ইন্দ্রিয়তন্ত্র/দৃষ্টিতন্ত্র
পরিচিতি
[সম্পাদনা]সাধারণভাবে বলতে গেলে, দৃষ্টিগত প্রানীগুলো ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক (EM) তরঙ্গের উপর নির্ভর করে যাতে একটি জীব তার চারপাশ সম্পর্কে অধিকতর তথ্য পেতে পারে। এই তথ্য হতে পারে সম্ভাব্য সঙ্গী, বিপদ বা খাদ্য উৎস সম্পর্কে। বিভিন্ন জীবের দৃষ্টিপ্রণালী ভিন্ন গঠন উপাদান নিয়ে গঠিত হয়।
চোখের জটিলতা খুবই সহজ একটি গঠন। যেমন চোখের দাগ, যা মূলত কিছু আলোক-সংবেদনশীল কোষের সমষ্টি — থেকে শুরু করে একটি পূর্ণাঙ্গ ক্যামেরা-চোখ পর্যন্ত বিস্তৃত। যদি কোনো জীবের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের আলোক-সংবেদনশীল কোষ থাকে ও বিভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্যে সংবেদনশীল কোষ থাকলে তাত্ত্বিকভাবে জীবটি রঙ বা অন্তত রঙের পার্থক্য অনুভব করতে পারবে। EM বিকিরণের আরেকটি গুণাবলি, যেমন মেরুকরণ, কিছু জীব দ্বারা সনাক্ত করা যায়। যার মধ্যে পোকামাকড় ও সিফালোপডরা সর্বোচ্চ নির্ভুলতা সহ এটি ধরতে পারে।
উল্লেখ্য, এই পাঠ্যাংশে আলোচ্য বিষয় হচ্ছে EM তরঙ্গ ব্যবহার করে দেখা। অবশ্যই, কিছু জীব বিকল্প উপায়ে দৃষ্টিগ্রহণ বা অন্তত তাদের দেখা-সংক্রান্ত তথ্যকে অতিরিক্ত সংবেদনশীল মাধ্যমে সম্পূরক করতে বিকশিত হয়েছে। যেমন, তিমি ও বাদুড়ের ক্ষেত্রে, যারা ইকো-লোকেশন ব্যবহার করে। এটিকে কোনো অর্থে "দেখা" বলা যেতে পারে, তবে একে পুরোপুরি সঠিকভাবে দৃষ্টি বলা যায় না। এছাড়া, "দৃষ্টি" ও "চাক্ষুষ" শব্দগুলো সাধারণত EM তরঙ্গের সেই তরঙ্গদৈর্ঘ্যকে বোঝায় যা মানুষের চোখ দেখতে সক্ষম — অর্থাৎ দৃশ্যমান পরিসরের মধ্যে পড়ে।

কিন্তু যেহেতু কিছু জীব মানুষের তুলনায় কম বা বেশি ফ্রিকোয়েন্সির EM তরঙ্গ শনাক্ত করতে পারে, তাই এখানে একটি আরও সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞার প্রয়োজন। আমরা দৃশ্যমান তরঙ্গদৈর্ঘ্যের সীমা নির্ধারণ করছি ৩০০ nm থেকে ৮০০ nm পর্যন্ত। অনেকের কাছে এটি মনগড়া মনে হতে পারে, তবে ভুল সীমা বেছে নিলে কিছু পাখির দৃষ্টিকে অদৃশ্য বা "অ-দৃষ্টি" হিসেবে গন্য করতে হবে। আবার এই সীমার মাধ্যমে কিছু নির্দিষ্ট প্রাণীর, যেমন—সাপের তাপীয় দৃষ্টিকে আমরা "দৃষ্টি" হিসেবে না গণ্য করে "দূর থেকে অনুভব" করা হিসেবে ব্যাখ্যা করছি। কারণ সাপের পিট অঙ্গ ৫০০০ nm থেকে ৩০,০০০ nm (ইনফ্রারেড) তরঙ্গ শনাক্ত করতে পারে। যদিও অন্ধ সাপের নির্দিষ্টভাবে কোনো দেহাংশে আক্রমণ করার ঘটনাও নথিভুক্ত হয়েছে।
সবার আগে বিভিন্ন ধরনের দৃষ্টিগত সংবেদন অঙ্গের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেয়া হবে, এরপর মানবদৃষ্টির বিভিন্ন উপাদান, মানুষের দৃষ্টিপথে সংকেত প্রক্রিয়াকরণ ও সবশেষে এই প্রক্রিয়াগুলোর একটি উপলব্ধিগত উদাহরণ উপস্থাপন করা হবে।
সংবেদন অঙ্গসমূহ
[সম্পাদনা]দৃষ্টিশক্তি বা দেখার ক্ষমতা নির্ভর করে দৃষ্টিসংবেদন অঙ্গ বা চোখের উপর। চোখের বিভিন্ন নির্মাণশৈলী রয়েছে, যা প্রাণীর প্রয়োজন অনুসারে জটিলতার দিক থেকে ভিন্ন। এই ভিন্ন নির্মাণশৈলীগুলোর সক্ষমতা ভিন্ন, তারা বিভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্যের প্রতি সংবেদনশীল এবং তাদের তীক্ষ্ণতা বা স্পষ্টতার মাত্রাও ভিন্ন হয়; পাশাপাশি, ইনপুট বিশ্লেষণের প্রক্রিয়াও ভিন্ন এবং কার্যকর হতে ভিন্ন সংখ্যায় চোখ প্রয়োজন হয়। ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক (EM) বিকিরণ শনাক্ত ও বিশ্লেষণের ক্ষমতা অধিকাংশ জীবের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদে পরিণত হয়েছে, যা তাদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে। যেসব পরিবেশে পর্যাপ্ত আলো নেই কিংবা সম্পূর্ণ অন্ধকার, সেসব পরিবেশে দৃষ্টিশক্তির কোনো অতিরিক্ত সুবিধা পাওয়া যায় না, ফলে এজাতীয় প্রাণীদের ক্ষেত্রে দৃষ্টিসংবেদন অঙ্গের অপচয় ঘটে এবং অন্যান্য সংবেদনের উপর নির্ভরতা বেড়ে যায় (যেমন, কিছু গুহাবাসী প্রাণী, বাদুড় ইত্যাদি)। আশ্চর্যজনকভাবে দেখা গেছে যে, দৃষ্টিসংবেদন অঙ্গসমূহ অপটিক্যাল উইন্ডো-এর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যা এমন EM তরঙ্গদৈর্ঘ্যের (৩০০nm থেকে ১১০০nm) একটি সীমা যা বায়ুমণ্ডল ভেদ করে ভূমিতে পৌঁছায়। এটি নিচের চিত্রে দেখানো হয়েছে। আপনি লক্ষ্য করবেন যে আরও কিছু "উইন্ডো" রয়েছে, যেমন ইনফ্রারেড (IR) উইন্ডো, যা আংশিকভাবে ব্যাখ্যা করে সাপের তাপ- "দৃষ্টি" ব্যবস্থা; এছাড়া রয়েছে রেডিওফ্রিকোয়েন্সি (RF) উইন্ডো, যা এখনো পর্যন্ত কোনো জীব শনাক্ত করতে পারে না।

সময় ও বিবর্তনের মাধ্যমে অনেক ধরণের চোখের গঠন সৃষ্টি হয়েছে, এবং কিছু গঠন একাধিকবার বিবর্তিত হয়েছে, যার ফলে অনুরূপ পরিবেশে বসবাসকারী প্রাণীদের মাঝে দৃষ্টিসংবেদন অঙ্গের গঠনে সাদৃশ্য দেখা যায়। এক বিষয়ে প্রায় সকল প্রজাতির ক্ষেত্রেই একরূপতা লক্ষ্য করা যায়, তা হলো আলোক-সংবেদনশীল প্রোটিন যাকে "অপসিন" বলা হয়, এর সর্বজনীন ব্যবহার। যদিও এর আণবিক ভিত্তি নিয়ে অতিরিক্ত আলোচনায় না গিয়ে, বিভিন্ন গঠনকে নিম্নোক্ত শ্রেণীতে ভাগ করা যায়:
স্পট আই
পিট আই
পিনহোল আই
লেন্স আই
রিফ্র্যাকটিভ কর্নিয়া আই
রিফ্লেক্টর আই
কম্পাউন্ড আই
চোখের সবচেয়ে সহজ গঠন প্রাণীকে শুধু আশেপাশের আলোর অস্তিত্ব বুঝতে সাহায্য করে, অর্থাৎ আলো আছে না নেই তা বোঝা যায়। সাধারণত এটি আলোক-সংবেদনশীল কোষের একটি ক্লাস্টার যা এক স্থানে অবস্থিত, তাই একে "স্পট আই", "আই স্পট" বা "স্টেমা" বলা হয়। এই স্পট আই-কে কোণের গঠনের মাধ্যমে বা নিচে বসিয়ে দিলে, প্রাণীটি আলো আসার দিকও বুঝতে পারে, যা চিত্র গঠনের জন্য অপরিহার্য। এই ধরনের পিট আই সবচেয়ে সাধারণ চোখের গঠন, এবং এটি ৯৫% এরও বেশি পরিচিত প্রজাতির মাঝে দেখা যায়।

এই গঠনের চূড়ান্ত রূপে দেখা যায় যে পিট আরও গভীর গহ্বরে পরিণত হয়েছে, যা চিত্রের তীক্ষ্ণতা বাড়ায়, তবে উজ্জ্বলতা হ্রাস পায়। অর্থাৎ, একটি ভারসাম্য বজায় রাখতে হয় তীক্ষ্ণতা ও উজ্জ্বলতার মধ্যে। এর একটি উদাহরণ নটিলাস, নটিলিডি পরিবারভুক্ত একটি প্রজাতি, যাদের জীবন্ত জীবাশ্ম হিসেবে গণ্য করা হয়। তারা একমাত্র পরিচিত প্রজাতি যাদের এই ধরনের চোখ রয়েছে, যাকে পিনহোল চোখ বলা হয়, এবং এটি পিনহোল ক্যামেরা বা ক্যামেরা অবস্কুরারার সম্পূর্ণ অনুরূপ। তদ্ব্যতীত, উন্নত ক্যামেরার মত, নটিলাস প্রজাতিরা অ্যাপারচারের আকার সামঞ্জস্য করতে পারে, যার ফলে চিত্রের রেজোলিউশন বাড়ানো বা কমানো যায়, তবে উজ্জ্বলতার বিপরীতে। ক্যামেরার মতই, এই উজ্জ্বলতা ও রেজোলিউশন এর ভারসাম্য সমস্যার সমাধান হলো লেন্স যুক্ত করা; একটি গঠন যা আলোকে কেন্দ্রীয় অঞ্চলে কেন্দ্রীভূত করে, যেখানে সাধারণত ফটোসেনসরের ঘনত্ব বেশি থাকে। লেন্সের আকৃতি পরিবর্তন, অবস্থান পরিবর্তন এবং অ্যাপারচারের আকার নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে, প্রাণীরা বিভিন্ন পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারে এবং যে কোনো দৃশ্যের নির্দিষ্ট অংশে ফোকাস করতে পারে। এই গঠনের সর্বশেষ উন্নয়ন হলো একটি রিফ্র্যাকটিভ কর্নিয়া যুক্ত করা। এই ধরনের চোখে কর্নিয়ার ভেতরের উচ্চ রিফ্র্যাকটিভ তরলের কারণে চোখের মোট অপটিক্যাল ক্ষমতার দুই-তৃতীয়াংশ কার্যকর হয়, যা অত্যন্ত উচ্চ রেজোলিউশন দৃশ্য প্রদান করে। বেশিরভাগ স্থলচর প্রাণী, যেমন মানুষ, এই ধরনের চোখ ব্যবহার করে। লেন্সের গঠন, সংখ্যা, ফটোসেন্সরের ঘনত্ব, ফোভিয়ার আকার ও সংখ্যা, পিউপিলের আকৃতি ইত্যাদির বিভিন্ন রূপ দেখা যায়, যা সর্বদা প্রাণীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বাড়ানোর জন্য অভিযোজিত। একই চোখের শ্রেণীতেও এই বৈচিত্র্য চোখের বাহ্যিক রূপে বৈচিত্র্য তৈরি করে। এই বিষয়টি তুলে ধরতে নিচে একাধিক রিফ্র্যাকটিভ কর্নিয়া আই সম্বলিত প্রাণীর চিত্র প্রদর্শন করা হয়েছে।
![]() |
![]() |
![]() |
![]() |
![]() |
লেন্সভিত্তিক পদ্ধতির একটি বিকল্প হলো রিফ্লেক্টর আই, যেটি কিছু শামুক প্রজাতির মধ্যে দেখা যায়। লেন্স বা লেন্স সিস্টেমের মাধ্যমে আলোকে চোখের পেছনের একক বিন্দুতে কেন্দ্রীভূত করার প্রচলিত পদ্ধতির পরিবর্তে, এই গঠনে চোখের অভ্যন্তরে আয়নার মতো গঠন থাকে, যা আলোকে একটি কেন্দ্রীয় অঞ্চলে প্রতিফলিত করে, অনেকটা প্যারাবোলিক ডিশের মতো। যদিও এই গঠনের মাধ্যমে চিত্র গঠন করার ক্ষমতাসম্পন্ন কোনো প্রাণী এখনও পর্যন্ত পরিচিত নয়, তবে একটি মাছ প্রজাতি, স্পুকফিশ (ডলিচোপটেরিক্স লঙ্গিপস), উভয় ধরণের চোখ (রিফ্লেক্টর ও লেন্সযুক্ত) ব্যবহার করে।

চোখের সর্বশেষ শ্রেণী হলো কম্পাউন্ড চোখ, যা পতঙ্গ ও ক্রাস্টেশিয়ানদের মধ্যে দেখা যায়। এই চোখ বহু কার্যকর সাব-ইউনিট (অম্যাটিডিয়া) দ্বারা গঠিত, প্রতিটি ইউনিটে থাকে একটি ফ্যাসেট বা সামনের পৃষ্ঠ, একটি স্বচ্ছ স্ফটিকীয় শঙ্কু এবং আলো শনাক্ত করার জন্য সংবেদনশীল কোষ। প্রতিটি অম্যাটিডিয়ার মাঝে পিগমেন্ট কোষ থাকে, যা নিশ্চিত করে যে আলো যতটা সম্ভব সমান্তরালভাবে প্রবেশ করছে। প্রতিটি অম্যাটিডিয়া থেকে আগত ইনপুট সম্মিলিতভাবে একটি মোজাইক চিত্র তৈরি করে, যার রেজোলিউশন নির্ভর করে অম্যাটিডিয়ার সংখ্যার উপর। উদাহরণস্বরূপ, যদি মানুষের কম্পাউন্ড চোখ থাকত, তাহলে সেই চোখের রেজোলিউশন ধরে রাখতে আমাদের পুরো মুখ ঢেকে ফেলত। উল্লেখ্য, কম্পাউন্ড চোখের অনেক ধরন রয়েছে, তবে এই পাঠ্যের পরিধি ছাড়িয়ে যাওয়ায় সেসব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়নি।
শুধু চোখের ধরন নয়, চোখের সংখ্যাতেও পার্থক্য দেখা যায়। যেমন আপনি জানেন, মানুষের সাধারণত দুটি চোখ থাকে, তবে মাকড়সাদের চোখের সংখ্যা ভিন্ন হয়; বেশিরভাগ প্রজাতির ৮টি চোখ থাকে। সাধারণত এগুলো ভিন্ন আকারের হয়ে থাকে এবং আলাদা কাজ করে। উদাহরণস্বরূপ, জাম্পিং স্পাইডারের সামনে দুটি বড় আকারের চোখ থাকে, যা তাকে চমৎকার দৃষ্টিশক্তি প্রদান করে এবং শিকার ধরার জন্য ব্যবহৃত হয়। অপরদিকে, বাকি ছয়টি ছোট চোখের রেজোলিউশন কম হলেও, এগুলো তাকে সম্ভাব্য বিপদ থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। নীচে একটি জাম্পিং স্পাইডার ও একটি উলফ স্পাইডারের চোখের দুটি চিত্র দেখানো হয়েছে, যা মাকড়সার চোখের বিন্যাসের বৈচিত্র্য প্রদর্শন করে।
- মাকড়সার চোখের বিন্যাস
-
উলফ স্পাইডার
-
জাম্পিং স্পাইডার
দৃষ্টিশক্তি ব্যবস্থার অ্যানাটমি
[সম্পাদনা]আমরা মানুষরা দর্শননির্ভর প্রাণী, তাই আমাদের চোখ অনেক জটিল এবং বহু উপাদানে গঠিত। এই অধ্যায়ে, এই উপাদানগুলোর বর্ণনা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে, যার মাধ্যমে মানব দৃষ্টিশক্তির বৈশিষ্ট্য এবং কার্যকারিতা সম্পর্কে কিছু অন্তর্দৃষ্টি পাওয়া যাবে।
চোখের অভ্যন্তরে প্রবেশ – পিউপিল, আইরিস এবং লেন্স
[সম্পাদনা]আলো চোখে প্রবেশ করে চোখের সামনের কালো ছিদ্র বা পিউপিল দিয়ে। এর কালো রঙের কারণ হলো চোখের অভ্যন্তরের টিস্যু আলো পুরোপুরি শোষণ করে। শুধু এই পিউপিলের মাধ্যমেই আলো চোখে প্রবেশ করতে পারে, অর্থাৎ প্রবেশ করা আলোর পরিমাণ কার্যকরভাবে পিউপিলের আকারের ওপর নির্ভর করে। পিউপিলকে ঘিরে থাকা রঞ্জিত স্ফিংকটার আইরিস, চোখের অ্যাপারচার স্টপ হিসেবে কাজ করে। এই আইরিসে থাকা রঞ্জকের পরিমাণের ওপর ভিত্তি করেই মানুষের চোখের বিভিন্ন রঙ তৈরি হয়।
এই রঞ্জকের স্তরের পাশাপাশি, আইরিসে দুই স্তরের সিলিয়ারি পেশি থাকে। প্রথম স্তরে একটি বৃত্তাকার পেশি, যাকে পিউপিলারি স্ফিংকটার বলা হয়, তা সংকুচিত হয়ে পিউপিলকে ছোট করে। অন্য স্তরে একটি মসৃণ পেশি, পিউপিলারি ডাইলেটর, তা সংকুচিত হয়ে পিউপিলকে বড় করে। এই পেশিগুলোর সংমিশ্রণ পিউপিলকে প্রয়োজন অনুযায়ী সংকোচন/প্রসারণ করতে সক্ষম করে। সিলিয়ারি জোনুল নামক আঁশযুক্ত গঠন এই সিলিয়ারি পেশিগুলোর নিয়ন্ত্রণ করে, এবং একইসঙ্গে লেন্সকে ধরে রাখে ও এর আকার পরিবর্তন করে।
লেন্সটি পিউপিলের ঠিক পেছনে অবস্থিত। এর গঠন এবং বৈশিষ্ট্য ক্যামেরার লেন্সের মতো হলেও, এদের কাজ কিছুটা ভিন্ন। সিলিয়ারি জোনুলের টান দ্বারা লেন্সের আকার পরিবর্তিত হয়, ফলে ফোকাল দৈর্ঘ্যও পরিবর্তিত হয়। কর্নিয়ার সঙ্গে মিলে, লেন্স ফোকাস পরিবর্তন করতে পারে, যা এটিকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ গঠন করে তোলে, যদিও চোখের মোট অপটিক্যাল ক্ষমতার এক-তৃতীয়াংশ মাত্র লেন্স দ্বারা নির্ধারিত হয়। এটি চোখের প্রধান ফিল্টার হিসেবেও কাজ করে। লেন্স ফাইবারগুলো, যা দীর্ঘ এবং পাতলা কোষ, এর বেশিরভাগ গঠন তৈরি করে এবং স্বচ্ছতা বৃদ্ধির জন্য কোষযন্ত্রপাতির বেশিরভাগ বাদ দেয়। এছাড়াও, জলে দ্রবণীয় প্রোটিন ক্রিস্টালিন নামক একটি প্রোটিন লেন্সের প্রতিসরণ সূচক বাড়ায়। এই ফাইবারগুলো লেন্সের গঠন ও আকৃতিতেও ভূমিকা রাখে।

চোখে বিম গঠনের প্রক্রিয়া – কর্নিয়া ও এর সুরক্ষাকারী স্তর – স্ক্লেরা
[সম্পাদনা]
চোখের মোট অপটিক্যাল ক্ষমতার বাকি দুই-তৃতীয়াংশ কর্নিয়ার মাধ্যমে আসে, যা আইরিস, পিউপিল ও লেন্সকে আচ্ছাদিত করে রাখে। এটি সেই রশ্মিগুলোকে ফোকাস করে যেগুলো আইরিসের মধ্য দিয়ে যাওয়ার আগে এতে প্রবেশ করে। কর্নিয়ার পুরুত্ব মাত্র ০.৫ মিমি এবং এটি পাঁচটি স্তর নিয়ে গঠিত:
- এপিথেলিয়াম: কর্নিয়ার পৃষ্ঠে আবরণকারী এপিথেলিয়াল টিস্যুর স্তর।
- বোম্যানের মেমব্রেন: শক্ত কোলাজেন আঁশ দ্বারা গঠিত একটি পুরু সুরক্ষা স্তর, যা কর্নিয়ার গঠন বজায় রাখে।
- স্ট্রোমা: সমান্তরাল কোলাজেন ফাইব্রিল নিয়ে গঠিত স্তর, যা কর্নিয়ার ৯০% পুরুত্ব গঠন করে।
- ডেসমেটের মেমব্রেন এবং এন্ডোথেলিয়াম: এই দুটি স্তর চোখের সম্মুখ চেম্বারের সঙ্গে যুক্ত, যা সিলিয়ারি বডি দ্বারা উৎপাদিত অ্যাকুয়াস হিউমার দ্বারা পূর্ণ। এই তরল পদার্থ লেন্সকে আর্দ্র রাখে, পরিষ্কার করে এবং চোখের অভ্যন্তরীণ চাপ বজায় রাখে। কর্নিয়া ও আইরিসের মাঝখানে অবস্থিত এই চেম্বারে ট্রাবেকুলার মেশওয়ার্ক বডি থাকে যার মাধ্যমে এই তরল শ্লেমের নালী দিয়ে পেছনের চেম্বারে নিষ্কাশন হয়।
কর্নিয়ার পৃষ্ঠ দুটি সুরক্ষামূলক ঝিল্লির নিচে থাকে – স্ক্লেরা এবং টেননের ক্যাপসুল। এই দুটি সুরক্ষামূলক স্তর পুরো চোখের গোলককে আবৃত করে রাখে। স্ক্লেরা কোলাজেন ও ইলাস্টিক ফাইবার দ্বারা গঠিত, যা চোখকে বাহ্যিক ক্ষতি থেকে রক্ষা করে; এই স্তরই চোখের সাদা অংশ গঠন করে। এটি স্নায়ু ও রক্তনালীর দ্বারা বিদীর্ণ হয় এবং সবচেয়ে বড় ছিদ্রটি অপটিক স্নায়ুর জন্য সংরক্ষিত। উপরন্তু, এটি কনজাংকটিভা দ্বারা আবৃত থাকে, যা চোখের পৃষ্ঠে একটি স্বচ্ছ মিউকাস ঝিল্লি। এই ঝিল্লি চোখের পাতা অভ্যন্তরেও থাকে। এটি লুব্রিকেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং ল্যাক্রিমাল গ্রন্থির সঙ্গে মিলে অশ্রু উৎপন্ন করে যা চোখকে আর্দ্র ও সুরক্ষিত রাখে। শেষ সুরক্ষামূলক স্তর, চোখের পাতা, এই তরলটিকে চোখজুড়ে ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করে।
চোখ ঘোরানো – এক্সট্রা-অকুলার মাসল
[সম্পাদনা]চোখের গোলক ঘোরানো হয় এক জটিল পেশি কাঠামো দ্বারা, যাকে এক্সট্রা-অকুলার মাসল বলা হয়। এতে চারটি রেকটাস পেশি থাকে – ইনফেরিয়র, মিডিয়াল, ল্যাটেরাল ও সুপিরিয়র এবং দুটি অবলিক পেশি – ইনফেরিয়র ও সুপিরিয়র। নিচে এই পেশিগুলোর অবস্থান ও কার্যাবলি উপস্থাপন করা হয়েছে:

