আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান/মহাকর্ষ/মহাকর্ষের নিয়ম
নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র
[সম্পাদনা]আমরা কীভাবে কোনো বস্তুর উপর মহাকর্ষ বল হিসাব করি? শুনতে বেশ সহজ কাজ মনে হয়।
তবে এই সূত্র কেবল তখনই প্রযোজ্য যখন আমরা পৃথিবীর উপর থাকা কোনো বস্তুর উপর পৃথিবীর মহাকর্ষ বল নির্ণয় করতে চাই। কিন্তু যদি আমরা মহাশূন্যে কোনো গ্রহাণুর উপর আরেকটি গ্রহাণুর মহাকর্ষ বল নির্ণয় করতে চাই, অথবা সূর্যের দ্বারা একটি মহাকাশযানের উপর মহাকর্ষ বল জানতে চাই? এখানেই “সার্বজনীন মহাকর্ষ” সূত্রের প্রয়োজন হয়।
নিউটনের যে সব আবিষ্কার রয়েছে, তার মধ্যে সার্বজনীন মহাকর্ষ সূত্রের আবিষ্কার নিঃসন্দেহে অন্যতম শ্রেষ্ঠ। ধরো, দুটি ভর আছে—M₁ এবং M₂—তারা একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব r দ্বারা আলাদা। এদের মধ্যে মহাকর্ষ বলের পরিমাণ হয়—
এখানে G হলো মহাকর্ষ ধ্রুবক:
এই বল সর্বদা আকর্ষণকারী, এবং এটি দুই ভরের কেন্দ্রকে সংযুক্ত করা রেখা বরাবর ক্রিয়া করে।
এখানে কিছু বিষয় লক্ষ করা যাক। প্রথমত, যেহেতু মহাকর্ষ একটি বল, এটি একটি ভেক্টর। উপরের সূত্রটি কেবল এর মান বা পরিমাণ দেয়। কিন্তু এর দিক কী? সেটা নির্ভর করে আমরা কোন মহাকর্ষ বলের কথা বলছি তার উপর। যেহেতু এখানে দুটি বস্তু রয়েছে—M₁ এবং M₂—তাই দুটি বলও রয়েছে, একটির উপর অপরটির মহাকর্ষ বল এবং বিপরীতভাবে। উভয় বলের পরিমাণ সমান হলেও তাদের দিক একে অপরের বিপরীত। এটি আসলে নিউটনের তৃতীয় সূত্রেরই একটি দৃষ্টান্ত, যেখানে উভয় বল সমান ও বিপরীত।
আরও একটি বিষয় লক্ষ করো, ভগ্নাংশের নিচে থাকা “r” স্কোয়্যার করা হয়েছে। এর মানে হলো, r যত বাড়বে, মহাকর্ষ বল তত কমবে—কিন্তু সাধারণ হারে নয়, বরং অনেক দ্রুত কমবে। এ কারণেই, যদিও প্রযুক্তিগতভাবে মহাবিশ্বের প্রতিটি বস্তু একে অপরকে মহাকর্ষ দ্বারা আকর্ষণ করে, তবুও অনেক সময় এই বল এতটাই নগণ্য হয় যে আমরা সেটিকে উপেক্ষা করতে পারি।
ভেক্টরের মাধ্যমে প্রকাশ
[সম্পাদনা]ধরি, আমাদের কাছে দুটি ভর রয়েছে—M এবং m—তারা একটি দূরত্ব r দ্বারা আলাদা, এবং তাদের মধ্যে একটি দূরত্ব ভেক্টর R রয়েছে। R এবং r–এর সম্পর্ক হলো—
আমরা এখন বলটিকে একটি বল ভেক্টরে রূপান্তর করবো, যা R ভেক্টরের দিক বরাবর কাজ করে—
এবং এটাই আমাদের চূড়ান্ত ভেক্টরের মাধ্যমে সমীকরণ দেয়—
লক্ষ করো, যেহেতু R এবং r–এর অনুপাতটিকে স্বাভাবিকীকরণ করা হয়েছে, এই পদগুলো যোগ করায় সমীকরণের মান পরিবর্তিত হয় না—পরিবর্তন হয় কেবল বলের দিক।