতনামা চা গুরুদের পৃষ্ঠপোষকতা করেন।
হিদেয়োশি ১৫৮৭ সালে নাগাসাকি দখল করেন এবং এর পর থেকেই তিনি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার এবং এই বন্দর দিয়ে বাইরের বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক রাখত বাণিজ্য সংগঠনগুলোকে নিয়ন্ত্রণে আনতে চান। যদিও চীন তার বাণিজ্যিক দাবি প্রত্যাখ্যান করে তবুও হিদেয়োশির পাঠানো বাণিজ্য মিশনগুলি "রেড সিল জাহাজে" করে আজকের মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন ও থাইল্যান্ড পর্যন্ত পৌঁছাতে সক্ষম হয়। তবে তিনি জাপানে খ্রিস্টধর্মকে সন্দেহের চোখে দেখতেন। কারণ, তিনি মনে করতেন এটি রাষ্ট্রের জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে। ফলে, কিছু মিশনারিকে তার শাসনামলে ক্রুশবিদ্ধও করা হয়।