আপনি দেখতে পাচ্ছেন, এক্সট্রা-অকুলার মাসলগুলো (২,৩,৪,৫,৬,৮) চোখের স্ক্লেরায় যুক্ত থাকে এবং অপটিক স্নায়ুকে ঘিরে থাকা আঁশযুক্ত টেন্ডন ‘অ্যানুলাস অব জিন’ থেকে উদ্ভূত হয়। ট্রকলিয়া একটি পুলি হিসেবে কাজ করে এবং সুপিরিয়র অবলিক পেশি দড়ির মতো আচরণ করে – এর মাধ্যমে একটি পুলি সিস্টেম তৈরি হয়, যা পেশির বল সঠিকভাবে নির্দেশিত করতে সহায়তা করে। বাকি এক্সট্রা-অকুলার পেশিগুলো চোখে সরাসরি সংযুক্ত এবং তারা এই ধরনের পুলি সিস্টেম গঠন করে না। এই পেশিগুলোর মাধ্যমে চোখ ওপরে, নিচে, বামে, ডানে ঘোরানো যায় এবং সম্মিলিতভাবে আরও বিভিন্ন গতিবিধি সম্ভব।
অন্য কিছু আন্দোলনও আমাদের দেখার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। ভার্জেন্স মুভমেন্টস আমাদের দ্বৈত-চোখ দৃষ্টির সঠিক কার্যকারিতা নিশ্চিত করে। অচেতন তীব্র গতির আন্দোলন যেগুলোকে স্যাকেড বলা হয়, তা আমাদের কোনও বস্তু ফোকাসে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ। স্যাকেড একধরনের দোলা-ধরনের দ্রুত নড়াচড়া, যা চোখ যখন দেখার ক্ষেত্র স্ক্যান করে তখন হয়, এবং এর ফলে ফিক্সেশন বিন্দুটি সামান্য সরানো হয়। আপনি যখন কোনও চলন্ত বস্তুর দিকে তাকিয়ে থাকেন, তখন আপনার চোখ ‘স্মুথ পারস্যুট’ নামক নড়াচড়া করে। অতিরিক্ত স্বতঃস্ফূর্ত নড়াচড়া যেগুলো ‘নাইস্ট্যাগমাস’ নামে পরিচিত, তা ভেস্টিবুলার সিস্টেমের সংকেত দ্বারা প্ররোচিত হয় এবং একত্রে তারা ভেস্টিবুলো-অকুলার রিফ্লেক্স গঠন করে।
চোখের যাবতীয় নড়াচড়া নিয়ন্ত্রণ করে ব্রেইনস্টেম এবং বিভিন্ন অংশ বিভিন্ন গতিবিধির জন্য দায়ী:
- পন্স: দ্রুত অনুভূমিক গতি, যেমন স্যাকেড বা নাইস্ট্যাগমাস
- মেসেন্সেফালন: উল্লম্ব ও পাকানো গতি
- সেরিবেলাম: সূক্ষ্ম নিয়ন্ত্রণ
- এডিঙ্গার-ওয়েস্টফাল নিউক্লিয়াস: ভার্জেন্স মুভমেন্ট
যেখানে দৃষ্টিগ্রহণ ঘটে – রেটিনা
[সম্পাদনা]
ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক (EM) তরঙ্গ আলোকরূপে রূপান্তরিত হওয়ার আগে, এটি কর্নিয়া, লেন্স এবং ম্যাকুলা অতিক্রম করে। এই গঠনগুলো অবাঞ্ছিত EM তরঙ্গ পরিশোধনের কাজও করে, ফলে চোখ ক্ষতিকর বিকিরণ থেকে সুরক্ষিত থাকে। "কর্নিয়া, লেন্স এবং পিগমেন্ট ইপিথেলিয়াম দ্বারা আলোর পরিশোধন" চিত্রটিতে প্রতিটি উপাদানের পরিশোধন প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। দেখা যায়, কর্নিয়া স্বল্প তরঙ্গদৈর্ঘ্য কমানো করে, তবে দীর্ঘ তরঙ্গদৈর্ঘ্য প্রায় অপরিবর্তিত থাকে। লেন্স ৪০০ nm এর নিচে প্রায় ২৫% এবং ৪৩০ nm এর নিচে ৫০%-এর বেশি EM তরঙ্গ প্রতিরোধ করে। সর্বশেষে, ফটো-রিসেপশনের পূর্ববর্তী ধাপে পিগমেন্ট ইপিথেলিয়াম প্রায় ৪৩০-৫০০ nm তরঙ্গদৈর্ঘ্যের ৩০% প্রতিরোধ করে।
চোখের এমন একটি অংশ যা আলোক-সংবেদনশীল নয় এমন অঞ্চল থেকে সংবেদনশীল অঞ্চলে রূপান্তরের সীমারেখা নির্দেশ করে, তাকে বলা হয় ওরা সেরাটা। সংবেদনশীল অঞ্চলটিকে বলা হয় রেটিনা, যা চোখের পেছনের অংশে অবস্থিত ইন্দ্রিয় গঠন। রেটিনায় বহু স্তর থাকে এবং এতে লক্ষ লক্ষ রড ও কন নামক ফোটোরিসেপ্টর থাকে, যা আলোর রশ্মি ধরে বৈদ্যুতিক সংকেতে রূপান্তর করে। এই সংকেতগুলো গ্যাংলিয়ন কোষ দ্বারা স্নায়বিকভাবে প্রেরণ শুরু হয় এবং অপটিক নার্ভের মাধ্যমে মস্তিষ্কে পৌঁছায় — চোখ ত্যাগ করার একমাত্র পথ।

ডানপাশের চিত্রে রেটিনার গঠন কল্পনাগতভাবে দেখানো হয়েছে। এখানে প্রধানত পাঁচ ধরনের কোষ দেখা যায়:
ফোটোরিসেপ্টর কোষ
হরাইজন্টাল কোষ
বাইপোলার কোষ
অ্যামাক্রিন কোষ
গ্যাংলিয়ন কোষ
ফোটোরিসেপ্টর কোষ দুটি প্রধান ভাগে বিভক্ত: রড এবং কন। অধিকাংশ রেটিনায় কনের তুলনায় রড সংখ্যা বেশি, কিন্তু ম্যাকুলার কেন্দ্রীয় অঞ্চলে, যেটি ফোভিয়া নামে পরিচিত, কনের ঘনত্ব অত্যন্ত বেশি। এই অঞ্চলে প্রতিটি সংবেদনশীল কন কোষ একটি গ্যাংলিয়ন কোষের সঙ্গে যুক্ত। এছাড়া, এখানে কন কোষগুলি তুলনামূলকভাবে ছোট, ফলে প্রতি অঞ্চলে বেশি কন থাকে। এই অনুপাত এবং ঘনতার জন্য এখানেই সর্বোচ্চ দৃষ্টিসূক্ষ্মতা অর্জিত হয়।

মানব কনের তিন ধরনের উপপ্রকার রয়েছে, যেগুলোর প্রতিটি আলোর নির্দিষ্ট তরঙ্গদৈর্ঘ্যের প্রতি সংবেদনশীল, এবং এর কারণ হচ্ছে ফটোপসিন নামক তিন ধরনের রঞ্জক পদার্থ। প্রতিটি রঞ্জক লাল, সবুজ অথবা নীল আলোর তরঙ্গে সংবেদনশীল, তাই আমরা S- (ছোট তরঙ্গ), M- (মধ্যম তরঙ্গ), এবং L- (দীর্ঘ তরঙ্গ) কন পাই। প্রতিটি কন-এ একটি অপসিন নামক প্রোটিন এবং একটি সংযুক্ত রেটিনাল নামক ক্রোমোফোর থাকে।
তিন প্রকার কনের বর্ণালীবীক্ষণ সংবেদনশীলতা:
১. S-কন স্বল্প তরঙ্গদৈর্ঘ্য, অর্থাৎ নীল-বেগুনি আলো শোষণ করে। সর্বাধিক শোষণ তরঙ্গদৈর্ঘ্য: ৪২০ nm।
২. M-কন সবুজাভ-নীল থেকে হলুদ আলো শোষণ করে। সর্বাধিক শোষণ তরঙ্গদৈর্ঘ্য: ৫৩৫ nm।
৩. L-কন হলুদ থেকে লাল আলো শোষণ করে। সর্বাধিক শোষণ তরঙ্গদৈর্ঘ্য: ৫৬৫ nm।

কোন কোষের অভ্যন্তরীণ অংশে নিউক্লিয়াস ও অঙ্গাণু থাকে। বাহ্যিক অংশে থাকে ফটোপসিন রঞ্জক, যা কোষ ঝিল্লির অভ্যন্তরে মেমব্রেনাস ডিস্ক-এর আকারে থাকে, যা আলো শোষণের ক্ষেত্রফল বাড়ায়। অনেক কশেরুকপ্রাণীর কন কোষে গোলাকার অয়েল ড্রপলেট থাকে, যা চোখের অভ্যন্তরীণ পরিশোধক হিসেবে কাজ করে, কনট্রাস্ট বাড়াতে, গ্লেয়ার কমাতে ও রঙীয় বিক্ষেপ হ্রাস করতে সাহায্য করে।
রড কোষের গঠন কন কোষের মতোই, তবে এতে রডপসিন নামে একটি আলাদা রঞ্জক থাকে যা কম তীব্রতার আলো শনাক্ত করতে পারে, এবং একে কন-এর চেয়ে ১০০ গুণ বেশি সংবেদনশীল করে তোলে। মানব রডে কেবলমাত্র এই রঞ্জক থাকে এবং এটি বাহ্যিক ডিস্ক কাঠামোর মাধ্যমে আলো শোষণ বাড়ায়। কনের মতো রড কোষও বাইপোলার কোষের সঙ্গে যুক্ত হয়।
রডপসিন ৪০০–৬০০ nm তরঙ্গদৈর্ঘ্য আলো শোষণ করে, এবং সর্বাধিক শোষণ ঘটে প্রায় ৫০০ nm-এ। এই তরঙ্গদৈর্ঘ্য সবুজাভ-নীল আলো নির্দেশ করে, যার কারণে রাতের বেলায় নীল রং তুলনামূলকভাবে অধিক উজ্জ্বল দেখা যায়।


৪০০–৭০০ nm এর বাইরে তরঙ্গদৈর্ঘ্যের EM তরঙ্গ রড ও কন দ্বারা শনাক্ত হয় না, ফলে এগুলো মানুষের দৃষ্টিসীমার বাইরে।
হরাইজন্টাল কোষ রেটিনার অভ্যন্তরীণ পারমাণবিক স্তরে থাকে। এই কোষ দুই প্রকার — উভয়ই আলো পেলে হাইপারপোলারাইজড হয় অর্থাৎ আরও ঋণাত্মক হয়ে পড়ে। Type A কোষের উপপ্রকার HII-H2 প্রধানত S-কনের সঙ্গে সংযুক্ত হয়। Type B কোষের উপপ্রকার HI-H1, যেটি ডেনড্রাইট গাছ এবং একটি অ্যাক্সন ধারণ করে; এর ডেনড্রাইট M- ও L-কনের সাথে এবং অ্যাক্সন রডের সাথে সংযুক্ত হয়। সংযোগগুলো সাধারণত নিষেধকারী সিন্যাপ্সের মাধ্যমে হয়, এবং কোষগুলো একে অপরের সাথে গ্যাপ জাংশনের মাধ্যমে যুক্ত থাকে।

বাইপোলার কোষ তাদের ডেনড্রাইটগুলো বাইরের প্লেক্সিফর্ম স্তরে ছড়িয়ে দেয়, এবং তাদের সেল বডি থাকে অভ্যন্তরীণ পারমাণবিক স্তরে। এদের ডেনড্রাইট শুধুমাত্র কন ও রডের সঙ্গে সংযুক্ত হয়। একটি রড বাইপোলার কোষ এবং নয় বা দশটি কন বাইপোলার কোষ পার্থক্য করা যায়। এদের অ্যাক্সন অভ্যন্তরীণ প্লেক্সিফর্ম স্তরে অ্যামাক্রিন ও গ্যাংলিয়ন কোষের সাথে যুক্ত হয়। রড বাইপোলার কোষ ১৮-৭০টি রড কোষের সাথে সংযুক্ত হয় এবং এদের অ্যাক্সন রিবন সিন্যাপ্স নিয়ে ডায়াড সিন্যাপ্সের মাধ্যমে সংকেত পাঠায়। এরা AII অ্যামাক্রিন কোষের মাধ্যমে গ্যাংলিয়ন কোষের সাথে যুক্ত থাকে।
অ্যামাক্রিন কোষ সাধারণত অভ্যন্তরীণ পারমাণবিক স্তর এবং গ্যাংলিয়ন কোষের স্তরে থাকে, তবে মাঝে মাঝে অভ্যন্তরীণ প্লেক্সিফর্ম স্তরেও পাওয়া যায়, যেখানে তারা সংকেত মডুলেটর হিসেবে কাজ করে। এদের ক্ষেত্রফল অনুযায়ী ছোট, মাঝারি, বা বড় – এইভাবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়। তবে ৪০টির বেশি শ্রেণী রয়েছে।
গ্যাংলিয়ন কোষ রেটিনা থেকে মস্তিষ্কে চূড়ান্ত সংকেত প্রেরণ করে। সবচেয়ে সাধারণ গ্যাংলিয়ন কোষ হলো মিজেট গ্যাংলিয়ন সেল ও প্যারাসল গ্যাংলিয়ন সেল। দৃষ্টিসংকেত সমস্ত রেটিনার স্তর অতিক্রম করে এই কোষে পৌঁছে এবং এখান থেকে অপটিক নার্ভ হয়ে মস্তিষ্কে যায়। অপটিক ডিস্ক সেই স্থান যেখানে সমস্ত গ্যাংলিয়ন অ্যাক্সন একত্রিত হয়ে অপটিক নার্ভ গঠন করে। এই নার্ভ প্রধানত গ্যাংলিয়ন অ্যাক্সন ও পোর্টোর্ট কোষ নিয়ে গঠিত। বেশিরভাগ সংকেত পার্শ্বীয় জেনিকুলেট নিউক্লিয়াস-এ পৌঁছে যা এটি ভিজ্যুয়াল কর্টেক্সে প্রেরণ করে। কিছু গ্যাংলিয়ন কোষ আলোতেও প্রতিক্রিয়া দেখায়, তবে প্রতিক্রিয়া ধীর হওয়ায় ধারণা করা হয় যে এগুলো পরিবেষ্টিত আলোর মাত্রা ও জৈবিক ঘড়ি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
সংকেত প্রক্রিয়াকরণ
[সম্পাদনা]আগেই বলা হয়েছে, চোখের মূল উপাদান হলো রেটিনা। কারণ এতে রয়েছে সব আলোক-সংবেদনশীল কোষ। এটি ছাড়া চোখ একটি ডিজিটাল ক্যামেরার মতো, যার মধ্যে CCD (চার্জ কাপলড ডিভাইস) সেন্সর নেই। এই অংশে আলো কীভাবে রেটিনায় ধারণ হয়। কীভাবে অপটিক্যাল সংকেত মস্তিষ্কে প্রেরণ করা হয় এবং কীভাবে মস্তিষ্ক এই সংকেতকে প্রক্রিয়াকরণ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণের উপযোগী তথ্য তৈরি করে—তা ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
প্রাথমিক সংকেত সৃষ্টি – ফটোসেন্সর ফাংশন
[সম্পাদনা]দৃষ্টি সর্বদা শুরু হয় আলো রেটিনার ফটো-সংবেদনশীল কোষে আঘাত করার মাধ্যমে। রেটিনার রড ও কোন কোষে উপস্থিত আলোক-শোষণকারী ভিজ্যুয়াল পিগমেন্ট, বিভিন্ন উৎসেচক ও ট্রান্সমিটার দৃশ্যমান ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক তরঙ্গ (EM) কে বিদ্যুৎ সংকেতে রূপান্তর করে, এক প্রক্রিয়ায় যা ফটোইলেক্ট্রনিক্যাল ট্রান্সডাকশন নামে পরিচিত। উদাহরণস্বরূপ, রড কোষে দৃশ্যমান EM তরঙ্গ বহিরাগত ডিস্ক কাঠামোতে থাকা রডোপসিন অণুতে আঘাত করে। প্রতিটি রডোপসিন অণু গঠিত একটি হেলিক্স ক্লাস্টার থেকে, যাকে বলা হয় অপসিন, যা ঘিরে রাখে ১১-সিস রেটিনাল নামক একটি অংশকে। এই অংশটি ফোটনের শক্তির প্রভাবে আকার পরিবর্তন করে। জীববৈজ্ঞানিক অণুতে, এই ধরনের শক্তি দ্বারা রূপান্তরিত হওয়া অংশগুলোকে ক্রোমোফোর বলা হয়।
১১-সিস রেটিনাল আলোর শক্তির কারণে সোজা হয়ে অল-ট্রান্স রেটিনাল-এ পরিণত হয়, যার ফলে অপসিন হেলিক্সগুলো একে অপরের থেকে দূরে সরে যায় এবং নির্দিষ্ট বিক্রিয়াশীল স্থানগুলো উন্মোচিত হয়। এই সক্রিয় রডোপসিন অণুকে তখন মেটারডোপসিন II বলা হয়। এই পর্যায়ের পর, দৃশ্যমান আলোর উদ্দীপনা বন্ধ হলেও প্রতিক্রিয়াটি চলতে থাকে। মেটারডোপসিন II প্রায় ১০০টি Gs প্রোটিন নামক ট্রান্সডুসিন অণুর সাথে বিক্রিয়া করে, যার ফলে GDP GTP-তে রূপান্তরিত হয় এবং αs ও ßs উৎপন্ন হয়। সক্রিয় αs-GTP এরপর cGMP-ফসফোডাইএস্টারেজ (PDE)-এর সাথে যুক্ত হয়, যা স্বাভাবিক আয়ন-বিনিময় প্রক্রিয়া দমন করে এবং এর ফলে সেলুলার তরলে ক্যাটায়ন আয়নের ঘনত্ব কমে যায়, এবং কোষের পোলারাইজেশন পরিবর্তিত হয়।
এই প্রাকৃতিক ফটোইলেকট্রিক ট্রান্সডাকশন প্রতিক্রিয়ার একটি অসাধারণ ক্ষমতা রয়েছে—শুধু একটি রডোপসিন অণু একক আলোক কণায় সক্রিয় হয়ে প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ১০৬টি cGMP অণুর হাইড্রোলাইসিস ঘটাতে পারে।
ফোটোট্রান্সডাকশন
[সম্পাদনা]
১. একটি আলোক কণিকা রেটিনাল-এর সাথে ফটোসেন্সর কোষে সংযোগ স্থাপন করে। রেটিনাল আইসোমারাইজেশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ১১-সিস থেকে অল-ট্রান্স গঠনে রূপান্তরিত হয়। ২. রেটিনাল আর অপসিনের বাইন্ডিং সাইটে মানানসই থাকে না। ৩. ফলে অপসিন গঠনগত পরিবর্তনের মাধ্যমে মেটারডোপসিন II-এ রূপ নেয়। ৪. মেটারডোপসিন II একটি অস্থির যৌগ এবং এটি ভেঙে অপসিন ও অল-ট্রান্স রেটিনাল উৎপন্ন করে। ৫. অপসিন নিয়ন্ত্রক প্রোটিন ট্রান্সডুসিন-কে সক্রিয় করে। এতে ট্রান্সডুসিন এর সাথে আবদ্ধ GDP বিচ্ছিন্ন হয়ে GTP যুক্ত হয় এবং এরপর এর α উপএকক β ও γ উপএকক থেকে পৃথক হয়ে যায়, GTP এখনো α উপএককে যুক্ত থাকে। ৬. α উপএকক-GTP যৌগ ফসফোডাইএস্টারেজ (PDE)-কে সক্রিয় করে। ৭. ফসফোডাইএস্টারেজ cGMP কে ৫'-GMP-তে ভেঙে ফেলে। ফলে cGMP-এর ঘনত্ব কমে যায় এবং সোডিয়াম চ্যানেল বন্ধ হয়ে যায়। ৮. সোডিয়াম চ্যানেল বন্ধ হওয়ায় কোষ হাইপারপোলারাইজড হয়, কারণ পটাশিয়াম প্রবাহ চালু থাকে। ৯. কোষ হাইপারপোলারাইজড হলে ভোল্টেজ-গেটেড ক্যালসিয়াম চ্যানেল বন্ধ হয়ে যায়। ১০. ফটোসেন্সর কোষে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ কমে গেলে গ্লুটামেট নিউরোট্রান্সমিটার নিঃসরণের পরিমাণও কমে যায়, কারণ ক্যালসিয়াম গ্লুটামেট-যুক্ত ভেসিকলকে কোষ ঝিল্লির সাথে যুক্ত করে এর উপাদান মুক্ত করতে সহায়তা করে। ১১. ফটোসেন্সর কোষ থেকে গ্লুটামেট নিঃসরণ কমে গেলে On-সেন্টার বাইপোলার কোষ (রড ও কোন টাইপ On বাইপোলার কোষ) ডিপোলারাইজড হয় এবং কন টাইপ Off বাইপোলার কোষ হাইপারপোলারাইজড হয়।
দৃশ্যমান EM উদ্দীপনা ছাড়াই, রড কোষে বিভিন্ন আয়ন, প্রোটিন এবং অণুর মিশ্রণের ফলে এর মেমব্রেন পটেনশিয়াল প্রায় -৪০ mV থাকে। অন্যান্য স্নায়ু কোষের তুলনায় এটি বেশি (প্রায় -৬৫ mV)। এই অবস্থায়, নিউরোট্রান্সমিটার গ্লুটামেট রড কোষের অ্যাক্সন টার্মিনাল থেকে ক্রমাগত নিঃসৃত হয় এবং পার্শ্ববর্তী বাইপোলার কোষ দ্বারা শোষিত হয়। যখন দৃশ্যমান EM প্রবেশ করে এবং পূর্বে বর্ণিত ক্যাসকেড প্রতিক্রিয়া শুরু হয়, তখন মেমব্রেন পটেনশিয়াল -৭০ mV-তে নেমে আসে। এই হাইপারপোলারাইজেশন গ্লুটামেট নিঃসরণ হ্রাস করে, ফলে বাইপোলার কোষের কার্যকলাপে প্রভাব ফেলে এবং ভিজ্যুয়াল পথের পরবর্তী ধাপগুলোও পরিবর্তিত হয়।
সমান ধরনের প্রক্রিয়া কোন কোষ এবং আলোকসংবেদনশীল গ্যাংলিয়ন কোষেও ঘটে, তবে সেখানে বিভিন্ন ধরনের অপসিন ব্যবহৃত হয়। তিন ধরনের কোন কোষে যথাক্রমে ফটোপসিন I (হলুদ-সবুজ), ফটোপসিন II (সবুজ), ও ফটোপসিন III (নীল-বেগুনি) পাওয়া যায়, এবং মেলানোপসিন (নীল) আলোকসংবেদনশীল গ্যাংলিয়ন কোষে উপস্থিত থাকে।
রেটিনায় সংকেত প্রক্রিয়াকরণ
[সম্পাদনা]
গ্লুটামেট নিঃসরণের পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়ায় বিভিন্ন বাইপোলার কোষ ভিন্নভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায়। তথাকথিত অন এবং অফ বাইপোলার কোষগুলো কোণ কোষ থেকে বাইপোলার কোষে সরাসরি সংকেত প্রবাহ গঠনে ব্যবহৃত হয়। অন বাইপোলার কোষগুলো দৃশ্যমান EM উদ্দীপনায় ডিপোলারাইজড হয় এবং সংশ্লিষ্ট অন গ্যাংলিয়ন কোষগুলো সক্রিয় হয়। অপরদিকে, অফ বাইপোলার কোষগুলো দৃশ্যমান EM উদ্দীপনায় হাইপারপোলারাইজড হয় এবং অফ গ্যাংলিয়ন কোষগুলো দমন হয়। এটিই হল সরাসরি সংকেত প্রবাহের মৌলিক পথ।
পার্শ্বীয় সংকেত প্রবাহ রড কোষ থেকে শুরু হয়, এরপর বাইপোলার কোষে পৌঁছায়, তারপর অ্যামাক্রিন কোষে যায়। রড-অ্যামাক্রিন কোষ দ্বারা অফ বাইপোলার কোষগুলো দমন করা হয় এবং অন বাইপোলার কোষগুলো বৈদ্যুতিক সায়নাপ্সের মাধ্যমে উত্তেজিত হয়। এই সব ধাপ অতিক্রম করার পর সংকেত অন অথবা অফ গ্যাংলিয়ন কোষে পৌঁছে এবং পার্শ্বীয় সংকেত প্রবাহ সম্পূর্ণ হয়।
অন গ্যাংলিয়ন কোষে অ্যাকশন পটেনশিয়াল (AP) দৃশ্যমান EM উদ্দীপনার মাধ্যমে উদ্দীপ্ত হয়। সেন্সর পটেনশিয়াল যত বাড়ে, AP এর ফ্রিকোয়েন্সিও তত বাড়ে। অর্থাৎ, AP নির্ভর করে সেন্সর পটেনশিয়ালের মাত্রার উপর। গ্যাংলিয়ন কোষের যে অঞ্চলে উদ্দীপক ও দমনকারী প্রভাব AP ফ্রিকোয়েন্সিকে প্রভাবিত করে, তাকে বলা হয় রিসেপ্টিভ ফিল্ড (RF)। সাধারণত গ্যাংলিয়ন কোষের চারপাশে RF দুটি অঞ্চলে বিভক্ত থাকে: কেন্দ্রীয় অঞ্চল এবং বৃত্তাকার প্রান্তীয় অঞ্চল। দৃশ্যমান EM অভিযোজন চলাকালীন এরা আলাদা করা যায়।
যখন কেন্দ্রীয় অঞ্চলে আলো ফেলে, তখন AP ফ্রিকোয়েন্সি বাড়ে এবং প্রান্তীয় অঞ্চলে আলো ফেললে তা কমে যায়। আলো বন্ধ করার পর পুনরায় উত্তেজনা ঘটে। এই ধরনের অঞ্চলের জন্য "অন ফিল্ড" (কেন্দ্রীয় অন ক্ষেত্র) নামটি ব্যবহৃত হয়। অন্যদিকে, অফ গ্যাংলিয়ন কোষের RF ঠিক বিপরীতভাবে কাজ করে এবং একে "অফ ফিল্ড" (কেন্দ্রীয় অফ ক্ষেত্র) বলা হয়।
এই RF গঠন করে হরিজোন্টাল কোষ। প্রান্তীয় অঞ্চলের উদ্দীপনা কেন্দ্রীয় অঞ্চলে প্রেরিত হয় এবং সেখানে তথাকথিত উদ্দীপনার বৈসাদৃশ্য তৈরি হয়। এই কার্যপ্রণালী অন্ধকারকে আরও অন্ধকার এবং আলোকে আরও উজ্জ্বল করে তোলে। যদি সম্পূর্ণ RF-এ আলো পড়ে, তাহলে কেন্দ্রীয় অঞ্চলের উদ্দীপনাই প্রাধান্য পায়।
কর্টেক্সে সংকেত প্রেরণ
[সম্পাদনা]পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে, গ্যাংলিয়ন কোষগুলির অক্ষতন্তু রেটিনার অপটিক ডিস্কে একত্রিত হয়ে অপটিক নার্ভ গঠন করে। এই স্নায়ু তন্তুগুলি এক বিশেষ ক্রমে গুচ্ছাকারে বিন্যস্ত থাকে। রেটিনার ম্যাকুলার অঞ্চলের তন্তু গুচ্ছের কেন্দ্রে অবস্থান করে এবং রেটিনার টেম্পোরাল (পার্শ্বীয়) অর্ধের তন্তুগুলি প্রান্তীয় অংশ দখল করে। এই তন্তুগুলি চোখের গহ্বরের বাইরে আসার পর একটি আংশিক ক্রসওভার বা ছেদ ঘটে। প্রতিটি রেটিনার ন্যাসাল (নাসিকাভিমুখী) অর্ধের তন্তুগুলি বিপরীত পাশে গিয়ে মস্তিষ্কে প্রবেশ করে, আর টেম্পোরাল অর্ধের তন্তুগুলি অপরিবর্তিত থেকে যায়। এই আংশিক ক্রসওভারকে বলা হয় অপটিক কায়াজমা, এবং এই বিন্দুর পরের অপটিক নার্ভগুলোকে বলা হয় অপটিক ট্র্যাক্ট, যা একক রেটিনাল নার্ভ থেকে পৃথক করার জন্য আলাদা নাম দেওয়া হয়।
এই আংশিক ছেদের কাজ হলো, উভয় চোখ দ্বারা উৎপন্ন ডানদিকের দৃষ্টিক্ষেত্রের তথ্য শুধুমাত্র মস্তিষ্কের বাম পাশে এবং বামদিকের দৃষ্টিক্ষেত্রের তথ্য ডান পাশে প্রেরণ করা। ফলে শরীরের ডানদিক ও ডান দৃষ্টিক্ষেত্রের সমস্ত তথ্য যখন মস্তিষ্কের পশ্চাৎভাগ (ডায়েন্সেফালন) এ পৌঁছে, তখন তা বাম দিকে যায়।

অপটিক ট্র্যাক্টের তন্তু ও স্নায়ু কোষগুলির মধ্যে তথ্য বিনিময় ঘটে ল্যাটারাল জেনিকুলেট বডিস (LGB)-এ, যা মস্তিষ্কের থ্যালামাসে অবস্থিত এবং ভিজ্যুয়াল সংকেত প্রক্রিয়াকরণের একটি কেন্দ্রীয় অংশ। এখান থেকে তথ্য মস্তিষ্কের সংশ্লিষ্ট পাশে অবস্থিত অক্সিপিটাল কর্টেক্সের স্নায়ু কোষগুলিতে প্রেরিত হয়।
রেটিনা থেকে মস্তিষ্ক পর্যন্ত সংযোগকে দুটি পথে ভাগ করা যায়: পারভোসেলুলার পথ এবং ম্যাগ্নোসেলুলার পথ। পারভোসেলুলার পথ রঙ ও সূক্ষ্ম বিশদের সংকেত প্রেরণ করে, আর ম্যাগ্নোসেলুলার পথ দ্রুত চলমান উদ্দীপনা শনাক্ত করে।

স্ট্যান্ডার্ড ডিজিটাল ক্যামেরাগুলির সংকেত পারভোসেলুলার পথের সাথে তুলনীয়। এই পারভোসেলুলার প্রতিক্রিয়ার অনুকরণে গবেষকেরা নিউরোমর্ফিক সেন্সরি সিস্টেম তৈরি করেছেন, যেগুলি নিউরোনাল ব্যবস্থায় স্পাইক-ভিত্তিক গণনা অনুকরণ করার চেষ্টা করে। এ জন্য তারা "অ্যাড্রেস-ইভেন্ট রিপ্রেজেন্টেশন" নামক একটি প্রকল্প ব্যবহার করেন (লিউ এবং ডেলব্রুক ২০১০ [১]).
অ্যানাটমিকভাবে, রেটিনাল ম্যাগ্নো এবং পারভো গ্যাংলিয়ন কোষ দুটি করে ভেন্ট্রাল ম্যাগ্নোসেলুলার স্তর এবং চারটি ডোরসাল পারভোসেলুলার স্তরে প্রক্ষেপণ করে ল্যাটারাল জেনিকুলেট নিউক্লিয়াস (LGN)-এ। ছয়টি LGN স্তরের প্রতিটি হয় একই দিকের বা বিপরীত দিকের চোখ থেকে ইনপুট পায়; যেমন, বাম চোখের গ্যাংলিয়ন কোষগুলি ডান LGN-এর স্তর ১, ৪ ও ৬-এ ক্রসওভার করে যায়, আর ডান চোখের কোষগুলি (অপরিবর্তিত অবস্থায়) স্তর ২, ৩ ও ৫-এ যায়। এইভাবেই ডান ও বাম চোখের তথ্য আলাদা হয়ে যায়।
যদিও মানব দৃষ্টিশক্তি রেটিনার দুই অর্ধাংশ দ্বারা তৈরি হয় এবং সংকেত মস্তিষ্কের বিপরীত হেমিস্ফিয়ারে প্রক্রিয়াকরণ হয়, তবুও সম্পূর্ণ দৃষ্টিক্ষেত্রকে একটি সমন্বিত ও সম্পূর্ণ একক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাই দুটি ভিজ্যুয়াল কর্টিকাল অঞ্চল ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত। এই সংযোগকে বলে কর্পাস কলোসাম, যা নিউরন, অ্যাক্সন ও ডেনড্রাইট দ্বারা গঠিত। ডেনড্রাইটরা বিপরীত হেমিস্ফিয়ারের সংশ্লিষ্ট বিন্দুর সাথে সায়নাপটিক সংযোগ তৈরি করে, তাই একটি হেমিস্ফিয়ারের প্রতিটি বিন্দুতে বৈদ্যুতিক উদ্দীপনা অন্য হেমিস্ফিয়ারে সম্পর্কিত বিন্দুতে সাড়া সৃষ্টি করে। এই নিয়মের একমাত্র ব্যতিক্রম হল প্রাথমিক ভিজ্যুয়াল কর্টেক্স।
অপটিক ট্র্যাক্ট ল্যাটারাল জেনিকুলেট বডি-এর নির্ধারিত স্তরে সায়নাপস তৈরি করে। এরপর এই তৃতীয়-স্তরের স্নায়ু কোষের অ্যাক্সনগুলি সেরিব্রাল কর্টেক্সের অক্সিপিটাল লোব-এর ক্যালকারাইন ফিশার-এ যায়। যেহেতু এই অঞ্চলে রেটিনাল স্নায়ু কোষের অ্যাক্সন ও হোয়াইট ফাইবার থাকে, একে স্ট্রিয়েট কর্টেক্স বলা হয়। এটি আমাদের প্রাথমিক ভিজ্যুয়াল কর্টেক্স, কখনো কখনো V1 নামেও পরিচিত। এই স্তরে পৃথক দুই চোখের সংকেত একত্রিত হয়ে কর্টিকাল নিউরনে পৌঁছে যায়, যার ফলে দুই চোখ থেকে প্রাপ্ত পূর্ণ সংকেত একটি অঞ্চলে প্রক্রিয়াকরণ ও উপলব্ধি সম্ভব হয়। প্যাটার্ন রিকগনিশন এই মস্তিষ্ক অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ, এবং এখানে ক্ষত হলে দেখা দিতে পারে ভিজ্যুয়াল রিকগনিশন সমস্যা বা অন্ধ দৃষ্টি।
অপটিক ট্র্যাক্টের তন্তুগুলি যেমনভাবে ধারাবাহিকভাবে তথ্য পাঠায় LGN-এ এবং পরে স্ট্রিয়েট অঞ্চলে, ঠিক তেমনি রেটিনার নির্দিষ্ট এক বিন্দুতে উদ্দীপনা দিলে LGN এবং স্ট্রিয়েট কর্টেক্সের নির্দিষ্ট একটি ছোট অঞ্চলে বৈদ্যুতিক প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। এটি স্পষ্টভাবে একটি বিন্দু-থেকে-বিন্দু সংকেত প্রক্রিয়াকরণ। যদি পুরো রেটিনাতে আলো ফেলা হয়, তাহলে প্রতিক্রিয়া উভয় LGN ও স্ট্রিয়েট কর্টেক্সের ধূসর পদার্থে দেখা যাবে। এই মস্তিষ্ক অঞ্চলটিকে রেটিনাল ক্ষেত্র বা সাধারণত ভিজ্যুয়াল ক্ষেত্রের সাথে মানচিত্রাকারে সংযুক্ত করা যায়।
এই পথের পরবর্তী ধাপগুলি এই বইয়ের পরিধির বাইরে। তবে নিশ্চিত থাকুন, আরও অনেক স্তর ও কেন্দ্র রয়েছে, যেগুলি রঙ, দিকনির্দেশনা, স্থানিক ফ্রিকোয়েন্সি, আবেগ ইত্যাদি নির্দিষ্ট কাজের উপর ফোকাস করে।
দৃষ্টিগত ব্যবস্থায় তথ্য প্রক্রিয়াকরণ
[সম্পাদনা]দৃষ্টিগত ব্যবস্থায় সংকেত প্রক্রিয়াকরণের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি ধারণা সম্পর্কে দৃঢ় ধারণা লাভের পর, প্রক্রিয়াজাত সংবেদনশীল তথ্যের অনুধাবন বা উপলব্ধি হচ্ছে ধাঁধাঁটির শেষ গুরুত্বপূর্ণ খণ্ড। দৃষ্টিগত উপলব্ধি হল চোখ দ্বারা প্রাপ্ত তথ্যকে বহির্জগতের অবস্থা সম্পর্কে একটি বোধে রূপান্তর করার প্রক্রিয়া। এটি আমাদের চারপাশের জগৎ সম্পর্কে সচেতন করে তোলে এবং সেটি আরও ভালোভাবে বোঝার সুযোগ দেয়। দৃষ্টিগত উপলব্ধির ভিত্তিতে আমরা ধরণ শিখি, যা আমরা পরবর্তী জীবনে প্রয়োগ করি এবং এই তথ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। অন্যভাবে বললে, আমাদের বেঁচে থাকা এই উপলব্ধির উপর নির্ভরশীল। প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত জটিল এবং বিভিন্ন বিশেষায়িত প্রক্রিয়ার প্রয়োজন হয় বলেই দৃষ্টিগত উপলব্ধির ক্ষেত্রটি বিভিন্ন উপক্ষেত্রে বিভক্ত হয়েছে। এসব উপক্ষেত্রের মধ্যে রয়েছে: রঙ উপলব্ধি, গতি উপলব্ধি, গভীরতা উপলব্ধি, এবং মুখমণ্ডল শনাক্তকরণ ইত্যাদি।
প্রাইমেট ভিজ্যুয়াল কর্টেক্সে গভীর স্তরবিন্যাস
[সম্পাদনা]
যদিও ইলেকট্রনিক সিস্টেমগুলোর গণনাশক্তি ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে, তবুও এমন অনেক কাজ রয়েছে যেখানে প্রাণী এবং মানুষ এখনো কম্পিউটারের তুলনায় অনেক বেশি দক্ষ – তার মধ্যে অন্যতম হলো তথ্যের উপলব্ধি এবং প্রেক্ষাপট বোঝা। প্রচলিত কম্পিউটার, তা আপনার ফোনেই হোক বা একটি বিশাল সুপারকম্পিউটারই হোক না কেন, মূলত একটি সংখ্যা-প্রক্রিয়াকরণ যন্ত্র। এটি ক্ষণিকেই বিপুল পরিমাণ গণনা করতে পারে। কিন্তু এটি যেসব তথ্য নিয়ে কাজ করে, সেগুলোর বিমূর্ত রূপ গঠনে এর ঘাটতি রয়েছে। আপনি যদি একটি ক্যামেরা কম্পিউটারের সঙ্গে সংযুক্ত করেন, তবে এটি যে "দৃশ্য" পায় তা কেবল একগুচ্ছ পিক্সেলের জাল, অর্থাৎ সংখ্যাগুলোর একটি দ্বিমাত্রিক অ্যারে। অথচ একজন মানুষ সঙ্গে সঙ্গে দৃশ্যের জ্যামিতি, বস্তুসমূহ এমনকি কখনও কখনও ঘটনার প্রেক্ষাপটও চিনে নিতে পারে। এই ক্ষমতাটি আমাদের জৈবিক যন্ত্রাংশ — মস্তিষ্কের দৃষ্টিগত ব্যবস্থার — কারণে সম্ভব। এটি যা কিছু আমরা দেখি, সেগুলিকে একটি স্তরভিত্তিক পদ্ধতিতে প্রক্রিয়া করে, যেখানে প্রাথমিক স্তরে চিত্রের সহজ বৈশিষ্ট্যগুলি চিহ্নিত হয় এবং ক্রমান্বয়ে আরও জটিল বৈশিষ্ট্য ও শ্রেণিবিন্যাসে রূপ নেয়। এই কারণেই দৃষ্টিগত ব্যবস্থাকে একটি গভীর স্তরবিন্যাস বলা হয়। প্রাইমেটদের দৃষ্টিগত ব্যবস্থার এই গভীর স্তরবিন্যাস কম্পিউটার বিজ্ঞানীদের অনুপ্রাণিত করেছে এমন কৃত্রিম নিউরাল নেটওয়ার্ক তৈরি করতে, যেগুলিতেও একাধিক স্তর থাকে, এবং প্রতিটি স্তর ইনপুট ডেটার আরও উচ্চতর সাধারণীকরণ তৈরি করে।
মানব নিউকর্ক্টেক্সের প্রায় অর্ধেকই দৃষ্টির জন্য উৎসর্গীকৃত। এখানে তথ্য প্রক্রিয়াকরণ অন্তত ১০টি কার্যকরী স্তরের মাধ্যমে সংঘটিত হয়। প্রাথমিক স্তরের ভিজ্যুয়াল অঞ্চলের নিউরনসমূহ ছোট ছোট স্থানীয় অঞ্চলে সহজ চিত্র বৈশিষ্ট্যগুলো শনাক্ত করে। যখন এই তথ্য উচ্চতর ভিজ্যুয়াল এলাকায় পৌঁছে, তখন নিউরনগুলো আরও জটিল বৈশিষ্ট্যের প্রতি সাড়া দেয়। তথ্য প্রক্রিয়াকরণের উচ্চ স্তরে গেলে, প্রতিনিধিত্বগুলো আরও ইনভারিয়েন্ট হয়ে ওঠে – অর্থাৎ নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যের আকার, ঘূর্ণন বা অবস্থানের পরিবর্তনে সেগুলো প্রভাবিত হয় না। সেইসঙ্গে, উচ্চ স্তরের নিউরনের গ্রহণ ক্ষেত্রের আকারও বৃদ্ধি পায়, যা নির্দেশ করে যে তারা আরও বৃহত্তর বৈশিষ্ট্যের প্রতি সংবেদনশীল। এই স্তরভিত্তিক গঠনটি দক্ষ প্রক্রিয়াকরণ সম্ভব করে তোলে – উচ্চতর ভিজ্যুয়াল অঞ্চলগুলো নিম্ন স্তরের এলাকায় প্রক্রিয়াজাত তথ্যগুলোই কাজে লাগাতে পারে। প্রাথমিক স্তরের ভিজ্যুয়াল এলাকায় তৈরি একটি সাধারণ দৃশ্য বর্ণনা মস্তিষ্কের অন্যান্য অংশ ব্যবহার করে বিভিন্ন কাজ সম্পন্ন করে, যেমন বস্তুর শনাক্তকরণ ও শ্রেণিবিন্যাস, ধরার এবং চালনার পরিকল্পনা, ইত্যাদি।
সাব-কর্টিকাল দৃষ্টি
[সম্পাদনা]দৃষ্টিগত তথ্যের স্নায়বিক প্রক্রিয়াকরণ কর্টিকাল গঠন শুরু হওয়ার আগেই আরম্ভ হয়। রেটিনায় অবস্থিত ফোটোরিসেপ্টরগুলো (আলো সংবেদনশীল কোষ) আলো শনাক্ত করে এবং রেটিনাল গ্যাংলিয়ন কোষগুলোর কাছে সংকেত প্রেরণ করে। একটি ফোটোরিসেপ্টরের গ্রহণক্ষেত্র মাত্র এক শতাংশ ডিগ্রির সমান (এক ডিগ্রি আকৃতির গ্রহণক্ষেত্রটি প্রায় আপনার বৃদ্ধাঙ্গুলির সমান হয়, যদি আপনি হাতটি সামনে প্রসারিত করেন)। একটি গ্যাংলিয়ন কোষে কতগুলো ইনপুট আসবে এবং তার ফলে গ্রহণক্ষেত্র কত বড় হবে তা নির্ভর করে রেটিনায় কোষটির অবস্থানের উপর – রেটিনার কেন্দ্রে এটি মাত্র পাঁচটি রিসেপ্টরের ইনপুট পেতে পারে, অথচ প্রান্তে একটি গ্যাংলিয়ন কোষ কয়েক হাজার ইনপুট পেতে পারে। এটি বোঝায় যে সর্বোচ্চ স্থানিক রেজোলিউশন রেটিনার কেন্দ্রে থাকে, যেটিকে ফোভিয়া বলা হয়। এই বৈশিষ্ট্যের কারণে প্রাইমেটদের দৃষ্টিকে নিয়ন্ত্রণ করার একটি প্রক্রিয়া থাকে, যা তাদের চোখের দৃষ্টি এমনভাবে পরিচালিত করে যাতে আগ্রহের বস্তুগুলির বৈশিষ্ট্যগুলো ফোভিয়ায় পড়ে।
গ্যাংলিয়ন কোষগুলো বেছে বেছে বিভিন্ন চিত্র বৈশিষ্ট্য সনাক্ত করতে সজ্জিত থাকে, যেমন উজ্জ্বলতার বৈসাদৃশ্য, রঙের বৈসাদৃশ্য, এবং গতি ও দিক নির্দেশ। এসব বৈশিষ্ট্যই পরবর্তী স্তরের প্রক্রিয়াকরণের জন্য মূল প্রাথমিক তথ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যদি কোনো দৃষ্টিগত উদ্দীপনা থাকে যা গ্যাংলিয়ন কোষ দ্বারা সনাক্তযোগ্য নয়, তবে সেটি কোনো কর্টিকাল ভিজ্যুয়াল এলাকাতেও উপলব্ধ হবে না।
গ্যাংলিয়ন কোষগুলো থ্যালামাসের একটি অঞ্চলে সংকেত প্রেরণ করে, যাকে ল্যাটারাল জেনিকুলেট নিউক্লিয়াস (LGN) বলা হয়, যা পরবর্তীতে সংকেতগুলো কর্টেক্সে পাঠায়। LGN-এ গুরুত্বপূর্ণ কোনো প্রক্রিয়াকরণ ঘটে বলে এখনো জানা যায়নি – এখানে রেটিনাল গ্যাংলিয়ন কোষ এবং LGN কোষগুলোর মধ্যে প্রায় এক-একটি করে সাদৃশ্য থাকে। তবে LGN-এ মাত্র ৫% ইনপুট রেটিনা থেকে আসে – বাকি সব ইনপুট আসে কর্টিকাল প্রতিক্রিয়া থেকে। যদিও দৃষ্টিগত ব্যবস্থাকে প্রায়ই একটি ফিড-ফরোয়ার্ড ব্যবস্থা হিসেবে বিবেচনা করা হয়, তবুও প্রতিক্রিয়ামূলক সংযোগ এবং পার্শ্বসংযোগ দৃষ্টিগত কর্টেক্স জুড়েই একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য। এই প্রতিক্রিয়াগুলোর ভূমিকা এখনো পুরোপুরি বোঝা যায়নি, তবে ধারণা করা হয় যে এগুলো মনোযোগ, প্রত্যাশা, কল্পনা এবং অনুপস্থিত তথ্য পূরণ করার মতো প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত।
কর্টিকাল ভিশন
[সম্পাদনা]
ভিজ্যুয়াল কর্টেক্সকে তিনটি বড় অংশে ভাগ করা যায় – অক্সিপিটাল অংশ, যা LGN (ল্যাটারাল জেনিকুলেট নিউক্লিয়াস) থেকে ইনপুট গ্রহণ করে এবং এরপর ডরসাল ও ভেন্ট্রাল স্ট্রিমে আউটপুট পাঠায়। অক্সিপিটাল অংশে অন্তর্ভুক্ত থাকে V1-V4 এবং MT অঞ্চলসমূহ, যেগুলো দৃষ্টিগত তথ্যের বিভিন্ন দিক প্রক্রিয়াকরণ করে এবং একটি সাধারণ দৃশ্য উপস্থাপনা গঠন করে। ডরসাল পথটি স্থানগত বিশ্লেষণ এবং ক্রিয়া পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত। ভেন্ট্রাল পথটি বস্তু সনাক্তকরণ ও শ্রেণিবিন্যাসের সঙ্গে সম্পর্কিত।
V1 হলো প্রথম কর্টিকাল এলাকা যেখানে দৃষ্টিগত তথ্য প্রক্রিয়াকরণ শুরু হয়। এটি প্রান্ত, রেখা, রেখার শেষাংশ, গতি, রং এবং ডিসপ্যারিটি (একটি বিন্দুর বাম ও ডান রেটিনায় প্রতিফলিত কোণের পার্থক্য)-এর প্রতি সংবেদনশীল। নীচু স্তরের ধারাবাহিক প্রক্রিয়াকরণের সবচেয়ে সাধারণ উদাহরণ হলো একাধিক গ্যাংলিয়ন কোষের কেন্দ্র-পরিবেষ্টি গ্রহণক্ষেত্রের ইনপুটকে একত্র করে একটি বারের উপস্থাপনা তৈরি করা। এটি V1-এর সিম্পল কোষগুলো দ্বারা সম্পন্ন হয় এবং প্রথমবার এই প্রক্রিয়াটি বিশিষ্ট নিউরোসায়েন্টিস্ট হাবেল ও উইসেল বর্ণনা করেন। এই ধরণের তথ্য একত্রিতকরণ নির্দেশ করে যে সিম্পল কোষগুলো বারের নির্দিষ্ট অবস্থানের প্রতি সংবেদনশীল এবং এদের গ্রহণক্ষেত্র তুলনামূলকভাবে ছোট। V1-এর কমপ্লেক্স কোষগুলো সিম্পল কোষগুলো থেকে ইনপুট গ্রহণ করে এবং রেখাচিত্রের মতো ধরণে সাড়া দিলেও বারের নির্দিষ্ট অবস্থানের প্রতি সংবেদনশীল নয় এবং এদের গ্রহণক্ষেত্র বড়। এই ধাপে সম্পন্ন গণনার ধরন হতে পারে ম্যাক্স-জাতীয় কোনো প্রক্রিয়া, যেখানে প্রতিক্রিয়া সেই উত্তেজনার অনুরূপ যা পৃথক উদ্দীপনাগুলোর মধ্যে বৃহত্তর। কিছু সিম্পল ও কমপ্লেক্স কোষ একটি বারের শেষ প্রান্ত সনাক্ত করতে সক্ষম, এবং V1-এর কিছু কোষ নিজ নিজ গ্রহণক্ষেত্রে স্থানীয় গতির প্রতিও সংবেদনশীল।
V2 এলাকাটি আরও জটিল রেখা উপস্থাপনা প্রক্রিয়াকরণ করে, যার মধ্যে টেক্সচারে সংজ্ঞায়িত রেখা, বিভ্রমাত্মক রেখা এবং সীমানা মালিকানার ধারণাসম্পন্ন রেখা অন্তর্ভুক্ত। V2 অঞ্চল V1-এর অ্যাবসোলিউট ডিসপ্যারিটি শনাক্তকরণের উপর ভিত্তি করে কাজ করে এবং এমন কোষ নিয়ে গঠিত যা রিলেটিভ ডিসপ্যারিটি (দুইটি বিন্দুর অ্যাবসোলিউট ডিসপ্যারিটির পার্থক্য)-র প্রতি সংবেদনশীল।
V4 অঞ্চল V2 এবং V3 অঞ্চল থেকে ইনপুট গ্রহণ করে, যদিও V3-তে কী ধরণের প্রক্রিয়াকরণ হয় সে সম্পর্কে খুব কমই জানা যায়। V4-এ এমন নিউরন থাকে যা বিভিন্ন বাঁকানো রেখা এবং নির্দিষ্ট কোণে বিন্দুর প্রতি সংবেদনশীল। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো আলোকমাত্রা-অপরিবর্তনশীল রঙ এর কৌশলগত সংরক্ষণ। এটি V1-এর বিপরীতে, যেখানে নিউরনগুলো প্রকৃত রঙের পরিবর্তে প্রধান দুটি বিরোধী রঙের অক্ষ (লাল-সবুজ এবং হলুদ-নীল) বরাবর রঙের প্রতিক্রিয়া দেখায়। V4 অঞ্চলটি এরপর ভেন্ট্রাল স্ট্রিমে সংকেত পাঠায়, যেখানে ইনফেরিয়র টেম্পোরাল কর্টেক্স (IT) অন্তর্ভুক্ত – লেশান গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে এটি বস্তু পার্থক্য নির্ধারণে অপরিহার্য।
ইনফেরিয়র টেম্পোরাল কর্টেক্স: বস্তুর পার্থক্য নির্ধারণ
[সম্পাদনা]
ইনফেরিয়র টেম্পোরাল কর্টেক্স (IT) দুটি অঞ্চলে বিভক্ত: TEO এবং TE। TEO অঞ্চলটি একাধিক রেখার উপাদান ও তাদের আপেক্ষিক অবস্থান সম্পর্কিত তথ্য একত্রিত করে এবং সাধারণত এমন কোষ দ্বারা গঠিত যা সহজ বৈশিষ্ট্যের সংমিশ্রণে সাড়া দেয়। TEO নিউরনগুলোর গ্রহণক্ষেত্রের পরিসর প্রায় ৩–৫ ডিগ্রি। অপরদিকে, TE অঞ্চলে এমন কোষ থাকে যাদের গ্রহণক্ষেত্র অনেক বড় (প্রায় ১০–২০ ডিগ্রি) এবং যেগুলো মুখ, হাত এবং জটিল বৈশিষ্ট্যসমষ্টিতে সাড়া দেয়। TE অঞ্চলের কোষগুলো এমন ভিজ্যুয়াল বৈশিষ্ট্যে প্রতিক্রিয়া জানায়, যা আগ্রহের বস্তুটির সাধারণীকৃত কিন্তু জটিল উপস্থাপন, এবং সাধারণ রেখা বা বিন্দুর চেয়ে বেশি জটিল। তানাকা ও সহকর্মীরা উদ্দীপক-হ্রাস পদ্ধতি ব্যবহার করে এটি প্রদর্শন করেন, যেখানে প্রথমে একটি বস্তুর প্রতিক্রিয়া মাপা হয় এবং এরপর বস্তুটি ক্রমশ সরল উপস্থাপনায় প্রতিস্থাপন করা হয় যতক্ষণ না সেই গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য নির্ধারিত হয় যেটিতে TE নিউরন সাড়া দিচ্ছে।
প্রমাণ থেকে বোঝা যায় যে IT অঞ্চলের নিউরনগুলো ভেন্ট্রাল স্ট্রিমের নিম্নস্তর থেকে মধ্যম-জটিলতার বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য একত্র করে বস্তুর অংশগুলোর মডেল তৈরি করে। TE অঞ্চলের যেসব নিউরন নির্দিষ্ট বস্তুর প্রতি নির্বাচনী, সেগুলোকে দুটি আপাতবিরোধী শর্ত পূরণ করতে হয় – নির্বাচনীতা এবং অপরিবর্তনীয়তা। একদিকে, বিভিন্ন বস্তুর মধ্যে পার্থক্য নির্ধারণের জন্য তাদের রেটিনাল চিত্রের বৈশিষ্ট্যের প্রতি সংবেদনশীল হতে হয়; অন্যদিকে, একই বস্তু বিভিন্ন কোণ, দূরত্ব ও আলোর অবস্থানে ভিন্ন ভিন্নভাবে দেখা যেতে পারে, যা একই বস্তুর রেটিনায় ভিন্ন চিত্র তৈরি করে। এই ভিন্ন চিত্রগুলোকে সমতুল্য হিসেবে বিবেচনা করার জন্য নির্দিষ্ট কিছু বৈশিষ্ট্য অপরিবর্তনীয় হতে হয়, যেমন – অবস্থান, আলোক-প্রক্ষেপণ, রেটিনায় আকার পরিবর্তন ইত্যাদির প্রতিক্রিয়ায় স্থিতিশীলতা। TE অঞ্চলের নিউরনগুলো অবস্থান ও আকার পরিবর্তনের পাশাপাশি আংশিক আবৃত থাকা, গভীরতার অবস্থান এবং আলোর দিক পরিবর্তনের প্রতিও অপরিবর্তনীয়তা প্রদর্শন করে। তবে গভীরতার ঘূর্ণনের প্রতি অপরিবর্তনীয়তা তুলনামূলকভাবে দুর্বল, যদিও মানুষের মুখের ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম রয়েছে।
এখনও পর্যন্ত TE অঞ্চলে নির্দিষ্ট বস্তু বিভাগের সুস্পষ্ট উপস্থাপনা পাওয়া যায়নি – কোনো একটি নিউরন হয়তো একই বিভাগের (যেমন গাছের ছবি) একাধিক উদাহরণে সাড়া দিতে পারে, আবার বিভিন্ন বিভাগের (যেমন গাছ এবং অগাছ) উদাহরণেও সাড়া দিতে পারে। বস্তু সনাক্তকরণ ও শ্রেণিবিন্যাস সম্ভবত TE অঞ্চলের বৃহৎ নিউরনসমষ্টি থেকে নমুনা সংগ্রহের মাধ্যমে এবং অন্যান্য মস্তিষ্ক অঞ্চলের ইনপুট গ্রহণের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়, যেমন – যে অঞ্চলগুলো দৃশ্যের প্রেক্ষাপট বোঝার জন্য দায়ী। সাম্প্রতিক রিডআউট পরীক্ষায় দেখা গেছে যে পরিসংখ্যানভিত্তিক শ্রেণিবিভাজক (যেমন সার্পোট ভেক্টর যন্ত্র) একটি স্বল্প সংখ্যক TE নিউরনের প্রতিক্রিয়ার উপর ভিত্তি করে বস্তুর শ্রেণিবিন্যাস শিখতে পারে। সুতরাং, একটি নিউরনসমষ্টির সম্মিলিত কার্যকলাপ নির্ভরযোগ্যভাবে বস্তুর শ্রেণী সংকেত দিতে পারে। আকর্ষণীয়ভাবে, মেডিয়াল টেম্পোরাল লোবেও অত্যন্ত নির্বাচনী নিউরনের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে, যেগুলো নির্দিষ্ট সংকেতে সাড়া দেয় – যেমন পিসার টাওয়ারের বিভিন্ন ছবি বা কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তির মুখাবয়ব।
দৃষ্টিশক্তি ব্যবস্থায় শেখার ভূমিকা
[সম্পাদনা]শেখা নিউরনের ভিজ্যুয়াল বৈশিষ্ট্য নির্বাচনীতা পরিবর্তন করতে পারে, এবং এই শেখার প্রভাব ক্রমান্বয়ে উচ্চতর স্তরগুলোতে আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। রেটিনায় শেখার কোনো প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি এবং V1 অঞ্চলের অরিয়েন্টেশন ম্যাপসমূহ মূলত জেনেটিকভাবে পূর্বনির্ধারিত বলে ধারণা করা হয়। তবে, অভ্যাসের মাধ্যমে নির্দিষ্ট অরিয়েন্টেশন সনাক্ত করার দক্ষতা অর্জন করলে V1 নিউরনের অরিয়েন্টেশন কোডিংয়ের মানোন্নতি ঘটে – যেমন টিউনিং কার্ভের ঢাল বৃদ্ধি পায়। একই ধরণের প্রভাব V4 অঞ্চলেও দেখা যায়, তবে তা আরও বৃহৎ পরিসরে।
TE অঞ্চলে তুলনামূলকভাবে সামান্য পরিমাণ ভিজ্যুয়াল প্রশিক্ষণও দৃশ্যগত উপলব্ধির উপর তাৎপর্যপূর্ণ শারীরবৃত্তীয় প্রভাব ফেলে, যা একক কোষ স্তরে এবং fMRI-তেও লক্ষ্য করা যায়। উদাহরণস্বরূপ, দুটি বস্তুকে একে অপরের মধ্যে রূপান্তর করলে সেগুলোর পারস্পরিক সাদৃশ্যের অনুভূতি বৃদ্ধি পায়।
সামগ্রিকভাবে, দেখা যায় যে প্রাপ্তবয়স্কদের ভিজ্যুয়াল কর্টেক্সও উল্লেখযোগ্যভাবে নমনীয় এবং এই নমনীয়তার মাত্রা বিভিন্ন উপায়ে বৃদ্ধি করা সম্ভব – যেমন নির্দিষ্ট ওষুধ প্রয়োগ বা পরিবেশগতভাবে সমৃদ্ধ পরিবেশে বসবাসের মাধ্যমে।
ডিপ নিউরাল নেটওয়ার্ক
[সম্পাদনা]প্রাইমেটদের ভিজ্যুয়াল সিস্টেমের গভীর স্তরবিন্যাসের অনুরূপভাবে, ডিপ লার্নিং আর্কিটেকচারগুলো ইনপুট ডেটার উচ্চ-স্তরের বিমূর্ত ধারণা তৈরি করার জন্য একাধিক স্তরের অ-রৈখিক রূপান্তর ব্যবহার করে। হুবেল এবং উইজেলের প্রস্তাবিত মডেল, যেখানে তথ্য রেটিনা ও এলজিএন (LGN) থেকে শুরু করে V1-এর সিম্পল এবং কমপ্লেক্স সেলে পর্যায়ক্রমে সংহত ও প্রেরণ হয়, তা অনুপ্রাণিত করেছিল প্রথম দিকের এক ডিপ লার্নিং আর্কিটেকচারের উদ্ভব – নিউকগনিট্রন। এটি একটি বহুস্তরবিশিষ্ট কৃত্রিম স্নায়ু নেটওয়ার্ক মডেল, যা হাতে লেখা অক্ষর সনাক্তকরণের মতো বিভিন্ন প্যাটার্ন শনাক্তকরণ কাজে ব্যবহৃত হয়েছিল। তবে এই নেটওয়ার্ক প্রশিক্ষণ দিতে অনেক সময় লাগত (দিন ধরে), এবং ১৯৮০-এর দশকে আবির্ভাবের পর থেকে ডিপ লার্নিং বিশেষ গুরুত্ব পায়নি, যতক্ষণ না ২০০০-এর দশকের মাঝামাঝি পর্যাপ্ত ডিজিটাল ডেটা এবং দ্রুত প্রশিক্ষণের অ্যালগরিদম আবিষ্কৃত হয়।
ডিপ নিউরাল নেটওয়ার্কসমূহ সেইসব কাজে অত্যন্ত কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে যা কিছুদিন আগেও শুধুমাত্র মানুষের পক্ষে সম্ভব বলে মনে হতো – যেমন, ছবি থেকে নির্দিষ্ট মানুষের মুখ শনাক্ত করা, মানুষের ভাষা বোঝা (আংশিকভাবে), এবং বিদেশি ভাষার পাঠ্য অনুবাদ করা। এছাড়াও, শিল্প ও বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে ডিপ লার্নিং অত্যন্ত সহায়ক – যেমন সম্ভাব্য ওষুধের প্রার্থী খোঁজা, মস্তিষ্কের প্রকৃত নিউরাল নেটওয়ার্ক ম্যাপ করা, এবং প্রোটিনের কার্যাবলি পূর্বাভাস দেওয়া।
তবে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, ডিপ লার্নিং মস্তিষ্ক থেকে খুব সামান্য অনুপ্রেরণা নিয়েছে – এটি মূলত কম্পিউটার বিজ্ঞান ও মেশিন লার্নিং-এর একটি অর্জন, স্নায়ুবিজ্ঞানের নয়। মৌলিক সাদৃশ্য হলো যে, ডিপ নিউরাল নেটওয়ার্ক গঠিত হয় ইউনিট দ্বারা, যেগুলো ইনপুট তথ্যকে অ-রৈখিকভাবে সংহত করে (নিউরনের মতো) এবং একে অপরকে সংকেত পাঠায় (সিন্যাপ্সের মতো), এবং বিভিন্ন স্তরে ধাপে ধাপে বিমূর্ত ডেটা উপস্থাপন তৈরি হয়। কিন্তু ডিপ লার্নিং-এ ব্যবহৃত শেখার অ্যালগরিদম ও গাণিতিক নিউরন মডেলগুলো মস্তিষ্কের প্রকৃত কার্যপ্রক্রিয়া থেকে অনেকটাই ভিন্ন। ফলে, ডিপ লার্নিং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় বিপ্লব ঘটালেও, মস্তিষ্ক সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানে সীমিত অবদান রাখে।

তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ভিজ্যুয়াল সিস্টেমের গভীর স্তরবিন্যাস নিয়ে প্রবন্ধসমূহ
Kruger, N.; Janssen, P.; Kalkan, S.; Lappe, M.; Leonardis, A.; Piater, J.; Rodriguez-Sanchez, A. J.; Wiskott, L. (আগস্ট ২০১৩)। "Deep Hierarchies in the Primate Visual Cortex: What Can We Learn for Computer Vision?"। IEEE Transactions on Pattern Analysis and Machine Intelligence। 35 (8): 1847–1871। doi:10.1109/TPAMI.2012.272।
Poggio, Tomaso; Riesenhuber, Maximilian (১ নভেম্বর ১৯৯৯)। Nature Neuroscience। 2 (11): 1019–1025। doi:doi:10.1038/14819 |doi=
এর মান পরীক্ষা করুন (সাহায্য)। |শিরোনাম=
অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য)
- উত্তেজনা হ্রাস সংক্রান্ত পরীক্ষা
Tanaka, Keiji (মার্চ ১৯৯৬)। "Inferotemporal Cortex and Object Vision"। Annual Review of Neuroscience। 19 (1): 109–139। doi:10.1146/annurev.ne.19.030196.000545।
- ভিজ্যুয়াল সিস্টেমে শেখার প্রমাণ
Li, Nuo; DiCarlo, James J. (২৩ সেপ্টেম্বর ২০১০)। "Unsupervised Natural Visual Experience Rapidly Reshapes Size-Invariant Object Representation in Inferior Temporal Cortex"। Neuron। 67 (6): 1062–1075। doi:10.1016/j.neuron.2010.08.029।
Raiguel, S.; Vogels, R.; Mysore, S. G.; Orban, G. A. (১৪ জুন ২০০৬)। "Learning to See the Difference Specifically Alters the Most Informative V4 Neurons"। Journal of Neuroscience। 26 (24): 6589–6602। doi:10.1523/JNEUROSCI.0457-06.2006।
Schoups, A; Vogels, R; Qian, N; Orban, G (২ আগস্ট ২০০১)। "Practising orientation identification improves orientation coding in V1 neurons."। Nature। 412 (6846): 549–53। PMID 11484056।
- ডিপ লার্নিং গবেষণার বর্তমান অবস্থা নিয়ে একটি সাম্প্রতিক ও সহজবোধ্য পর্যালোচনা
Jones, Nicola (৮ জানুয়ারি ২০১৪)। "Computer science: The learning machines"। Nature। 505 (7482): 146–148। doi:10.1038/505146a।
গতি অনুধাবন
[সম্পাদনা]গতি অনুধাবন হল চলমান বস্তুর গতি ও দিক নির্ধারণের প্রক্রিয়া। মানুষের ক্ষেত্রে V5 এলাকা এবং প্রাইমেটদের ক্ষেত্রে MT এলাকা কর্টিকাল স্তরে গতি অনুধাবনের জন্য দায়ী। V5 এলাকা এক্সট্রাস্ট্রাইয়েট কর্টেক্সের অংশ, যা ব্রেইনের অক্সিপিটাল অঞ্চলের প্রাইমারি ভিজ্যুয়াল কর্টেক্সের পাশে অবস্থিত। V5 এলাকার কাজ হল দৃশ্যমান উদ্দীপনার গতি ও দিক নির্ধারণ করা এবং স্থানীয় গতি সংকেতকে সমন্বিত করে একটি সামগ্রিক গতি ধারণা তৈরি করা। V1 এলাকা বা প্রাইমারি ভিজ্যুয়াল কর্টেক্স ব্রেইনের উভয় গোলার্ধের অক্সিপিটাল লোব-এ অবস্থিত। এটি দৃষ্টিগত তথ্যের কর্টিকাল প্রক্রিয়াকরণের প্রথম ধাপ সম্পাদন করে। এই এলাকাটি চোখ দ্বারা আবৃত দৃষ্টিক্ষেত্রের একটি পূর্ণাঙ্গ মানচিত্র ধারণ করে। V5 এবং V1 এলাকার মধ্যে পার্থক্য হল, V5 স্থানীয় সংকেত বা বস্তুটির বিভিন্ন অংশের গতি একত্র করে সম্পূর্ণ বস্তুটির গ্লোবাল গতি অনুধাবন করতে পারে। অপরদিকে, V1 প্রতিক্রিয়া জানায় কেবল সেই স্থানীয় গতির প্রতি, যা রিসেপ্টিভ ফিল্ডের মধ্যে ঘটে। বহু নিউরনের অনুমানগুলো V5 এলাকায় একত্রিত হয়।
গতি সংজ্ঞায়িত হয় রেটিনাতে আলোর পরিবর্তনের মাধ্যমে, যা স্থান ও সময়ের সাথে পরিবর্তিত হয়। গতি সংকেতকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়: প্রথম শ্রেণির গতি এবং দ্বিতীয় শ্রেণির গতি। এই দুটি প্রকার সংক্ষেপে নিচে বর্ণনা করা হয়েছে।

প্রথম শ্রেণির গতি অনুধাবন বোঝায় সেই গতি, যা অনুভূত হয় যখন দুই বা ততোধিক দৃষ্টিগত উদ্দীপনা সময়ের সাথে চালু ও বন্ধ হয় এবং ভিন্ন ভিন্ন গতির অনুভূতি তৈরি করে। প্রথম শ্রেণির গতিকে "অ্যাপারেন্ট মোশন"ও বলা হয় এবং এটি টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রে ব্যবহৃত হয়। এর একটি উদাহরণ হল "বেটা গতি", যা একটি ভ্রম, যেখানে স্থির চিত্রগুলো চলমান বলে মনে হয়, যদিও বাস্তবে তারা চলমান নয়। এই ছবিগুলো গতি প্রদর্শন করে কারণ তারা এত দ্রুত পরিবর্তিত হয় যে চোখ সেগুলোর পৃথকতা ধরতে পারে না। এই ভ্রমটি ঘটে কারণ মানব অপটিক নার্ভ প্রতি সেকেন্ডে দশবার আলোর পরিবর্তনে সাড়া দেয়; ফলে এর চেয়ে দ্রুত কোনো পরিবর্তন ধারাবাহিক গতি হিসেবে নিবন্ধিত হয়, পৃথক চিত্র হিসেবে নয়।
দ্বিতীয় শ্রেণির গতি বোঝায় সেই গতি, যা ঘটে যখন চলন্ত কনট্যুর কনট্রাস্ট, টেক্সচার, ফ্লিকার বা অন্য কোনো গুণ দ্বারা সংজ্ঞায়িত হয়, যা ছবির আলোকতীব্রতা বা গতি শক্তি বৃদ্ধি করে না। প্রমাণ পাওয়া গেছে যে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির গতির প্রাথমিক প্রক্রিয়াকরণ পৃথক পথে ঘটে। দ্বিতীয় শ্রেণির গতি ব্যবস্থার টেম্পোরাল রেজোলিউশন দুর্বল এবং এরা নিম্ন ফ্রিকোয়েন্সিতে সাড়া দেয়। দ্বিতীয় শ্রেণির গতি তুলনামূলকভাবে দুর্বল মোশন আফটারইফেক্ট তৈরি করে। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সংকেতগুলো শেষ পর্যন্ত V5 এলাকায় একত্রিত হয়।
এই অধ্যায়ে আমরা গতি অনুধাবন ও গতি বিশ্লেষণের ধারণাগুলো বিশ্লেষণ করব এবং ব্যাখ্যা করব কেন এই দুই শব্দ পরস্পর বিনিময়যোগ্য নয়। আমরা ব্যাখ্যা করব গতি কিভাবে অনুভূত হয়, যেমন গতি সেন্সর ও ফিচার ট্র্যাকিং এর মাধ্যমে। নিউরনের গতি শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করতে তিনটি প্রধান তাত্ত্বিক মডেল বিদ্যমান। পরীক্ষামূলক গবেষণায় দেখা গেছে, এই মডেলগুলোর কোনোটিই সম্পূর্ণভাবে গতি সেন্সরের কার্যপদ্ধতিকে ব্যাখ্যা করতে পারে না, তবে প্রতিটি মডেলই সেন্সরের নির্দিষ্ট কিছু বৈশিষ্ট্য অনুকরণ করে। এই সেন্সরগুলোর কিছু বৈশিষ্ট্য এখানে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। অবশেষে, এই অধ্যায়ে কিছু গতি বিভ্রম প্রদর্শন করা হয়েছে, যা দেখায় যে আমাদের গতি অনুভূতি কিভাবে স্থির বাহ্যিক উপাদানের দ্বারা প্রতারিত হতে পারে, যেগুলো আসল গতির মতোই গতি সেন্সরকে উদ্দীপিত করে।
গতি বিশ্লেষণ ও গতি অনুধাবন
[সম্পাদনা]গতি বিশ্লেষণ এবং গতি অনুধাবন শব্দ দুটি প্রায়ই একে অপরের পরিবর্তে ব্যবহার করা হয়, তবে এদের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে। গতি অনুধাবন ও গতি বিশ্লেষণ একে অপরের পরিপূরক হলেও, এরা এক নয়।
গতি বিশ্লেষণ বলতে সেই প্রক্রিয়াকে বোঝায় যার মাধ্যমে গতির সংকেতগুলো প্রক্রিয়াকৃত হয়। যেমনভাবে গতি অনুধাবন প্রয়োজনে রেটিনায় ছবির গতি থেকে উৎপন্ন সংকেতের উপর নির্ভর না-ও করতে পারে, তেমনিভাবে গতি বিশ্লেষণও গতি অনুধাবনের দিকে নিয়ে যেতেই হবে এমন নয়। এই ঘটনার একটি উদাহরণ হল ভেকশন, যা তখন ঘটে যখন কেউ অনুভব করে যে সে নিজেই চলমান, অথচ বাস্তবে সে স্থির এবং কেবল সে যে বস্তুটিকে দেখছে তা চলমান। ভেকশন দেখায় যে কোনো বস্তুর গতি বিশ্লেষণ করা যেতে পারে, যদিও সেই গতি বস্তুটির দিক থেকে আসা গতি হিসেবে অনুধাবিত না-ও হতে পারে।
এই সংজ্ঞা থেকে বোঝা যায় যে গতি একটি মৌলিক চিত্র বৈশিষ্ট্য। দৃশ্যপটে এটি প্রতিটি বিন্দুতে বিশ্লেষিত হয়। এই বিশ্লেষণ থেকে প্রাপ্ত ফলাফল ব্যবহার করে অনুধাবন সংক্রান্ত তথ্য তৈরি হয়।
গতি অনুধাবন বলতে বোঝায় বস্তু ও পৃষ্ঠের গতির সম্পর্কে অনুধাবনমূলক জ্ঞান অর্জনের প্রক্রিয়া। গতি অনুধাবন ঘটে হয় রেটিনার সূক্ষ্ম স্থানীয় সেন্সরের মাধ্যমে, নয়তো বৈশিষ্ট্য অনুসরণের মাধ্যমে। স্থানীয় গতির সেন্সরগুলো হল বিশেষায়িত নিউরন, যেগুলো গতি সংবেদনশীল এবং যেগুলো রঙ সংবেদনশীল সেন্সরের মতোই বিশেষায়িত। বৈশিষ্ট্য অনুসরণ একটি পরোক্ষ উপায়ে গতি অনুধাবনের পদ্ধতি, যেখানে বস্তুর রেটিনাল অবস্থানের পরিবর্তনের ভিত্তিতে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গতি অনুধাবন করা হয়। একে তৃতীয় শ্রেণির গতি বিশ্লেষণ বলেও ডাকা হয়। বৈশিষ্ট্য অনুসরণ কাজ করে কোনো নির্দিষ্ট বস্তুর উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করে এবং পর্যবেক্ষণ করে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার অবস্থান কীভাবে পরিবর্তিত হয়েছে।
গতি সেন্সর
[সম্পাদনা]দৃশ্য প্রক্রিয়াকরণের প্রথম ধাপ হলো গতির সনাক্তকরণ, এবং এটি ঘটে বিশেষায়িত স্নায়বিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে, যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চিত্রের তীব্রতার স্থানীয় পরিবর্তনের তথ্যের প্রতি সাড়া দেয়। চিত্রের প্রতিটি স্থানে গতি অন্যান্য চিত্র বৈশিষ্ট্য থেকে স্বতন্ত্রভাবে অনুভূত হয়। এটি প্রমাণিত হয়েছে যে গতি সেন্সর বিদ্যমান, এবং তারা চিত্রের প্রতিটি বিন্দুতে স্থানীয়ভাবে কাজ করে। গতি সেন্সর হলো রেটিনায় অবস্থানরত নিবেদিত নিউরন সেন্সর, যা এমন গতিও সনাক্ত করতে সক্ষম যা দুটি ক্ষণস্থায়ী ও ক্ষুদ্র আলোক ঝলকের মাধ্যমে উৎপন্ন হয়—যা এতটাই ঘনিষ্ঠ যে বৈশিষ্ট্য অনুসরণ এর মাধ্যমে সনাক্ত করা সম্ভব নয়। এই বিশেষায়িত সেন্সরগুলো কীভাবে কাজ করে তা বর্ণনা করতে তিনটি প্রধান মডেল বিদ্যমান। এই মডেলগুলো একে অপরের থেকে স্বাধীন এবং গতি অনুধাবনের নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য মডেল করতে চায়। যদিও এই মডেলগুলোর কোনোটিই গতি সেন্সর কীভাবে গতি অনুধাবন করে তা পুরোপুরি বোঝাতে সক্ষম নয়, তবুও এরা কিছু কার্যকরী দিক যথাযথভাবে অনুকরণ করে।

রেইখার্ট ডিটেক্টর
রেইখার্ট ডিটেক্টর ব্যবহৃত হয় কীভাবে গতি সেন্সর প্রথম শ্রেণির গতির সংকেত-এর প্রতি সাড়া দেয় তা মডেল করতে। যখন কোনো বস্তু চাক্ষুষ ক্ষেত্রে বিন্দু A থেকে বিন্দু B-তে সরে যায়, তখন দুটি সংকেত উৎপন্ন হয়: একটি গতি শুরু হওয়ার আগে এবং অপরটি গতি শেষ হওয়ার পরে। এই মডেল গতি অনুধাবন করে রেটিনার এক বিন্দুতে আলোকমাত্রার পরিবর্তন শনাক্ত করে এবং তা সংলগ্ন আরেকটি বিন্দুর পরিবর্তনের সঙ্গে এক স্বল্প বিলম্বের পর মিলিয়ে দেখে।
রেইখার্ট ডিটেক্টর কার্যকর হয় সহসম্পর্কের নীতির ভিত্তিতে—একটি গাণিতিক সম্পর্ক যেখানে নির্ভরতা থাকে। এটি গতির সংকেত অনুধাবন করে সংলগ্ন বিন্দুতে স্থানিক-কালিক আলোকমাত্রা সংকেতের সহসম্পর্কের মাধ্যমে। এই মডেল ধরে নেয় যে, কোনো চলমান বস্তুর পথে অবস্থিত দুটি রিসেপ্টিভ ফিল্ড ভিন্ন সময়ে একই সংকেতের আলোকমাত্রা ধরছে—আলোকমাত্রার একটি ধারা অক্ষ বরাবর সরে যাচ্ছে এবং সেই অক্ষে এক বিন্দুর সংকেত হলো পূর্ববর্তী সংকেতের সময় স্থানান্তরিত রূপ।
রেইখার্ট মডেলে দুটি স্থানিকভাবে আলাদা সংলগ্ন ডিটেক্টর থাকে। ডিটেক্টরের আউটপুট সংকেতগুলোকে গুণ করা হয়। এইভাবে: একটি সংকেতকে গুণ করা হয় তার সময়-বিলম্বিত সংস্করণের সঙ্গে। একই পদ্ধতি আবার বিপরীত দিকের গতির জন্য প্রয়োগ করা হয়। তারপর, এই দুই গুণফলের মধ্যে পার্থক্য নেওয়া হয়, এবং সেই ফলাফল গতি নির্দেশ করে। এই ডিটেক্টরের সাড়া নির্ভর করে উদ্দীপকের ফেজ, কনট্রাস্ট ও গতির উপর। সত্যিকারের গতির মান সঠিকভাবে এনকোড করতে বিভিন্ন গতি সংবেদনশীল বহু ডিটেক্টর প্রয়োজন। এই ধরণের ডিটেক্টরের সবচেয়ে জোরালো প্রমাণ এসেছে খুবই ক্ষীণ দৃশ্যমান লক্ষ্যবস্তুর দিকনির্ধারণমূলক গবেষণা থেকে।
মোশন-এনার্জি ফিল্টারিং
মোশন এনার্জি ফিল্টার হলো গতি সেন্সরের একটি মডেল যা ফেজ ইনভারিয়েন্ট ফিল্টারের নীতির উপর ভিত্তি করে গঠিত। এই মডেল স্থান-কালিক ফিল্টার তৈরি করে যেগুলো স্পেস-টাইমে এমনভাবে সাজানো হয় যেন চলন্ত প্যাটার্নের গঠন মিলে যায়। এতে ব্যবহৃত হয় পৃথকযোগ্য ফিল্টার, যাদের স্থানিক প্রোফাইল সময়ের সঙ্গে একই থাকে, কিন্তু তা সময়গত ফিল্টারের মান দ্বারা স্কেল করা হয়। মোশন এনার্জি ফিল্টার চলন্ত প্যাটার্নের গঠন মেলাতে এসব ফিল্টারকে যোগ করে। প্রতিটি গতির দিকের জন্য দুটি স্পেস-টাইম ফিল্টার তৈরি করা হয়: একটি সিমেট্রিক (বার-আকৃতির) এবং অপরটি অ্যাসিমেট্রিক (ধার-আকৃতির)। এই ফিল্টারগুলোর স্কোয়ারের যোগফলকে বলা হয় মোশন এনার্জি, এবং দুই দিকের সংকেতের পার্থক্যকে বলা হয় অপোনেন্ট এনার্জি। এই ফলাফলকে পরবর্তীতে অপর একটি স্ট্যাটিক কনট্রাস্ট টিউন করা ফিল্টারের স্কোয়ার আউটপুট দ্বারা ভাগ করা হয়। এই ভাগফল কনট্রাস্টের গতির উপর প্রভাব বিবেচনায় নেয়ার জন্য করা হয়। মোশন এনার্জি ফিল্টার বিভিন্ন গতিসংক্রান্ত ঘটনা মডেল করতে পারে, তবে এটি একটি ফেজ-স্বাধীন পরিমাপ তৈরি করে যা গতির সঙ্গে বৃদ্ধি পায়, কিন্তু গতির নির্ভরযোগ্য মান দেয় না।
স্থান-কালিক গ্র্যাডিয়েন্ট
গতি সেন্সরের এই মডেলটি মূলত কম্পিউটার ভিশনের ক্ষেত্রে বিকাশ লাভ করেছে এবং এটি এমন একটি নীতির উপর ভিত্তি করে তৈরি, যেখানে চিত্র উজ্জ্বলতার সময়গত ডেরিভেটিভ ও স্থানিক ডেরিভেটিভের অনুপাত দ্বারা গতির বেগ নির্ধারণ করা হয়। লক্ষণীয় যে, চিত্রের শীর্ষ ও নিম্নবিন্দুতে এই মডেল যথাযথ ফলাফল দিতে পারে না, কারণ তখন ডেনোমিনেটরে ডেরিভেটিভ শূন্য হয়ে যায়। এই সমস্যা সমাধানে স্থান ও সময়ের উপর প্রথম এবং উচ্চতর ক্রমের ডেরিভেটিভ বিশ্লেষণ করা যায়।স্থান-কালিক গ্র্যাডিয়েন্ট হলো এমন একটি কার্যকর মডেল যা চিত্রের প্রতিটি বিন্দুতে গতির বেগ নির্ধারণ করতে পারে।
মোশন সেন্সরগুলি অরিয়েন্টেশন-সিলেক্টিভ
[সম্পাদনা]মোশন সেন্সরগুলির একটি বৈশিষ্ট্য হল অরিয়েন্টেশন-সিলেক্টিভিটি, যা গতির বিশ্লেষণকে একটি মাত্রায় সীমাবদ্ধ করে। মোশন সেন্সরগুলি শুধুমাত্র একটি মাত্রায়, সেন্সরের পছন্দসই অরিয়েন্টেশনের অর্দ্ধবাহু অক্ষ বরাবর, গতি শনাক্ত করতে সক্ষম। একটি উদ্দীপক যার মধ্যে একটি নির্দিষ্ট অরিয়েন্টেশনের বৈশিষ্ট্য রয়েছে, কেবল সেই অরিয়েন্টেশনের অর্দ্ধবাহু দিকেই গতিশীল বলে দেখা যায়। এক-মাত্রিক গতি সংকেত ২-মাত্রিক বস্তুর গতি সম্পর্কে দ্ব্যর্থপূর্ণ তথ্য প্রদান করে। একটি দ্বিতীয় স্তরের গতি বিশ্লেষণ প্রয়োজন হয়, যাতে একটি ২-মাত্রিক বস্তু বা প্যাটার্নের প্রকৃত গতির দিক নির্ধারণ করা যায়। বিভিন্ন অরিয়েন্টেশনের প্রতি সংবেদনশীল সেন্সরগুলির ১-মাত্রিক গতি সংকেত একত্রিত করে একটি সুস্পষ্ট ২-মাত্রিক গতি সংকেত তৈরি করা হয়। ২-মাত্রিক গতির বিশ্লেষণ নির্ভর করে স্থানীয়ভাবে বিস্তৃতভাবে অরিয়েন্টেড সেন্সরগুলির সংকেতের উপর, পাশাপাশি সংকীর্ণভাবে অরিয়েন্টেড সেন্সরগুলির সংকেতের উপরও।
ফিচার ট্র্যাকিং
[সম্পাদনা]আমরা গতি উপলব্ধি করার আরেকটি উপায় হলো ফিচার ট্র্যাকিং। ফিচার ট্র্যাকিং বলতে বোঝানো হয় কোনো বস্তুর স্থানীয় বৈশিষ্ট্যগুলোর অবস্থান পরিবর্তিত হয়েছে কি না তা বিশ্লেষণ করা, এবং এই পরিবর্তন থেকে গতি অনুধাবন করা। এই অংশে ফিচার ট্র্যাকার সম্পর্কিত কিছু বৈশিষ্ট্য উপস্থাপন করা হয়েছে।
যখন কোনো চলমান উদ্দীপক অত্যন্ত দ্রুত ঘটে, তখন ফিচার ট্র্যাকার ব্যর্থ হয়। তবে ফিচার ট্র্যাকারদের একটি সুবিধা হলো, তারা এমন বস্তুর গতি অনুধাবন করতে পারে যেগুলোর গতি মাঝে মাঝে *ইন্টারমিটেন্ট ব্ল্যাঙ্ক ইন্টারভ্যাল*-এর দ্বারা বিঘ্নিত হয়। তারা এই দুইটি ধাপ (গতি এবং বিরতি) আলাদা করতে সক্ষম। অন্যদিকে, মোশন সেন্সর এই বিরতিগুলিকে চলমান উদ্দীপনার সাথে একত্র করে এবং একটানা গতি হিসেবেই দেখে। ফিচার ট্র্যাকার সনাক্ত বৈশিষ্ট্যের অবস্থান অনুযায়ী কাজ করে। এজন্য তাদের একটি *ন্যূনতম দূরত্ব থ্রেশহোল্ড* থাকে, যা বৈশিষ্ট্যগুলোর অবস্থান সনাক্ত করার যথার্থতার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।
ফিচার ট্র্যাকার *মোশন আফটারইফেক্ট* দেখায় না, যা একটি ভিজ্যুয়াল বিভ্রম যা ঘটে *ভিজ্যুয়াল অ্যাডাপ্টেশন*-এর ফলে। মোশন আফটারইফেক্ট ঘটে যখন কোনো চলমান উদ্দীপক পর্যবেক্ষণের পর একটি স্থির বস্তুকে পূর্বের গতি-দিকের বিপরীত দিকে চলতে দেখা যায়। এই প্রক্রিয়ার পক্ষে একই সময়ে চাক্ষুষ ক্ষেত্রের বিভিন্ন অংশে একাধিক গতি পর্যবেক্ষণ করা অসম্ভব। অন্যদিকে, মোশন সেন্সরের জন্য একাধিক গতির উপস্থিতি কোনো সমস্যা নয়, কারণ তারা পুরো চাক্ষুষ ক্ষেত্র জুড়ে সমান্তরালভাবে কাজ করে।
উপরের তথ্য ব্যবহার করে ফিচার ট্র্যাকার নিয়ে কিছু আকর্ষণীয় সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে বিভিন্ন পরীক্ষা চালানো হয়েছে। *সংক্ষিপ্ত সময়ের উদ্দীপক* ব্যবহার করে পরিচালিত পরীক্ষায় দেখা গেছে যে, উচ্চ কনট্রাস্টে রঙিন প্যাটার্ন ও কনট্রাস্ট প্যাটার্ন ফিচার ট্র্যাকার দ্বারা নয়, বরং মোশন সেন্সর দ্বারা উপলব্ধি করা হয়। *ব্ল্যাঙ্ক ইন্টারভ্যাল* ব্যবহার করে পরিচালিত পরীক্ষাগুলো নিশ্চিত করেছে যে, প্রদর্শনে বিরতি থাকলেও ফিচার ট্র্যাকিং সম্ভব। কেবলমাত্র উচ্চ কনট্রাস্টে মোশন সেন্সর রঙিন উদ্দীপক এবং কনট্রাস্ট প্যাটার্নের গতি অনুধাবন করে।
নিম্ন কনট্রাস্টে ফিচার ট্র্যাকার উভয় রঙিন প্যাটার্ন এবং কনট্রাস্ট এনভেলপের গতি বিশ্লেষণ করে, আর উচ্চ কনট্রাস্টে মোশন সেন্সর কনট্রাস্ট এনভেলপ বিশ্লেষণ করে। এমন পরীক্ষাগুলো, যেখানে অংশগ্রহণকারীদের একাধিক গতি সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়, প্রমাণ করে যে ফিচার ট্র্যাকিং একটি *সচেতন নিয়ন্ত্রণাধীন প্রক্রিয়া*, এবং এটি একমাত্র উপায় যার মাধ্যমে আমরা নিম্ন-কনট্রাস্ট প্রদর্শনে কনট্রাস্ট এনভেলপের গতি বিশ্লেষণ করতে পারি।
এই ফলাফলগুলো এই দৃষ্টিভঙ্গির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ যে, কনট্রাস্ট এনভেলপ এবং রঙিন প্যাটার্নের গতি মূলত ফিচার ট্র্যাকিং-এর উপর নির্ভরশীল, যতক্ষণ না রঙ স্পষ্টভাবে থ্রেশহোল্ডের উপরে বা গড় কনট্রাস্ট অত্যন্ত বেশি হয়। এই পরীক্ষাগুলোর প্রধান উপসংহার হলো, সম্ভবত *ফিচার ট্র্যাকিং*-ই কনট্রাস্ট এনভেলপ এবং রঙিন প্যাটার্ন উপলব্ধির জন্য দায়ী।
গতি বিভ্রম
[সম্পাদনা]মোশন ডিটেকশন যেভাবে কাজ করে, সেই প্রক্রিয়ার ফলস্বরূপ কিছু স্থির চিত্র আমাদের কাছে চলমান বলে মনে হতে পারে। এই চিত্রগুলো আমাদের দৃষ্টিগত প্রক্রিয়া কী ধরনের অনুমান করে তা নিয়ে ধারণা দেয় এবং এগুলোকেই ভিজ্যুয়াল ইলিউশন বা চাক্ষুষ বিভ্রম বলা হয়।
প্রথম স্তরের গতি সংকেতের সাথে সম্পর্কিত একটি বিখ্যাত গতি বিভ্রম হলো ফাই ফেনোমেনন, যা একটি অপটিক্যাল ইলিউশন, যা আমাদের একটানা দৃশ্যের পরিবর্তে গতি উপলব্ধি করায়। এই গতি বিভ্রমের কারণেই আমরা সিনেমাকে পৃথক চিত্রের বদলে একটানা চলমান দৃশ্য হিসেবে দেখতে পাই। ফাই ফেনোমেনন এমন একটি প্রক্রিয়া, যেখানে নির্দিষ্ট হারে পরিবর্তিত স্থির চিত্রগুলোকে একটানা গতিশীল হিসেবে দেখা যায়।
ফাই ফেনোমেননকে বিটা মুভমেন্ট-এর সাথে গুলিয়ে ফেলা উচিত নয়, কারণ ফাই ফেনোমেনন ঘটে ধারাবাহিক আলোক-স্পন্দনের কারণে এবং এটি একটি আপারেন্ট মোশন তৈরি করে, যেখানে বিটা মুভমেন্ট একটি স্থির আলোক-স্পন্দনের মাধ্যমে আপারেন্ট মোশন সৃষ্টি করে।
গতি বিভ্রম ঘটে যখন গতি উপলব্ধি, গতি বিশ্লেষণ এবং এই সংকেতগুলোর ব্যাখ্যা বিভ্রান্তিকর হয়ে ওঠে, এবং আমাদের ভিজ্যুয়াল সিস্টেম মিথ্যা গতি অনুভব করায়। এই বিভ্রমগুলোকে শ্রেণিবদ্ধ করা যায়—যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিভ্রমটি ঘটে, তার ভিত্তিতে। বিভ্রমগুলোকে সাধারণত তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়: মোশন সেন্সিং-সংক্রান্ত বিভ্রম, ২-ডি ইন্টিগ্রেশন-সংক্রান্ত বিভ্রম, এবং ৩-ডি ইন্টারপ্রেটেশন-সংক্রান্ত বিভ্রম।
মোশন সেন্সিং সম্পর্কিত সবচেয়ে পরিচিত বিভ্রম হলো ফোর-স্ট্রোক মোশন, আরডিকেস এবং সেকেন্ড অর্ডার মোশন সিগনাল-সম্পর্কিত বিভ্রম। ২-ডি ইন্টিগ্রেশন সম্পর্কিত জনপ্রিয় বিভ্রম হলো মোশন ক্যাপচার, প্লেইড মোশন এবং ডিরেক্ট রেপালশন।
একইভাবে, ৩-ডি ইন্টারপ্রেটেশনের সাথে সম্পর্কিত বিভ্রমগুলো হলো: ট্রান্সফরমেশনাল মোশন, কাইনেটিক ডেপ্থ, শ্যাডো মোশন, বায়োলজিকাল মোশন, স্টেরিওকাইনেটিক মোশন, ইমপ্লিসিট ফিগার মোশন এবং টু-স্ট্রোক মোশন।
এছাড়াও আরও অনেক ধরনের গতি বিভ্রম রয়েছে, এবং এগুলো প্রত্যেকটি মানব গতি সনাক্তকরণ, উপলব্ধি ও বিশ্লেষণ প্রক্রিয়া সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করে। আরও তথ্যের জন্য এই লিংকটি ভিজিট করুন: http://www.lifesci.sussex.ac.uk/home/George_Mather/Motion/
অমীমাংসিত সমস্যা
[সম্পাদনা]যদিও গতি উপলব্ধি সম্পর্কিত অনেক বিশদ বিষয় এখনও আমাদের বোধগম্য নয়, গতি কীভাবে অনুভূত হয় এবং কীভাবে গতি বিভ্রম ঘটে, তা বোঝা পাঠকদের এই বিষয়ে বর্তমান জ্ঞানের একটি সামগ্রিক চিত্র প্রদান করতে পারে। গতি উপলব্ধি সংক্রান্ত কয়েকটি অমীমাংসিত সমস্যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো তিন-মাত্রিক (3D) গ্লোবাল মোশন গঠনের প্রক্রিয়া এবং অ্যাপারচার সমস্যা।
রেটিনা থেকে আগত গ্লোবাল মোশন সংকেতসমূহ একত্রিত হয়ে দুই-মাত্রিক (2D) গ্লোবাল মোশন সংকেতে পরিণত হয়; তবে, তিন-মাত্রিক গ্লোবাল মোশন কীভাবে গঠিত হয়, তা এখনও পরিষ্কার নয়। অ্যাপারচার সমস্যা দেখা দেয়, কারণ ভিজ্যুয়াল সিস্টেমের প্রতিটি রিসেপ্টিভ ফিল্ড চাক্ষুষ জগতের কেবলমাত্র একটি ছোট অংশ কভার করে, যা দৃষ্টিগোচরতার মধ্যে অস্পষ্টতা তৈরি করে। অ্যাপারচার সমস্যাটি বোঝায় এমন একটি গতিশীল কনট্যুর, যা স্থানীয়ভাবে পর্যবেক্ষণ করলে, বিভিন্ন গতিপথের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে মনে হয়।
এই অস্পষ্টতা জ্যামিতিক উৎস থেকে উদ্ভূত—কনট্যুর বরাবর গতিকে শনাক্ত করা যায় না, কারণ এই দিকের গতি দৃশ্যমান ইমেজে কোনো পরিবর্তন আনে না। একমাত্র সংবেদী উপাদান হলো সেই গতি যা কনট্যুরের লম্ব বরাবর ঘটে। এই কারণে, সেই গতি বহু সম্ভাব্য ভেক্টরের মধ্যে যেকোনো একটি হতে পারে, যা ভেলোসিটি স্পেসে একটি সরল রেখা বরাবর বিস্তৃত থাকে।
এই অ্যাপারচার সমস্যা কেবল সোজা কনট্যুরেই নয়, বরং মসৃণভাবে বাঁকানো কনট্যুর ক্ষেত্রেও দেখা যায়, যেগুলো স্থানীয়ভাবে পর্যবেক্ষণের সময় প্রায় সোজা বলে মনে হয়।
যদিও এই সমস্যাটি কীভাবে সমাধান করা হয়, তার সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া এখনো অজানা, তবে এর সম্ভাব্য সমাধান নিয়ে কিছু অনুমান রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, এই সমস্যা হয়তো স্থানজুড়ে বিভিন্ন উৎস থেকে তথ্য একত্র করে, অথবা একই বস্তুর বিভিন্ন কনট্যুরের তথ্য মিলিয়ে সমাধান করা যেতে পারে।
উপসংহার
[সম্পাদনা]এই অধ্যায়ে আমরা গতি উপলব্ধি এবং আমাদের দৃষ্টিগত প্রক্রিয়া কীভাবে গতি শনাক্ত করে, তা পরিচয় করিয়ে দিয়েছি। গতি বিভ্রম দেখিয়েছে, কীভাবে গতি-সংক্রান্ত সংকেত বিভ্রান্তিকর হতে পারে এবং তার ফলে গতির বিষয়ে ভুল সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া সম্ভব। মনে রাখতে হবে যে গতি উপলব্ধি এবং গতি বিশ্লেষণ একই জিনিস নয়। মোশন সেন্সর ও ফিচার ট্র্যাকার একে অপরকে পরিপূরক করে তোলে, যার ফলে আমাদের দৃষ্টিকোণ গতি অনুভব করতে পারে।
গতি উপলব্ধি একটি জটিল প্রক্রিয়া এবং এটি এখনো গবেষণার একটি খোলা ক্ষেত্র। এই অধ্যায়ে আমরা মোশন সেন্সরের কাজ করার পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে কিছু মডেল এবং ফিচার ট্র্যাকারগুলোর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কিত কিছু অনুমান বর্ণনা করেছি; তবে, এই প্রক্রিয়াগুলোর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আরও জানতে এবং ভিজ্যুয়াল সিস্টেমের প্রকৃত প্রক্রিয়াগুলোর সাথে মিল রেখে মডেল তৈরি করতে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন রয়েছে।
এই অধ্যায়ে বর্ণিত গতি বিশ্লেষণ ও উপলব্ধির বিভিন্ন প্রক্রিয়া এবং সেগুলিকে ব্যাখ্যা করার জন্য তৈরি কৃত্রিম মডেলগুলোর জটিলতা প্রমাণ করে যে কর্টেক্স কীভাবে বাইরের পরিবেশ থেকে আগত সংকেত প্রক্রিয়াকরণ করে, তা অত্যন্ত জটিল। হাজার হাজার বিশেষায়িত নিউরন স্থানীয় সংকেতের টুকরোগুলোকে একত্রিত করে এবং তাদের ব্যাখ্যা করে, যার ফলে আমাদের মস্তিষ্কে গতিশীল বস্তুর একটি গ্লোবাল চিত্র গঠিত হয়। আমাদের দেহে এতগুলো উপাদান ও প্রক্রিয়া একসাথে কাজ করে গতি উপলব্ধি সম্ভব করে, এটি বোঝা আমাদের এই সহজাত দক্ষতাকে আরও বিস্ময়কর করে তোলে।
রঙের অনুধাবন
[সম্পাদনা]ভূমিকা
[সম্পাদনা]মানুষ (এবং শিম্পাঞ্জি, গরিলা প্রভৃতি প্রাইমেটদের সঙ্গে) স্তন্যপায়ীদের মধ্যে সর্বোত্তম রঙ অনুধাবনের ক্ষমতা রাখে [১]। তাই, এটি কোনো কাকতালীয় ব্যাপার নয় যে রঙ বিভিন্ন বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উদাহরণস্বরূপ, রঙ বস্তু, পৃষ্ঠ, প্রাকৃতিক দৃশ্য এবং এমনকি মুখের ভেদাভেদ ও পার্থক্য নির্ধারণে সহায়ক [২], [৩]। এছাড়াও, রঙ হলো আবেগসহ অ-মৌখিক যোগাযোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম [৪]।
রঙের ভৌত বৈশিষ্ট্য এবং তার ধারণাত্মক গুণাবলির মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করা বহু দশক ধরে একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে। সাধারণত, এই বিষয়গুলো দুটি ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে অধ্যয়ন করা হয়: রঙ দ্বারা উদ্ভূত আচরণগত প্রতিক্রিয়া (যাকে সাইকোফিজিক্স বলা হয়) এবং এর দ্বারা সৃষ্ট প্রকৃত শারীরবৃত্তীয় প্রতিক্রিয়া [৫]।
এখানে আমরা শুধুমাত্র পরবর্তী দৃষ্টিভঙ্গির ওপর গুরুত্ব দেব। রঙ দৃষ্টির শারীরবৃত্তীয় ভিত্তির অধ্যয়ন, যা বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধের আগে পর্যন্ত প্রায় কিছুই জানা ছিল না, ১৯৫০ সাল থেকে ধীরে ধীরে অগ্রসর হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে, বিশেষ করে গ্রাহীকের স্তরে, তাৎপর্যপূর্ণ অগ্রগতি হয়েছে। অণুজীববিদ্যার কৌশলের মাধ্যমে শঙ্কু রঞ্জকের জেনেটিক ভিত্তি সংক্রান্ত পূর্বে অজানা বহু তথ্য প্রকাশ করা সম্ভব হয়েছে। উপরন্তু, ক্রমাগত আরও অনেক কর্টিকাল অঞ্চল দৃশ্য উদ্দীপনার দ্বারা প্রভাবিত হতে দেখা গেছে, যদিও রিসেপ্টরের বাইরেও তরঙ্গদৈর্ঘ্য-নির্ভর শারীরবৃত্তীয় কার্যকলাপের সঙ্গে রঙ অনুধাবনের সম্পর্ক বোঝা সহজ নয় [৬]।
এই অধ্যায়ে, আমরা চক্ষুর রেটিনা থেকে শুরু করে মস্তিষ্কের ভিজ্যুয়াল কর্টেক্স পর্যন্ত দৃষ্টিপথে রঙ অনুধাবনের বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মৌলিক বিষয় ব্যাখ্যা করব। শারীরবৃত্তীয় বিশদ বিবরণের জন্য অনুগ্রহ করে এই উইকিবুকের "চক্ষু গাঠনিক কাঠামো" অধ্যায়টি দেখুন।
রেটিনায় রঙ অনুধাবন
[সম্পাদনা]মানুষ যে সব রঙ পৃথকভাবে বুঝতে পারে, তা মাত্র তিনটি প্রাথমিক (মূল) রঙের সংমিশ্রণে তৈরি করা যায়। এই রঙ মিশ্রণের ধারণা থেকেই প্রস্তাব করা হয়েছে যে রঙ অনুভবের জন্য তিন শ্রেণির সেন্সর আছে, যেগুলোর প্রতিটির সর্বাধিক সংবেদনশীলতা দৃশ্যমান বর্ণালির ভিন্ন ভিন্ন অংশে[১]. ১৮৫৩ সালে প্রথমবার এই ধারণাটি স্পষ্টভাবে প্রস্তাব করা হয় যে সাধারণ রঙ মেলানোর ক্ষেত্রে তিনটি স্বাধীন মাত্রা রয়েছে [৭]। এটি ১৮৮৬ সালে নিশ্চিত হয় [৮] (এবং সাম্প্রতিক গবেষণার ফলাফলের সঙ্গে এই সিদ্ধান্তগুলি অত্যন্ত সাযুজ্যপূর্ণ [৯], [১০])।
এই প্রস্তাবিত রঙ সেন্সরগুলি আসলে শঙ্কু।(দ্রষ্টব্য: এই অধ্যায়ে আমরা শুধুমাত্র শঙ্কু নিয়ে আলোচনা করব। দণ্ডাকার কোষ শুধুমাত্র ক্ষীণ আলোতে দৃশ্য উপলব্ধিতে অবদান রাখে। যদিও তারা কিছুটা রঙ উপলব্ধিতে প্রভাব ফেলে, তাদের প্রভাব এতটাই সামান্য যে এখানে তা উপেক্ষা করা হবে) [১১]। শঙ্কু কোষ হলো রেটিনায় পাওয়া দুই ধরনের আলোক-সংবেদনশীল কোষের একটি, যেগুলোর ঘনত্ব ফোভিয়াতে সবচেয়ে বেশি। নিচের সারণিতে শঙ্কুর তিনটি প্রকারের একটি সারসংক্ষেপ দেওয়া হলো। এগুলোকে বিভিন্ন ধরনের রডোপসিন রঞ্জক দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। সংশ্লিষ্ট শোষণ বক্ররেখাগুলো নিচের চিত্রে প্রদর্শিত হয়েছে।

যদিও শঙ্কু নামকরণে একমত হওয়া যায়নি, তবে সবচেয়ে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত নামগুলো তাদের শোষণ বর্ণালির সর্বোচ্চ শিখর বা তারা যে রঙের জন্য সংবেদনশীল তার উপর ভিত্তি করে। [১২]. এই পাঠে আমরা S-M-L নামকরণ ব্যবহার করব (খাটো, মিডিয়াম, লম্বা তরঙ্গদৈর্ঘ্যের জন্য), কারণ এই নামগুলো বেশি বর্ণনামূলক। নীল-সবুজ-লাল নামকরণ কিছুটা বিভ্রান্তিকর, কারণ সব শঙ্কুই অনেক বিস্তৃত তরঙ্গদৈর্ঘ্যে সংবেদনশীল।
তিনটি শঙ্কুর একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো রেটিনায় তাদের আপেক্ষিক বন্টন। দেখা যায় যে, S-শঙ্কুর ঘনত্ব তুলনামূলকভাবে কম এবং ফোভিয়ার সবচেয়ে কেন্দ্রীয় অঞ্চলে তারা সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। আসলে, তারা এতটা বিস্তৃতভাবে ছড়ানো যে স্থানিক দৃষ্টিতে তাদের ভূমিকা খুব সামান্য, যদিও তারা সীমিতভাবে সীমানা উপলব্ধি করতে সক্ষম [১৩]। ফোভিয়ার নিয়ন্ত্রণে প্রধানত L ও M-শঙ্কু থাকে। এই দুটি শঙ্কুর অনুপাত সাধারণত অনুপাত হিসেবে পরিমাপ করা হয়। L/M অনুপাতের বিভিন্ন মান রিপোর্ট করা হয়েছে: ০.৬৭ [১৪] থেকে ২ পর্যন্ত [১৫], যেখানে ২ হলো সবচেয়ে স্বীকৃত মান। কেন L-শঙ্কু প্রায়শই M-শঙ্কুর তুলনায় বেশি তা এখনো স্পষ্ট নয়। আশ্চর্যজনকভাবে, এই আপেক্ষিক অনুপাত রঙ দৃষ্টিতে তেমন প্রভাব ফেলে না। এটি স্পষ্টভাবে দেখায় যে মস্তিষ্ক নমনীয়, যে কোনো শঙ্কু সংকেত থেকেই অর্থ বের করতে সক্ষম [১৬], [১৭]।
এছাড়াও লক্ষণীয় হলো, L ও M-শঙ্কুর শোষণ বর্ণালির উল্লেখযোগ্য ওভারল্যাপ। S-শঙ্কুর শোষণ বর্ণালি পৃথকভাবে স্বতন্ত্র হলেও, L ও M-শঙ্কুর শিখর মাত্র ৩০ nm ব্যবধানে, এবং তাদের বক্ররেখাগুলোও অত্যন্ত ওভারল্যাপ করে। ফলে এই দুটি শ্রেণির শঙ্কু প্রায় একইরকম ফোটন ধরতে সক্ষম। ব্যাখ্যাটি হলো, ফোভিয়ার কেন্দ্রে সর্বোচ্চ তীক্ষ্ণতা অর্জনের জন্য ভিজ্যুয়াল সিস্টেম L ও M-শঙ্কুকে সমভাবে বিবেচনা করে, তাদের শোষণ বর্ণালি আলাদা না করে। তাই, যেকোনো পার্থক্য লুমিন্যান্স সংকেতে বিঘ্ন ঘটায় [১২]। অন্যভাবে বললে, L ও M-শঙ্কুর শোষণ বর্ণালির ঘনিষ্ঠতা হলো উচ্চ বৈসাদৃশ্যযুক্ত রঙ দৃষ্টি এবং উচ্চ তীক্ষ্ণতার লুমিন্যান্স দৃষ্টির মধ্যে একটি আপোষ। এটি S-শঙ্কুর অভাবের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, বিশেষত ফোভিয়ার কেন্দ্রীয় অংশে, যেখানে দৃষ্টিশক্তির তীক্ষ্ণতা সর্বোচ্চ। এছাড়াও, L ও M-শঙ্কুর ঘন ঘনিষ্ঠতা তাদের জিনগত উৎস থেকেও ব্যাখ্যা করা যায়। ধারণা করা হয়, এই দুটি শঙ্কু প্রায় "সম্প্রতি" (প্রায় ৩.৫ কোটি বছর আগে) একটি সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে উদ্ভূত হয়েছে, যেখানে S-শঙ্কু আরও পূর্বে বিভক্ত হয় [১১]।
মানব রঙ দৃষ্টির মূল ভিত্তি হলো এই তিন ধরনের শঙ্কু কোষের বর্ণালি শোষণ ফাংশন। এই তত্ত্ব একটি পুরাতন সমস্যা সমাধান করে: যদিও মানুষ লাখ লাখ ভিন্ন রঙ দেখতে পারে (মানুষ প্রায় ৭ থেকে ১০ মিলিয়ন রঙের ভেদ করতে পারে [৫]), রেটিনায় প্রতিটি রঙের জন্য আলাদা ডিটেক্টর রাখার মতো জায়গা নেই।
রেটিনা থেকে মস্তিষ্কে
[সম্পাদনা]রেটিনা থেকে উচ্চতর স্তরে প্রেরিত সংকেতগুলো কেবল রিসেপ্টরের সংকেতগুলোর বিন্দু-ভিত্তিক উপস্থাপন নয়, বরং সেগুলো রিসেপ্টরের সংকেতের জটিল সংমিশ্রণ। এই অনুচ্ছেদের উদ্দেশ্য হলো, কিছু তথ্য যেসব পথে প্রবাহিত হয় তার একটি সংক্ষিপ্ত বর্ণনা প্রদান করা।
রেটিনার উপর অপটিক্যাল চিত্রটি ফটোসেপ্টরগুলিতে রাসায়নিক ও বৈদ্যুতিক সংকেতে রূপান্তরিত হওয়ার পর, অ্যামপ্লিটিউড-পরিমাপক সংকেতগুলো গ্যাংলিয়ন কোষ এবং উচ্চতর স্তরে ফ্রিকোয়েন্সি-পরিমাপক উপস্থাপনে রূপান্তরিত হয়। এই নিউরোন কোষগুলিতে সংকেতের মাত্রা কোষের ঝিল্লির ওপর ভোল্টেজ পার্থক্যের মাধ্যমে নয় বরং প্রতি সেকেন্ডে নির্গত ভোল্টেজ স্পাইকের সংখ্যার মাধ্যমে প্রকাশ পায়। এই কোষগুলির শারীরবৃত্তীয় বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা ও উপস্থাপনের জন্য আমরা "রিসেপ্টিভ ফিল্ড" ধারণাটি খুবই উপযোগী বলে পাব।
একটি রিসেপ্টিভ ফিল্ড হলো দৃশ্যক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট কোষ যেসব অঞ্চলের প্রতি সাড়া দেয়, তার গ্রাফিকাল উপস্থাপন। সাধারণত রিসেপ্টিভ ফিল্ডের বিভিন্ন অঞ্চলে সাড়ার প্রকৃতিও নির্দেশ করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, একটি ফটোসেপ্টরের রিসেপ্টিভ ফিল্ডকে আমরা দৃশ্যক্ষেত্রে সেই নির্দিষ্ট রিসেপ্টরের সংবেদনশীলতা প্রকাশকারী একটি ছোট বৃত্তাকার অঞ্চল হিসেবে কল্পনা করতে পারি। নিচের চিত্রটি গ্যাংলিয়ন কোষের আদর্শ রিসেপ্টিভ ফিল্ড প্রদর্শন করে, যা সাধারণত কেন্দ্র-পরিবেষ্টিত বিরোধীতার মাধ্যমে প্রকাশ পায়। চিত্রের বামদিকে থাকা রিসেপ্টিভ ফিল্ড একটি ধনাত্মক কেন্দ্রীয় প্রতিক্রিয়া নির্দেশ করে। এই ধরনের প্রতিক্রিয়া সাধারণত একটি একক কন কোষ থেকে ধনাত্মক ইনপুট এবং পার্শ্ববর্তী একাধিক কন কোষ থেকে ঋণাত্মক প্রতিক্রিয়া দ্বারা সৃষ্ট হয়। ফলে, এই গ্যাংলিয়ন কোষের প্রতিক্রিয়া বিভিন্ন কন কোষ থেকে প্রাপ্ত ধনাত্মক ও ঋণাত্মক ইনপুটের সমন্বয়ে গঠিত হয়। এইভাবে, কোষটি কেবল আলো বিন্দুতে সাড়া দেয় না, বরং প্রান্ত (বা আরও নির্ভুলভাবে বললে, বিন্দু) শনাক্তকারী হিসেবে কাজ করে। কম্পিউটার ভিশনের পরিভাষায়, আমরা গ্যাংলিয়ন কোষের প্রতিক্রিয়াগুলোকে একটি প্রান্ত-সনাক্তকারী কার্নেল দিয়ে কনভলিউশনের আউটপুট হিসেবে ভাবতে পারি। চিত্রের ডানদিকে থাকা রিসেপ্টিভ ফিল্ড একটি ঋণাত্মক কেন্দ্রীয় প্রতিক্রিয়া নির্দেশ করে, যা সমানভাবে সম্ভাব্য। সাধারণত, অন সেন্টার এবং অফ সেন্টার কোষ একই স্থানে উপস্থিত হয়, এবং একই ফটোসেপ্টর দ্বারা পরিচালিত হয়, ফলে একটি উন্নত ডাইনামিক রেঞ্জ তৈরি হয়।
নিচের চিত্রে দেখা যায় যে, স্থানিক বিরোধীতার পাশাপাশি গ্যাংলিয়ন কোষগুলির বর্ণগত বিরোধিতাও থাকতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, নিচের চিত্রের বাম অংশে একটি লাল-সবুজ বিরোধী প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়েছে, যেখানে কেন্দ্র একটি L-কন থেকে ধনাত্মক ইনপুট পায় এবং পরিবেষ্টনকারী অঞ্চল M-কন থেকে ঋণাত্মক ইনপুট পায়। অপরদিকে, ডান অংশে এই কোষের অফ সেন্টার সংস্করণ দেখানো হয়েছে। ফলে, রেটিনা থেকে ভিজ্যুয়াল তথ্য মস্তিষ্কে পৌঁছানোর আগেই প্রসেসিং সম্পন্ন হয়, যার রঙের চেহারার ওপর গভীর প্রভাব রয়েছে। আরও বিভিন্ন ধরনের গ্যাংলিয়ন কোষ প্রতিক্রিয়া রয়েছে, কিন্তু তারা সকলেই এই মৌলিক ধারণাগুলো শেয়ার করে।
গ্যাংলিয়ন কোষের অ্যাক্সনগুলো একত্র হয়ে অপটিক নার্ভ গঠন করে, যা থ্যালামাসের লেটারাল জেনিকুলেট নিউক্লিয়াসে (LGN) প্রক্ষেপণ করে। অপটিক নার্ভে সংকেত কোডিং অত্যন্ত দক্ষভাবে সম্পন্ন হয়, যাতে নার্ভ ফাইবারের সংখ্যা সর্বনিম্ন রাখা যায় (যা অপটিক নার্ভের আকার দ্বারা সীমিত), এবং এর ফলে রেটিনার ব্লাইন্ড স্পটের আকারও খুব ছোট রাখা সম্ভব হয় (প্রায় ৫° প্রশস্ত এবং ৭° উচ্চ)। উপরন্তু, উপস্থাপিত গ্যাংলিয়ন কোষগুলো অভিন্ন আলোকপ্রক্ষেপণে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায় না, কারণ ধনাত্মক ও ঋণাত্মক ক্ষেত্রগুলো পরস্পরকে বাতিল করে দেয়। অর্থাৎ, প্রেরিত সংকেতগুলো পরস্পর অপ্রাসঙ্গিক । উদাহরণস্বরূপ, প্রকৃত দৃশ্যের পার্শ্ববর্তী অংশের তথ্য স্থানিকভাবে অত্যন্ত সম্পর্কযুক্ত এবং তাই সহজে পূর্বাভাসযোগ্য [১৮]। পার্শ্ববর্তী গ্যাংলিয়ন কোষগুলির মধ্যকার পার্শ্বীয় প্রতিবন্ধকতা এই স্থানিক সম্পর্ক হ্রাস করে, যার ফলে দক্ষতা বৃদ্ধি পায়। আমরা এটিকে রেটিনায় সংঘটিত একটি প্রাথমিক চিত্র সংকোচন প্রক্রিয়া হিসেবে ভাবতে পারি।
L- ও M-কোনের শোষণ বর্ণালী একে অপরের সঙ্গে অনেকাংশে ওভারল্যাপ করে, ফলে তাদের সংকেতগুলোও অত্যন্ত সহসম্পর্কযুক্ত। এই ক্ষেত্রে, সংকেতের কোডিং দক্ষতা বাড়ানো যায় সংকেতগুলোর মধ্যে সহসম্পর্ক কমানোর জন্য তাদের একত্রিত করার মাধ্যমে। এই ধারণা সহজভাবে বোঝা যায় প্রিন্সিপাল কম্পোনেন্ট অ্যানালাইসিস (PCA) ব্যবহার করে। PCA হলো একটি পরিসংখ্যানিক পদ্ধতি, যা একাধিক ভেরিয়েবলকে রূপান্তর করে একটি নতুন সেট ভেরিয়েবলে (প্রিন্সিপাল কম্পোনেন্ট বা PC) পরিণত করে এবং এর মাধ্যমে ডাইমেনশনালিটি হ্রাস করা হয়। প্রথম PC মূল ভেরিয়েবলগুলোর মধ্যে সর্বাধিক বৈচিত্র্য ধারণ করে, দ্বিতীয়টি ধারণ করে প্রথমটি বাদ দিয়ে বাকি সর্বাধিক বৈচিত্র্য, এবং এভাবে চলতে থাকে। পাশাপাশি, PC গুলো পরস্পরের প্রতি রৈখিকভাবে স্বাধীন এবং প্যারামিটার স্পেসে একে অপরের প্রতি অর্দ্ধচক্রাকার। PCA-এর মূল সুবিধা হলো — মাত্র কয়েকটি শক্তিশালী PC ব্যবহারে সম্পূর্ণ ব্যবস্থার অধিকাংশ বৈচিত্র্য ব্যাখ্যা করা যায়[১৯]।
এই পদ্ধতি কোন শোষণ ফাংশনের সাথেও ব্যবহার করা হয়েছে[২০], এমনকি প্রাকৃতিকভাবে ঘটে যাওয়া বর্ণালীর সাথেও[২১],[২২]। প্রাকৃতিক বস্তু দ্বারা সৃষ্ট কোন উত্তেজনার স্পেসে আবিষ্কৃত PC গুলো হলো— ১) একটি লুমিন্যান্স অক্ষ, যেখানে L- ও M-কোন সংকেত যোগ হয় (L+M), ২) L- ও M-কোনের পার্থক্য (L-M), ৩) একটি রঙীন অক্ষ, যেখানে S-কোন সংকেত থেকে (L+M) সংকেতের যোগফল বিয়োগ করা হয় (S−(L+M))।
এই গাণিতিক/কম্পিউটেশনাল পদ্ধতি থেকে প্রাপ্ত চ্যানেলগুলো ইলেকট্রোফিজিওলজিকাল পরীক্ষায় আবিষ্কৃত তিনটি রেটিনো-জেনিকুলেট চ্যানেলের সঙ্গে মিলে যায়[২৩],[২৪]। এই প্রক্রিয়াগুলোর মাধ্যমে চিত্রতথ্যের পুনরাবৃত্তি রেটিনাতেই নির্মূল হয়ে যায়।
এই তথ্য রেটিনা থেকে গ্যাংলিয়ন সেলের মাধ্যমে LGN-এ (ল্যাটেরিয়াল গ্যানিকুলেট নিউক্লিয়ার) প্রেরণ করা হয় তিনটি ভিন্ন চ্যানেলের মাধ্যমে। এই চ্যানেলগুলো কেবল রঙগত বৈশিষ্ট্যেই নয়, বরং তাদের শারীরবৃত্তীয় কাঠামোতেও আলাদা। এই চ্যানেলগুলো মৌলিক রঙ সম্পর্কিত কাজ, যেমন সনাক্তকরণ ও প্রভেদে গুরুত্বপূর্ণ সীমাবদ্ধতা আরোপ করে।
প্রথম চ্যানেল-এ, L- ও M-কোনের আউটপুট সমবায়ভাবে ডিফিউজ বাইপোলার সেলের মাধ্যমে ম্যাগনোসেলুলার স্তরে (M-) পাঠানো হয় (রেটিনার M-কোনের সঙ্গে এটি মিল নয়)[২৪]। M-সেলের রিসেপ্টিভ ফিল্ডে কেন্দ্র ও পার্শ্ব রয়েছে, যেগুলো স্থানিকভাবে বিপরীতমুখী। এই কোষগুলো উজ্জ্বলতার উদ্দীপনার প্রতি উচ্চ সংবেদনশীল, তবে কিছু নির্দিষ্ট L-M বিরোধী ইনপুটে কোনো সাড়া দেয় না[২৫]। তবে বিভিন্ন M-সেলের শূন্য পয়েন্ট কিছুটা আলাদা হওয়ায়, জনসংখ্যার প্রতিক্রিয়া কখনোই পুরোপুরি শূন্য হয় না, এবং এই বৈশিষ্ট্য কর্টিকাল এলাকায়ও বজায় থাকে[২৬]।
পারভোসেলুলার পথ (P-) শুরু হয় L- বা M-কোন থেকে পৃথকভাবে মিজেট বাইপোলার কোষে। এই কোষগুলো রেটিনাল P-কোষে ইনপুট দেয়[১১]। ফোভিয়াতে, একটি P-কোষের রিসেপ্টিভ ফিল্ড কেন্দ্র গঠিত হয় একটি একক L বা M-কোন দিয়ে। পার্শ্বীয় গঠনের ব্যাপারে বিতর্ক থাকলেও সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য মত হলো, পার্শ্ব একটি নির্দিষ্ট কোন টাইপের হয়, ফলে রিসেপ্টিভ ফিল্ড হয় স্থানিকভাবে বিপরীতমুখী[২৭]। পারভোসেলুলার স্তর রেটিনা থেকে LGN-এ মোট প্রক্ষেপণের প্রায় ৮০% জোগান দেয়[২৮]।
সবশেষে, কনিওসেলুলার পথ (K-), যা তুলনামূলকভাবে নতুনভাবে আবিষ্কৃত, মূলত S-কোন থেকে সংকেত বহন করে[২৯]। এই কোনগুলো বিশেষ ধরনের বাইপোলার সেলে প্রক্ষেপণ করে, যেগুলো আবার ছোট গ্যাংলিয়ন সেলে ইনপুট দেয়। এই গ্যাংলিয়ন কোষগুলো সাধারণত স্থানিকভাবে বিপরীতমুখী নয়। এই ছোট গ্যাংলিয়ন সেলের অ্যাক্সন LGN-এর পাতলা স্তরে প্রক্ষেপণ করে, যা পারভোসেলুলার স্তরের পাশে অবস্থিত[৩০]।
যদিও গ্যাংলিয়ন কোষগুলো LGN-এ শেষ হয় এবং LGN কোষের সঙ্গে সিন্যাপ্স গঠন করে, তবুও দেখা যায়, LGN কোষ ও গ্যাংলিয়ন কোষের মধ্যে এক-একটি সুনির্দিষ্ট সম্পর্ক বিদ্যমান। LGN মূলত সংকেতের জন্য একটি রিলে স্টেশন হিসেবে কাজ করে। তবে এটি সম্ভবত কিছু চাক্ষুষ ফাংশনেও অবদান রাখে, কারণ কর্টেক্স থেকে LGN-এ কিছু নিউরাল প্রক্ষেপণ রয়েছে যা সুইচিং বা অভিযোজন প্রতিপ্রতিক্রিয়া হিসেবে কাজ করতে পারে। LGN কোষের অ্যাক্সন অক্সিপিটাল লোবে ভিজ্যুয়াল কর্টেক্সের প্রথম অঞ্চল (V1)-এ প্রক্ষেপণ করে।
মস্তিষ্কে রঙ অনুধাবন
[সম্পাদনা]কর্টেক্সে ম্যাগনো-, পার্ভো-, এবং কোনিওসেলুলার পথের প্রক্ষেপণসমূহ প্রাইমারি ভিজ্যুয়াল কর্টেক্সের বিভিন্ন স্তরে শেষ হয়। ম্যাগনোসেলুলার ফাইবার প্রধানত স্তর ৪Cα এবং স্তর ৬-এ অন্তর্ভুক্ত হয়। পার্ভোসেলুলার নিউরনগুলি প্রধানত ৪Cβ, এবং স্তর ৪A ও ৬-এ প্রক্ষেপণ করে। কোনিওসেলুলার নিউরনগুলি স্তর ১, ২, ও ৩-এর সাইটোক্রোম অক্সিডেজ সমৃদ্ধ ব্লবসমূহে শেষ হয়[৩১]।
দৃষ্টিকোণ কর্টেক্সে প্রবেশের পর, ভিজ্যুয়াল তথ্যের এনকোডিং উল্লেখযোগ্যভাবে আরও জটিল হয়ে ওঠে। যেমন বিভিন্ন ফোটোরিসেপ্টরের আউটপুট একত্রিত ও তুলনা করে গ্যাংলিয়ন কোষের প্রতিক্রিয়া উৎপন্ন হয়, তেমনি বিভিন্ন LGN কোষের আউটপুট তুলনা ও সংমিশ্রণ করে কর্টিকাল প্রতিক্রিয়া উৎপন্ন হয়। যখন সংকেত কর্টিকাল প্রক্রিয়াকরণ শৃঙ্খলে আরও ওপরে অগ্রসর হয়, তখন এই প্রক্রিয়াটি পুনরাবৃত্তি হয় ক্রমবর্ধমান জটিলতার সাথে, এমনকি এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যেখানে রিসেপ্টিভ ফিল্ডগুলোর অর্থ হারাতে শুরু করে। তবে, কিছু কার্যাবলী ও প্রক্রিয়া নির্দিষ্ট ভিজ্যুয়াল কর্টেক্স অঞ্চলে চিহ্নিত ও অধ্যয়ন করা হয়েছে।
V1 অঞ্চলে (স্ট্রাইয়েট কর্টেক্স), ডাবল-অপোনেন্ট নিউরন - যাদের রিসেপ্টিভ ফিল্ড রঙগত ও স্থানগতভাবে অন/অফ অঞ্চলের ক্ষেত্রে বিপরীতধর্মী - দৃষ্টিস্পেস জুড়ে রঙ সংকেতের তুলনা করে[৩২]। V1-এ মোট কোষের প্রায় ৫ থেকে ১০% এর মধ্যে তারা অন্তর্ভুক্ত। এদের অপেক্ষাকৃত বৃহৎ আকার ও ছোট শতাংশ রঙ অনুধাবনের দুর্বল স্থানিক রেজোলিউশনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ[১]। উপরন্তু, তারা চলমান উদ্দীপনার দিকনির্দেশে সংবেদনশীল নয় (অন্য কিছু V1 নিউরনের মতো নয়) এবং অতএব, গতি অনুধাবনে অবদান রাখার সম্ভাবনা কম[৩৩]। তবে, এদের বিশেষায়িত রিসেপ্টিভ ফিল্ড গঠনের কারণে, এই ধরনের কোষসমূহ রঙ কনট্রাস্ট প্রভাবের স্নায়বিক ভিত্তি এবং রঙ এনকোড করার জন্য একটি কার্যকর উপায় হিসেবে কাজ করে[৩৪],[৩৫]। অন্যান্য V1 কোষ বিভিন্ন ধরনের উদ্দীপনার প্রতি প্রতিক্রিয়া জানায়, যেমন দিশানির্দেশিত প্রান্ত, বিভিন্ন স্থানিক ও সময়িক ফ্রিকোয়েন্সি, নির্দিষ্ট স্থানিক অবস্থান, এবং এই বৈশিষ্ট্যগুলোর সংমিশ্রণ ইত্যাদি। উপরন্তু, LGN কোষের ইনপুটকে লিনিয়ার ও নন-লিনিয়ারভাবে সংমিশ্রণকারী কোষ পাওয়া যায়। এই প্রতিক্রিয়াগুলো উন্নত ভিজ্যুয়াল ক্ষমতা, যেমন রঙ অনুধাবনের জন্য প্রয়োজনীয়।

V2 অঞ্চলে একক নিউরনের রঙগত বৈশিষ্ট্য নিয়ে V1-এর তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম তথ্য পাওয়া গেছে। প্রথম নজরে মনে হয় V1 এবং V2-তে রঙ কোডিংয়ে বড় কোন পার্থক্য নেই[৩৬]। একটি ব্যতিক্রম হলো এক নতুন শ্রেণির রঙ-জটিল কোষের আবির্ভাব[৩৭]। অতএব, অনুমান করা হয় যে V2 অঞ্চল হিউ প্রসেসিং-এর উন্নয়নে জড়িত। তবে এটি এখনও বিতর্কিত এবং নিশ্চিত নয়।
V1-এ ফাংশনাল অকুলার ডমিন্যান্স আবিষ্কারের পর বিকশিত মডুলার ধারণা এবং P-, M-, ও K-পথগুলোর শারীরবৃত্তীয় বিচ্ছিন্নতা (ধারা ৩-এ বর্ণিত) বিবেচনা করে, প্রস্তাব করা হয়েছিল যে ভিজ্যুয়াল কর্টেক্সে রঙ বিশ্লেষণের জন্য একটি বিশেষায়িত ব্যবস্থা থাকা উচিত[৩৮]। V4 হলো সেই অঞ্চল যা ঐতিহাসিকভাবে "রঙ অঞ্চল" হিসেবে সবচেয়ে বেশি আগ্রহ আকর্ষণ করেছে। এর কারণ একটি প্রভাবশালী গবেষণা যা দাবি করেছিল যে V4-এর ১০০% কোষ হিউ-নির্বাচক[৩৯]। তবে এই দাবি পরবর্তীকালে অনেক গবেষণায় বিতর্কিত হয়েছে, কিছু গবেষণায় দেখা গেছে মাত্র ১৬% V4 নিউরন হিউ-টিউনিং প্রদর্শন করে[৪০]। বর্তমানে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ধারণা হলো V4 শুধু রঙ নয়, আকৃতি অনুধাবন, ভিজ্যুয়াল মনোযোগ, এবং স্টেরিওপসিসেও অবদান রাখে। উপরন্তু, সাম্প্রতিক গবেষণাগুলো অন্যান্য মস্তিষ্ক অঞ্চলের দিকে দৃষ্টি দিয়েছে রঙ অঞ্চল খুঁজে বের করার জন্য, যেমন TEO[৪১] এবং PITd[৪২]। এই অঞ্চলগুলোর পারস্পরিক সম্পর্ক এখনো বিতর্কিত। এই আলোচনা সমন্বয়ের জন্য কেউ কেউ পোস্টেরিয়র ইনফিরিযর টেমপোরাল (PIT) কর্টেক্স শব্দটি ব্যবহার করেন, যা V4, TEO এবং PITd-কে অন্তর্ভুক্ত করে[১]।
যদি V1, V2 এবং V4 কোষের কর্টিকাল প্রতিক্রিয়া ব্যাখ্যা করাই অত্যন্ত জটিল কাজ হয়, তাহলে প্রায় ৩০টি ভিজ্যুয়াল অঞ্চলের একটি নেটওয়ার্কে জটিল ভিজ্যুয়াল প্রতিক্রিয়ার স্তর বিশাল। চিত্র ৪-এ বিভিন্ন কর্টিকাল এলাকার (কোষ নয়) সংযুক্তির একটি ক্ষুদ্র অংশ দেখানো হয়েছে[৪৩]।
এই পর্যায়ে, একক কর্টিকাল কোষের কার্যাবলিকে সহজভাবে ব্যাখ্যা করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে যায়। প্রকৃতপক্ষে, একক কোষের কার্যকারিতা অর্থহীন হতে পারে যেহেতু বিভিন্ন উপলব্ধির উপস্থাপনাটি কর্টেক্স জুড়ে কোষের সংগ্রহের মধ্যে বণ্টিত হয়।
রঙ উপলব্ধি অভিযোজন প্রক্রিয়া
[সম্পাদনা]যদিও গবেষকেরা মানুষের দৃষ্টিশক্তিতে রঙ সংকেত প্রক্রিয়াকরণের ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন, তবুও এটা বোঝা গুরুত্বপূর্ণ যে রঙ উপলব্ধি একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া নয়। প্রকৃতপক্ষে, বিভিন্ন গতিশীল প্রক্রিয়া রয়েছে যা দেখার পরিবেশ অনুযায়ী দৃষ্টিসংবেদী প্রতিক্রিয়াকে অনুকূল করতে সহায়তা করে। রঙ উপলব্ধির ক্ষেত্রে বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক হল অন্ধকার, আলোকিত এবং বর্ণানুকূল অভিযোজনের প্রক্রিয়া।
অন্ধকার অভিযোজন
[সম্পাদনা]অন্ধকার অভিযোজন বলতে আলো কমে গেলে দৃষ্টিসংবেদনশীলতার পরিবর্তনকে বোঝায়। আলো কমে গেলে চাক্ষুষ প্রক্রিয়া আরো সংবেদনশীল হয়ে ওঠে, যাতে অপ্রতুল আলোতেও অর্থপূর্ণ চাক্ষুষ প্রতিক্রিয়া প্রদান করা যায়[৪৪]।

চিত্র ৫-এ দেখানো হয়েছে অত্যন্ত উজ্জ্বল আলো থেকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রূপান্তরের পরে চাক্ষুষ সংবেদনশীলতার পুনরুদ্ধার[৪৩]। প্রথমে কোণ ধীরে ধীরে সংবেদনশীলতা অর্জন করে, কয়েক মিনিট পরে এই প্রবণতা স্তিমিত হয়। প্রায় ১০ মিনিট পরে সংবেদনশীলতা অপেক্ষাকৃত ধ্রুবক হয়ে যায়। তখন রড সিস্টেম, যার পুনরুদ্ধারের সময় বেশি, পর্যাপ্ত সংবেদনশীলতা ফিরে পেয়ে কোণকে ছাড়িয়ে যায় এবং সামগ্রিক সংবেদনশীলতার নিয়ন্ত্রণ নেয়। রডের সংবেদনশীলতাও ধীরে ধীরে বাড়ে এবং প্রায় ৩০ মিনিট পর তা স্থিতিশীল হয়। অর্থাৎ, প্রথম ১০ মিনিটে সংবেদনশীলতা পুনরুদ্ধার কোণ দ্বারা হয়, এরপর রড কোণকে ছাড়িয়ে যায় এবং ৩০ মিনিটে পূর্ণ সংবেদনশীলতা ফিরে পায়।
এটি অন্ধকারে অভিযোজনের জন্য স্নায়বিক প্রক্রিয়াগুলোর মধ্যে একটি মাত্র। অন্যান্য স্নায়বিক প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে সুপরিচিত পিউপিল রিফ্লেক্স, ফটোপিগমেন্টের ক্ষয় ও পুনর্জন্ম, রেটিনাল কোষে গেইন নিয়ন্ত্রণ এবং উচ্চ-স্তরের প্রক্রিয়া ও জ্ঞানীয় ব্যাখ্যা প্রভৃতি।
আলোক অভিযোজন
[সম্পাদনা]আলোক অভিযোজন মূলত অন্ধকার অভিযোজনের বিপরীত প্রক্রিয়া। প্রকৃতপক্ষে, দুটি প্রক্রিয়ার অন্তর্নিহিত শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়াগুলো একই। তবে, ভিজ্যুয়াল বৈশিষ্ট্য আলাদা হওয়ায় একে আলাদাভাবে বিবেচনা করা গুরুত্বপূর্ণ।

আলোক অভিযোজন ঘটে যখন আলোর মাত্রা বেড়ে যায়। তখন চাক্ষুষ প্রক্রিয়াকে কম সংবেদনশীল হতে হয় যাতে অতিরিক্ত আলোতে উপযোগী অনুভূতি তৈরি হয়। দৃষ্টিসংবেদী প্রক্রিয়ার জন্য একটি সীমিত আউটপুট ডায়নামিক রেঞ্জ রয়েছে। কিন্তু বাস্তব জগতে আলোর মাত্রা কমপক্ষে ১০ অর্ডার অব ম্যাগনিটিউড বিস্তৃত। সৌভাগ্যবশত, আমাদের একসঙ্গে পুরো পরিসর দেখার প্রয়োজন হয় না।
উচ্চ আলোর মাত্রায় অভিযোজন ঘটে ফটোপিগমেন্ট ব্লিচিং-এর মাধ্যমে, যা কোণের প্রতিক্রিয়াকে অতিরিক্ত আলোতে স্যাচুরেট হওয়া থেকে রক্ষা করে। এই অভিযোজন মূলত রেটিনার মধ্যেই ঘটে[৪৫]। প্রকৃতপক্ষে, গেইন পরিবর্তন প্রায়ই কোণ-নির্দিষ্ট এবং সংবেদী সংকেত খুব ছোট এলাকার মধ্যেই প্রক্রিয়াকৃত হয়[৪৬],[৪৭]। এর মানে অভিযোজন সম্ভবত ফোটোরিসেপ্টর পর্যায়েই শুরু হয়। তবে একাধিক স্তরে সংবেদনশীলতা স্কেলিং ঘটে থাকে। কিছু গেইন পরিবর্তন খুব দ্রুত হয়, আবার কিছু পরিবর্তন হতে সেকেন্ড থেকে মিনিট পর্যন্ত সময় লাগে[৪৮]। সাধারণত, আলোক অভিযোজন প্রায় ৫ মিনিটে সম্পন্ন হয় (অন্ধকার অভিযোজনের চেয়ে ছয় গুণ দ্রুত), যা পোস্ট-রিসেপ্টর প্রক্রিয়ার প্রভাব নির্দেশ করে।
চিত্র ৬-এ আলোক অভিযোজনের উদাহরণ দেখানো হয়েছে[৪৩]। যদি আমরা একটি একক প্রতিক্রিয়া ফাংশন ব্যবহার করি সম্পূর্ণ আলো পরিসরকে নির্ণয় করতে, তাহলে আমরা কোনো নির্দিষ্ট দৃশ্যের জন্য খুব সীমিত প্রতিক্রিয়া রেঞ্জ পাবো। এর ফলে দৃশ্যমান কনট্রাস্ট কমে যাবে এবং সংবেদনশীলতা হ্রাস পাবে। এটি বিন্দুযুক্ত রেখা দ্বারা চিত্রিত হয়েছে। অন্যদিকে, পূর্ণরেখাগুলো বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া ফাংশনের পরিবার দেখায়, যা নির্দিষ্ট দৃশ্যের উপযোগী আলোকে সর্বোচ্চভাবে ব্যবহারযোগ্য করে তোলে। আলো অভিযোজনকে ভাবা যায় প্রতিক্রিয়া ফাংশনকে আলো মাত্রার অক্ষ বরাবর স্লাইড করার প্রক্রিয়া হিসেবে, যতক্ষণ না উপযুক্ত পর্যায়ে পৌঁছে।
বর্ণানুকূল অভিযোজন
[সম্পাদনা]বর্ণানুকূল অভিযোজন বলতে তিনটি কোণ স্পেকট্রাল রেসপনসিভিটি কার্ভের উচ্চতা পরিবর্তনকে বোঝায়। এই পরিবর্তন ঘটে কারণ আলো অভিযোজন প্রত্যেক কোণ শ্রেণির মধ্যে স্বতন্ত্রভাবে ঘটে। এই তত্ত্বের একটি নির্দিষ্ট রূপকে বলা হয় ফন ক্রিজ অভিযোজন। এই তত্ত্ব অনুযায়ী, অভিযোজন প্রতিক্রিয়া তিনটি কোণ প্রকারের প্রতিটিতে আলাদাভাবে ঘটে এবং তা তাদের নির্দিষ্ট স্পেকট্রাল সংবেদনশীলতাকে একটি স্কেলিং ধ্রুবকে গুণ করার সমতুল্য[৪৯]। যদি এই স্কেলিং ধ্রুবকগুলো (ফন ক্রিজ সহগ নামেও পরিচিত) প্রতিটি কোণ প্রকার দ্বারা শোষিত আলোর বিপরীতানুপাতিক হয়, তাহলে এই স্কেলিং প্রতিটি কোণ শ্রেণির মধ্যে গড় প্রতিক্রিয়াকে স্থির রাখে। এটি আলোর পরিবর্তন সত্ত্বেও বস্তুর রঙের সংবেদনশীলতা বজায় রাখার একটি সহজ কিন্তু শক্তিশালী প্রক্রিয়া। বিভিন্ন অবস্থায়, ফন ক্রিজ স্কেলিং আলো অভিযোজনের ফলে রঙ সংবেদনশীলতা ও চেহারার পরিবর্তন যথার্থভাবে ব্যাখ্যা করতে পারে[৫০],[৫১]।
বর্ণানুকূল অভিযোজনকে সহজভাবে বোঝার উপায় হলো একটি সাদা বস্তু বিভিন্ন আলোর উৎসে দেখা। উদাহরণস্বরূপ, কাগজের একটি টুকরোকে আমরা ডেলাইট, ফ্লুরোসেন্ট এবং ইনস্যান্ডেসেন্ট আলোয় দেখি। ডেলাইটে অপেক্ষাকৃত বেশি স্বল্প-তরঙ্গদৈর্ঘ্যের শক্তি থাকে, ইনস্যান্ডেসেন্টে থাকে বেশি দীর্ঘ-তরঙ্গদৈর্ঘ্যের শক্তি। কিন্তু এই ভিন্ন ভিন্ন আলোক পরিবেশেও কাগজটি প্রায় একই রকম সাদা দেখায়। এর কারণ, ডেলাইটে অতিরিক্ত স্বল্প তরঙ্গদৈর্ঘ্যের শক্তি মোকাবিলায় S-কোণ কম সংবেদনশীল হয় এবং ইনস্যান্ডেসেন্টে অতিরিক্ত দীর্ঘ তরঙ্গদৈর্ঘ্যের শক্তি মোকাবিলায় L-কোণ কম সংবেদনশীল হয়[৪৩]।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ১.০ ১.১ ১.২ ১.৩ Conway, Bevil R (২০০৯)। "Color vision, cones, and color-coding in the cortex"। The neuroscientist। 15: 274–290।
- ↑ Russell, Richard and Sinha, Pawan} (২০০৭)। "Real-world face recognition: The importance of surface reflectance properties"। Perception। 36 (9)।
- ↑ Gegenfurtner, Karl R and Rieger, Jochem (২০০০)। "Sensory and cognitive contributions of color to the recognition of natural scenes"। Current Biology। 10 (13): 805–808।
- ↑ Changizi, Mark A and Zhang, Qiong and Shimojo, Shinsuke (২০০৬)। "Bare skin, blood and the evolution of primate colour vision"। Biology letters। 2 (2): 217–221।
- ↑ ৫.০ ৫.১ Beretta, Giordano (২০০০)। Understanding Color। Hewlett-Packard।
- ↑ Boynton, Robert M (১৯৮৮)। "Color vision"। Annual review of psychology। 39 (1): 69–100।
- ↑ Grassmann, Hermann (১৮৫৩)। "Zur theorie der farbenmischung"। Annalen der Physik। 165 (5): 69–84।
- ↑ Konig, Arthur and Dieterici, Conrad (১৮৮৬)। "Die Grundempfindungen und ihre intensitats-Vertheilung im Spectrum"। Koniglich Preussischen Akademie der Wissenschaften।
- ↑ Smith, Vivianne C and Pokorny, Joel (১৯৭৫)। "Spectral sensitivity of the foveal cone photopigments between 400 and 500 nm"। Vision research। 15 (2): 161–171।
- ↑ Vos, JJ and Walraven, PL (১৯৭১)। "On the derivation of the foveal receptor primaries"। Vision Research। 11 (8): 799–818।
- ↑ ১১.০ ১১.১ ১১.২ Gegenfurtner, Karl R and Kiper, Daniel C (২০০৩)। "Color vision"। Neuroscience। 26 (1): 181।
- ↑ ১২.০ ১২.১ Osorio, D and Ruderman, DL and Cronin, TW (১৯৯৮)। "Estimation of errors in luminance signals encoded by primate retina resulting from sampling of natural images with red and green cones"। JOSA A। 15 (1): 16–22।
- ↑ Kaiser, Peter K and Boynton, Robert M (১৯৮৫)। "Role of the blue mechanism in wavelength discrimination"। Vision research। 125 (4): 523–529।
- ↑ Paulus, Walter and Kroger-Paulus, Angelika (১৯৮৩)। "A new concept of retinal colour coding"। Vision research। 23 (5): 529–540।
- ↑ Nerger, Janice L and Cicerone, Carol M (১৯৯২)। "The ratio of L cones to M cones in the human parafoveal retina"। Vision research। 32 (5): 879–888।
- ↑ Neitz, Jay and Carroll, Joseph and Yamauchi, Yasuki and Neitz, Maureen and Williams, David R (২০০২)। "Color perception is mediated by a plastic neural mechanism that is adjustable in adults"। Neuron। 35 (4): 783–792।
- ↑ Jacobs, Gerald H and Williams, Gary A and Cahill, Hugh and Nathans, Jeremy (২০০৭)। "Emergence of novel color vision in mice engineered to express a human cone photopigment"। Science। 315 (5819): 1723–1725।
- ↑ Kersten, Daniel (১৯৮৭)। "Predictability and redundancy of natural images"। JOSA A। 4 (112): 2395–2400।
- ↑ Jolliffe, I. T. (২০০২)। Principal Component Analysis। Springer।
- ↑ Buchsbaum, Gershon and Gottschalk, A (১৯৮৩)। "Trichromacy, opponent colours coding and optimum colour information transmission in the retina"। Proceedings of the Royal society of London. Series B. Biological sciences। 220 (1218): 89–113।
- ↑ Zaidi, Qasim (১৯৯৭)। "Decorrelation of L-and M-cone signals"। JOSA A। 14 (12): 3430–3431।
- ↑ Ruderman, Daniel L and Cronin, Thomas W and Chiao, Chuan-Chin (১৯৯৮)। "Statistics of cone responses to natural images: Implications for visual coding"। JOSA A। 15 (8): 2036–2045।
- ↑ Lee, BB and Martin, PR and Valberg, A (১৯৯৮)। "The physiological basis of heterochromatic flicker photometry demonstrated in the ganglion cells of the macaque retina"। The Journal of Physiology। 404 (1): 323–347।
- ↑ ২৪.০ ২৪.১ Derrington, Andrew M and Krauskopf, John and Lennie, Peter (১৯৮৪)। "Chromatic mechanisms in lateral geniculate nucleus of macaque"। The Journal of Physiology। 357 (1): 241–265।
- ↑ Shapley, Robert (১৯৯০)। "Visual sensitivity and parallel retinocortical channels"। Annual review of psychology। 41 (1): 635––658।
- ↑ Dobkins, Karen R and Thiele, Alex and Albright, Thomas D (২০০০)। "Comparison of red--green equiluminance points in humans and macaques: evidence for different L: M cone ratios between species"। JOSA A। 17 (3): 545–556।
- ↑ Martin, Paul R and Lee, Barry B and White, Andrew JR and Solomon, Samuel G and Ruttiger, Lukas (২০০১)। "Chromatic sensitivity of ganglion cells in the peripheral primate retina"। Nature। 410 (6831): 933–936।
- ↑ Perry, VH and Oehler, R and Cowey, A (১৯৮৪)। "Retinal ganglion cells that project to the dorsal lateral geniculate nucleus in the macaque monkey"। Neuroscience। 12 (4): 1101––1123।
- ↑ Casagrande, VA (১৯৯৪)। "A third parallel visual pathway to primate area V1"। Trends in neurosciences। 17 (7): 305–310।
- ↑ Hendry, Stewart HC and Reid, R Clay (২০০০)। "The koniocellular pathway in primate vision"। Annual review of neuroscience। 23 (1): 127–153।
- ↑ Callaway, Edward M (১৯৯৮)। "Local circuits in primary visual cortex of the macaque monkey"। Annual review of neuroscience। 21 (1): 47–74।
- ↑ Conway, Bevil R (২০০১)। "Spatial structure of cone inputs to color cells in alert macaque primary visual cortex (V-1)"। The Journal of Neuroscience। 21 (8): 2768–2783।
- ↑ Horwitz, Gregory D and Albright, Thomas D (২০০৫)। "Paucity of chromatic linear motion detectors in macaque V1"। Journal of Vision। 5 (6)।
- ↑ Danilova, Marina V and Mollon, JD (২০০৬)। "The comparison of spatially separated colours"। Vision research। 46 (6): 823–836।
- ↑ Wachtler, Thomas and Sejnowski, Terrence J and Albright, Thomas D (২০০৩)। "Representation of color stimuli in awake macaque primary visual cortex"। Neuron। 37 (4): 681–691।
- ↑ Solomon, Samuel G and Lennie, Peter (২০০৫)। "Chromatic gain controls in visual cortical neurons"। The Journal of neuroscience। 25 (19): 4779–4792।
- ↑ Hubel, David H (১৯৯৫)। Eye, brain, and vision। Scientific American Library/Scientific American Books।
- ↑ Livingstone, Margaret S and Hubel, David H (১৯৮৭)। "Psychophysical evidence for separate channels for the perception of form, color, movement, and depth"। The Journal of Neuroscience। 7 (11): 3416–3468।
- ↑ Zeki, Semir M (১৯৭৩)। "Colour coding in rhesus monkey prestriate cortex"। Brain research। 53 (2): 422–427।
- ↑ Conway, Bevil R and Tsao, Doris Y (২০০৬)। "Color architecture in alert macaque cortex revealed by fMRI"। Cerebral Cortex। 16 (11): 1604–1613।
- ↑ Tootell, Roger BH and Nelissen, Koen and Vanduffel, Wim and Orban, Guy A (২০০৪)। "Search for color 'center(s)'in macaque visual cortex"। Cerebral Cortex। 14 (4): 353–363।
- ↑ Conway, Bevil R and Moeller, Sebastian and Tsao, Doris Y (২০০৭)। "Specialized color modules in macaque extrastriate cortex"। 560--573। 56 (3): 560–573।
- ↑ ৪৩.০ ৪৩.১ ৪৩.২ ৪৩.৩ Fairchild, Mark D (২০১৩)। Color appearance models। John Wiley & Sons।
- ↑ Webster, Michael A (১৯৯৬)। "Human colour perception and its adaptation"। Network: Computation in Neural Systems। 7 (4): 587 – 634।
- ↑ Shapley, Robert and Enroth-Cugell, Christina (১৯৮৪)। "Visual adaptation and retinal gain controls"। Progress in retinal research। 3: 263–346।
- ↑ Chaparro, A and Stromeyer III, CF and Chen, G and Kronauer, RE (১৯৯৫)। "Human cones appear to adapt at low light levels: Measurements on the red-green detection mechanism"। Vision Research। 35 (22): 3103–3118।
- ↑ Macleod, Donald IA and Williams, David R and Makous, Walter (১৯৯২)। "A visual nonlinearity fed by single cones"। Vision research। 32 (2): 347–363।
- ↑ Hayhoe, Mary (১৯৯১)। Adaptation mechanisms in color and brightness। Springer।
- ↑ MacAdam, DAvid L (১৯৭০)। Sources of Color Science। MIT Press।
- ↑ Webster, Michael A and Mollon, JD (১৯৯৫)। "Colour constancy influenced by contrast adaptation"। Nature। 373 (6516): 694–698।
- ↑ Brainard, David H and Wandell, Brian A (১৯৯২)। "Asymmetric color matching: how color appearance depends on the illuminant"। JOSA A। 9 (9): 1443–1448।